২০১৫ সালের সেরা ১০ বাংলা ছবি
বিনোদন ডেস্ক : ২০১৫ সাল শেষ। দুয়ারে কড়া নাড়ছে ২০১৬। তাই একটু হিসেব কষা হচ্ছে চলচ্চিত্রপাড়ায়। গোণা হচ্ছে গেলো বছরের সেরা ১০ ছবি। কি দাঁড়াচ্ছে তবে! টালিগঞ্জে মুক্তি পাওয়া কোন দশটি ছবি রয়েছে সেরা তালিকায়? তাহলে আসুন দেখে নিই টালিগঞ্জে মুক্তিপ্রাপ্ত সেরা ১০টি বাংলা ছবি।
১. শুধু তোমারই জন্য : টলিউডের এবারের অন্যতম বাণিজ্যসফল ছবি এটি। বীরসা দাশগুপ্তর এ ছবির ইউএসপি ছিলেন দেব৷ সুপারস্টারের কাঁধেই ছিল বাণিজ্য-তরণী পার করানোর ভার। তিনি তা করেছেন সফলভাবেই। ছবিতে দেব থাকলেও, আসলে এ ছবির কাস্টিং অনসম্বল। ছবিতে ছিলেন আরও এক নায়ক সোহম। ছিলেন দুই নায়িকা শ্রাবন্তী ও মিমি। পুজো রিলিজে বাংলা মেইনস্ট্রিম সিনেমার মরাস্রোতে জোয়ার ফিরিয়ে এনেছিল এ ছবি। নানাধরনের সিনেমা হলেও, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে এ সিনেমার সাফল্য জরুরী ছিল। সন্দেহ নেই এবারও পরিত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দেব৷ প্রেমের গভীরতাকে সম্বল করেই এ ছবি বাজিমাত করেছিল।
২. নির্বাসিত : অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালক হিসেবে অভিষেক হল এ ছবিতে। তসলিমা নাসরিন আর তার আদরের বিড়াল মিনুকে বাংলা ছবির অন্দরমহলে হাত ধরে নিয়ে এসে বাংলা ছবির জরির আঁচলে তিনি এঁকে দিলেন নিজের ঘরানার নকশা। প্রথম পরিচালিত ছবিতেই এসেছিল জাতীয় পুরস্কার৷ তবে এ ছবি কোনওভাবেই বায়োপিক নয়। নারী স্বাধীনতার পাশাপাশি, বাক স্বাধীনতার পক্ষেও জোরদার সওয়াল ছিল এ ছবিতে৷ বাংলা সিনেমার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এ ছবি এ বছরের সেরা সংযোজন।
৩. ছোটদের ছবি : মায়ামাখা পরদায় যারা উচ্চতায় ছোট তাদের অস্বস্তি, তাঁদের প্রেম-দুঃখ না পাওয়ার যন্ত্রণা এঁকেছিলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়৷ একইরকম বিষয় বাংলা সিনেমার দর্শক দেখেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘উত্তরা’ ছবিটিতেও। তবে কৌশিক স্বতন্ত্র তাঁর নিজস্ব সিনেমার ভাষায়, আঙ্গিকে৷ ছবিতে যাঁরা অভিনয় করেছিলেন- দুলাল সরকার ও দেবলীনা রায়-দুজনেই ব্যক্তিগত জীবনে পেয়েছেন এই অভিজ্ঞতা। আর এ ছবিতে তাই যেন জীবনের বাস্তবতা আর ছায়াছবির বাস্তবতা কোথাও মিলে গিয়েছিল এক বিন্দুতে। জাতীয় পুরস্কার তো বটেই। এ ছবিই দেশে প্রথম এনেছে ইউনেসকোর ফেলিনি পুরস্কার।
৪. ওপেন টি বায়োস্কোপ : ফেলে আসা ছোটবেলা, নস্ট্যালজিয়া, পাড়ার পুরনো গন্ধ-পরদায় যেন মনকেমনের কবিতা লিখেছিলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। প্রথম ছবিতেই বাংলা সিনেমাকে তিনি দিয়েছেন এ অসাধারণ উপহার। এ ছবি যেমন বাঙালির মন ও মননের, তেমনই সফল বক্স অফিসেও৷ আর এ ছবিতেই বাংলা ছবি পেয়েছে একঝাঁক তরুণ প্রজন্মের অভিনেতাকে৷ ঋদ্ধি সেন, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়রা যে আগামীদিনে বাংলা ছবিকে অভিনয়ে ভরিয়ে রাখবেন তার ইঙ্গিত দিয়ে গেল এ ছবিই।
৫. নাটকের মতো : নাট্যবক্তিত্ব কেয়া চক্রবর্তীর জীবনের ছায়ায় তৈরি এ ছবি৷ যদিও এ ছবি কোনও বায়োপিক নয়৷ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ছিল খেয়া। দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম ছবিতে উঠে এসেছিল বাংলা তিয়েটার দুনিয়ার এক বহু আলোচিত ইতিহাস। অভিনেত্রী পাওলি দামকে পাওয়া গিয়েছিল একেবারে অন্য রূপে। জীবন-কল্পনা-বাস্তবের মেলবন্ধনে সিনেমা ও নাটকের মতো দুটো ভিন্ন ফর্মকে অসামান্য দক্ষতায় মিলিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক৷ বাংলা সিনেমায় নিঃসন্দেহে এ ছবি এক ল্যান্ডমার্ক।
৬. বেলাশেষে : শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের এ ছবি এবছরের সেরা ছবি। মেইনস্ট্রিম ও আর্টহাউসের দ্বন্দ্ব বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মুছে যাচ্ছিল সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমার দুনিয়ায়৷ এ ছবি যেন স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছিল সে পথ৷ এ ছবিতেও ছিল অনসম্বল কাস্টিং। ‘ঘরে বাইরে’-র পর আবার একসঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে৷ ছবিতে ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী দত্ত, মনামী ঘোষের মতো একঝাঁক তারকা৷ সবার উপরে ছিল সম্পর্কের এক গভীর কথা। দাম্পত্যের অভ্যাস আর প্রেমের দ্বন্দ্ব ও মীমাংসা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনির অক্ষর থেকে অসামান্য মুনশিয়ানায় পরদায় তুলে এনেছিলেন পরিচালক জুটি।
৭. জামাই ৪২০ : মজার ছবি। মেইনস্ট্রিম বাংলা ছবির আরও সাফল্যের কান্ডারি। তিন যুবকের প্রেম আর পরিবারের বড়দের ঠিক করে দেওয়া বিয়ের পাত্রী- এই সমীকরণেই নানা মজা জমেছিল পরদায়৷ রবি কিনাগীর পরিচালনায় এ ছবিতে ছিলেন সোহম, হিরণ, অঙ্কুষ, মিমি, নুসরত ও পায়েল৷ সপরিবারে দেখার মতো মজার উপাদান ছবিতে রেখেছিলেন পরিচালক, আর তাতেই বক্স অফিসে বাজিমাত হয়েছিল।
৮. এবার শবর : অরিন্দম শীলের এ ছবিতেই এ বছরটা শুরু হয়েছিল৷ লালাবাজারের গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্তকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি থেকে পরদায় তুলে এনেছিলেন পরিচালক৷ বাংলা ছবিতে পাওয়া গেল আরও এক গোয়েন্দাকে৷ শবর হয়ে দেখা দিয়েছিলেন শাস্বত চট্টোপাধ্যায়কে৷ নতুন গোয়েন্দার হাত ধরে বছরের শুরুতেই জোরদার সাফল্য এসেছিল বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে।
৯. ব্যোমকেশ বক্সি : গতবছরটা ছিল গোয়েন্দাদের দখলে৷ এবারও তাঁরা ছিলেন স্বমহিমায়। তবে এবার ফেলুদা নেই৷ পরিবর্তে পাওয়া গেল দুই ব্যোমকেশকে। অঞ্জন দত্তের ব্যেমকেশ হয়ে ছবিতে দেখা গিয়েছিল যীশু সেনগুপ্তকে৷ অজিত হিসেবে অপরিবর্তিত ছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। তার অভিনয়ে ব্যেমকেশ নতুন মাত্রা পেল। তবে ছবির ভালোমন্দ নিয়ে নানারকম সমালোচনা ছিল।
অঞ্জনের ব্যোমকেশ বদলে গেলেও ব্যোমকেশ হিসেবে এবারও দেখা মিলল আবীর চট্টোপাধ্যায়ের। অরিন্দম শীলের ‘হর হর ব্যোমকেশ’ ছবিতে ফিরলেন তিনি৷ অজিত হয়ে দেখা গেল ঋত্বিক চক্রবর্তীকে৷ সত্যবতী হলেন সোহিনী সরকার৷ ছবির স্মার্ট মেকিংয়ের প্রশংসা জারি থাকলেও, ব্যোমকেশের চার্ম খুঁজে পাননি বহু দর্শকই।
১০. রাজকাহিনী : এ বছরের সর্বাধিক আলোচিত ছবি। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়৷ দেশভাগের প্রেক্ষিতে পতিতা রমণীদের যন্ত্রণার বয়ানে প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ের কাহিনি তুলে এনেছিলেন পরিচালক৷ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত৷ তাঁর অভিনীত বেগম জান বাংলা সিনেমার ভাঁড়ারে সেরা প্রাপ্তি সন্দেহ নেই৷ তবে পরিচালনার বেশ কিছু ত্রুটি ক্ষুব্ধ করেছিল সমালোচকদের।
২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন
�