কেন এমন করছেন শাবনূর?
কামরুজ্জামান মিলু : একসময় পর্দা কাঁপিয়েছেন, দর্শক মাতিয়েছেন। চিহ্নিত হয়েছেন ঢাকার ছবির বাণিজ্যলক্ষ্মী হিসেবে। কিন্তু আজ তিনি অনেকটাই নীরব। সিনেমা পর্দার নিয়মিত হাজিরায় তো যতিচিহ্ন এঁকেছেনই, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোতেও অবস্থান এখন তার তেমনটাই। তিনি হচ্ছেন একসময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠা নায়িকা শাবনূর।
ঢাকার চলচ্চিত্রের দুঃসময়েও অসংখ্য জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন এ নায়িকা। নির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় শাবনূরের। সময়টা ১৯৯৩। ‘শাব’ অর্থ রাত আর ‘নূর’ অর্থ আলো। মানে রাতের আলো। কিন্তু সবাই বলে, তিনি শুধু রাতেই নন, সারাক্ষণ আলো ছড়িয়ে যান। সে সূত্রে সুপারহিট নায়িকার তকমাটা নিজের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছিলেন অনায়াসে।
অথচ আজ তিনি ঢালিউডে এই আছেন এই নাই। দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হয়েছেন। মাঝেমধ্যে দেশে আসছেন বেড়াতে। কিন্তু নিজের বিষয়ে দাবি- বিদেশে থাকলেও মন-প্রাণ তার দেশেই পড়ে থাকে। আর তা বিশেষভাবে থাকে ঢাকার ছবিকে ঘিরে। কিন্তু বাস্তবটা একেবারেই ভিন্ন। নতুন কাজ তো দূরে থাক চলচ্চিত্রে নিজের আটকে থাকা কাজগুলোও সেভাবে শেষ করায় প্রয়াসী নন তিনি।
এজন্য কারণ হিসেবে জানতে চাইলে হেসে বলেন, আমি তো প্রস্তুত। প্রযোজক বললেই শেষ না হওয়া ছবিতে কাজ শুরু করব। আমি তো চলচ্চিত্র নিয়েই স্বপ্ন দেখি এখনও। তবে এখনকার চলচ্চিত্রে কি হচ্ছে! পাইরেসি নামের শব্দটা এত সস্তা হয়েছে, যা শুনলে ভয় পাই। প্রতিরোধের জন্য কেউ কি কাজ করছে? এসব ঠিক না হলে কাজ করে কি হবে? কিন্তু এত কিছুর পরও শাবনূর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর শুটিং নিয়ে কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
শুধু তাই নয়, গত বছরের মতো এ বছরও ছবিশূন্য বছর কেটেছে শাবনূরের। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির নাম ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এ ছবিতে তার সহশিল্পী ছিলেন মৌসুমী ও ফেরদৌস। ২০১৩ সালে এ ছবির পাশাপাশি আরও একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। অন্য ছবিটি হচ্ছে ‘শিরি ফরহাদ’।
ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে নির্মিত এ ছবিটি পরিচালনা করেন গাজী মাহবুব। একটা সময় ছিল শাবনূরের ছবি ছাড়া বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের দু-চারটা মাসও কল্পনা করা যেত না। সেই হিসাব কষেই বোদ্ধাদের অভিমত; তার মতো অভিনেত্রীর ইন্ডাস্ট্রিতে আরও বেশি সময় দেয়া দরকার। তিনিই তো পথ দেখাবেন। হঠাৎ বিয়ে করে ফেলা এবং মা হওয়ার কারণে রহস্যজনক স্বেচ্ছানির্বাসনে সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
তবে এ বছর তাকে আহমেদ ইলিয়াসের পরিচালনায় একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে পাওয়া গেছে। এ সময় তিনি বলেন, আমি চলচ্চিত্রে আবারও ফিরব। কিন্তু এখন না। আমি এখন আমার সন্তান আইজানকে নিয়ে ব্যস্ত। আর নিজেও মুটিয়ে গেছি। কিছুদিন পর অবশ্যই চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করব। পাশাপাশি পরিচালনা ও প্রযোজনা করারও ইচ্ছে আছে আমার।
তবে অনেকেরই প্রশ্ন, শাবনূর কেন এমন করছেন! কোনো কিছুর ঠিক নেই তার। একজন শিল্পীর তো কমিটমেন্ট ঠিক থাকতে হবে। অনেকে আবার বলছেন, শাবনূর আর আগের মতো নেই। নিজের মতো যা খুশি তাই করছেন। এবারের ফিল্ম ক্লাবের পিকনিকেও দেখা মেলেনি এই তারকার। শাবনূরের বর্তমানে নতুন ছবি শুরু হওয়া তো অনেক পরের কথা, পুরনো ৩টি ছবি শেষ হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ছবি তিনটি হচ্ছে- মোস্তাফিজুর রহমান বাবু পরিচালিত ‘অবুঝ ভালোবাসা’, নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘স্বপ্নের বিদেশ’এবং মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘এমনই তো প্রেম হয়’। এই তিনটি ছবির অল্প কাজ বাকি, যা দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে মূলত শাবনূরের কারণেই। আরেক ছবি ‘পাগল মানুষ’। প্রয়াত পরিচালক এম এম সরকারের আকস্মিক মৃত্যুর কারণে ছবিটি আটকে গেছে।
অন্যদিকে, ‘অবুঝ ভালোবাসা’ ছবির প্রযোজক নাজিমউদ্দিন চেয়ারম্যান হঠাৎ মারা গেলে ছবির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যায়। এই ছবি শেষ হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না অনেকেই। আরেক ছবি ‘এমনই তো প্রেম হয়’-এর একটি গান বাকি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিক মানবজমিনকে বলেন, এটা একটা বিরহের গান। দেখি এরমধ্যে সময় নিয়ে করতে হবে।
আর ‘স্বপ্নের বিদেশ’ অনিশ্চিত হয়ে আছে দুটি কারণে। এক. শাবনূরের সঙ্গে শাকিব খানের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। দুই. ছবির প্রযোজক লন্ডন প্রবাসী যুবকের দেশে না ফেরা। সব মিলিয়ে তিনটি ছবির নিকট ভবিষ্যৎ অনুজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের কাছে। তবে শাবনূর আবারও নিয়মিত হন এবং সফলভাবে আরও কয়েক যুগ টানা কাজ করে যান- এটাই সবার কাম্য। -মানবজমিন
২৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস
�