বলিউড ২০১৫: তর্ক-বিতর্কে তিন খান
বিনোদন ডেস্ক : আরও একটি ঘটনাবহুল বছর পার করে ২০১৬ সালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলিউড। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই চলচ্চিত্রশিল্প নানা বিতর্কের চারণভূমি হয়েছে এ বছরও। দেখে নেয়া ২০১৫ সালে কি কি কারণে আলোচনায় এসেছেন বলিউড তারকারা।
১) লাভ জিহাদ'-এ অভিযুক্ত কারিনা : বছরের শুরুর দিকে উগ্রবাদী ভারতীয় সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে কারিনা কাপুর খানের ছবি ব্যবহার করা হয়, যেখানে তার চেহারার একপাশ ঢেকে দেওয়া হয় নেকাবে, অন্যপাশে তার কপালে দেখা যায় সিঁদুর।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নারী অঙ্গ সংগঠন দূর্গা বাহিনীর মুখপত্র ‘হিমালয় ধ্বনি’র প্রচ্ছদে প্রকাশিত ওই ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘ধর্মান্তরের নামে জাতীয়তা পরিবর্তন’।
কারিনাকে ওই সাময়িকীতে অভিযুক্ত করা হয় ‘লাভ জিহাদ’-এর ‘অপরাধ’-এ। সংগঠনটির ভাষ্যে ‘লাভ জিহাদ’ হলো এমন এক ‘অপরাধ’, যেখানে মুসলমান পুরুষেরা হিন্দু নারীদের সঙ্গে প্রেমের পর বিয়ে করে তাদেরকে বাধ্য করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে।
কারিনা পাঁচ বছর প্রেমের পর ২০১২ সালে বিয়ে করেন অভিনেতা সাইফ আলি খানকে। বিয়ের পর ধর্মান্তরিত না হলেও নিজের নামের শেষে খান উপাধি যুক্ত করেন তিনি।
২) ম্যাগি বিতর্ক : ম্যাগি নুডলসে সীসা পাওয়ার পর চলতি বছর ভারতে নিষিদ্ধ করা হয় জনপ্রিয় এই পণ্যটি। ওদিকে ম্যাগির বিজ্ঞাপনে কাজ করার জন্য মামলা হয় অমিতাভ বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত এবং প্রিতি জিনটার মতো তারকাদের নামে। অবশ্য এই বিতর্কের পুরোটা সময় ম্যাগির পাশেই থেকেছেন তারা। মাধুরী টুইট করে জানান, ম্যাগির প্রতি তার সম্পূর্ণ আস্থা আছে বলেই এই পণ্যটির প্রচারে তিনি রাজি হন। কয়েক মাস পর আবারও বাজারে ফিরে আসে ম্যাগি নুডলস।
৩) যত দোষ আনুশকা শর্মার : ভারতীয় ক্রিকেটার ভিরাট কোহলির যতবার মাঠে নৈপুণ্য প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন ততবারই আনুশকা শর্মাকে দায়ী করে তার সমালোচনায় মেতেছেন ভারতীয়রা। বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৯৫ রানে হেরে যায় ভারত। ভারতের ইনিংসের শুরুতেই তাদের অন্যতম ব্যাটসম্যান ভিরাট কোহলি আউট হয়ে যান তের বলে এক রান করে। সে সময় গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন তার প্রেমিকা অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা। ম্যাচের পর থেকেই ক্ষুব্ধ ভারতীয় সমর্থকেরা ভিরাটের আউট হওয়ার জন্য আনুশকাকে দায়ী করে তার ওপর চড়াও হন। মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে আনুশকাকে আক্রমণের পাশাপাশি ভারতের কয়েকটি শহরে আনুশকার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়।
৪) শাহিদ–মিরার বিয়ে : ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বেশ কয়েক জন নায়িকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন অভিনেতা শাহিদ কাপুর। অবশেষে নিজের জীবনের নায়িকা হিসেবে তিনি বেছে নিলেন বলিউডের বাইরের একজনকে। বয়সে ১৩ বছরের ছোট দিল্লির মেয়ে মিরা রাজপুতের সঙ্গে তার বিয়েটা দুই পরিবারের উদ্যোগে।
এ বছরের ৭ জুলাই পাঞ্জাবী রীতিতে গাঁটছড়া বাঁধেন শাহিদ-মিরা। ‘হায়দার’-এর সাফল্যের উত্তেজনার রেষ কাটতে না কাটতেই ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল শাহিদের বিয়ে। চলতি বছর বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত বিয়ের পর এই দম্পতি এখন বসবাস করছেন মুম্বাইয়ের সমুদ্র ঘেঁষা এক ফ্ল্যাটে।
৫) প্রসঙ্গ ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা : ভারতের মহারাষ্ট্রে গরুর মাংস নিষিদ্ধের জের ধরে এক মুসলমান ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা, কানাড়া ভাষার এক লেখককে হত্যাসহ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেয়াসহ নানা ভাবে প্রতিবাদ জানান ভারতের শিল্পী, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিকসহ প্রগতিশীল মানুষেরা। নভেম্বরের শুরুতে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অভিনেতা শাহরুখ খান বলেন, দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা রয়েছে এবং তা ক্রমশ বাড়ছে। শাহরুখের এই মন্তব্যে ফুঁসে ওঠেন অনেকে। সরকারদলীয় এক নেতা মন্তব্য করে বসেন, শাহরুখের দেহ ভারতে থাকলেও তার আত্মা রয়েছে পাকিস্তানে। শাহরুখকে 'পাকিস্তানি গুপ্তচর' বলেও আখ্যায়িত করা হয়।
শাহরুখকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় থামতে না থামতেই আমির খান বলে বসেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে তিনি শঙ্কা বোধ করেন এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে যখন বাড়িতে কথা হয় তখন তিনি এও বলেছেন, "আমাদের কি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া উচিৎ!"। আমিরের এই মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় ওঠে। এমনকি তার সতীর্থরাও তার তীব্র সমালোচনা করেন। আমিরকে চড় মারলে লাখ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয় হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনা।
তবে শাহরুখ ও আমিরের সঙ্গে একমত হতে পারেননি ইন্দো-কানাডীয় অভিনেত্রী সানি লিওনি। সাবেক এই পর্ন তারকার মতে, ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা থাকলে তিনি দেশটিতে টিকতে পারতেন না।
৬) সালমানের মুক্তি এবং ৫০০ কোটির স্বস্তি : চলতি বছরটাকে এক কথায় বলা যায় সালমান খানের বছর। বক্স-অফিস এবং গণমাধ্যমে চলেছে শুধু তারই রাজত্ব।
চলতি বছরের ৫ জুন ১৩ বছর ধরে চলতে থাকা মুম্বাইয়ে গাড়ি চাপা মামলার চূড়ান্ত রায়ে সালমানকে দোষী সাব্যস্ত করে মুম্বাইয়ের এক নিম্ন আদালত। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে সালমানের সাদা রঙের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উঠে পড়ে বান্দ্রার একটি বেকারির সামনের ফুটপাতে। এই দুর্ঘটনায় ফুটপাতে শুয়ে থাকা এক ব্যাক্তি নিহত হন এবং দুজন আহত হন। সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি সে সময় মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বোম্বে হাইকোর্টে আপিল করেন সালমান। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর সালমানকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন উচ্চ আদালত। আর এতে কেবল সালমানের পরিবার নয়, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন প্রযোজকরাও।
এ বছর শুধু দুটি সিনেমা মুক্তি দিয়ে ৫০০ কোটি রুপি বলিউডকে এনে দিয়েছেন সালমান। হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সময়ও চলছিল তার সিনেমার শুটিং। এমনকি রায়ের দিন সকালে নতুন সিনেমা 'সুলতান'- এর সেট থেকে আদালতে রওনা দেন সালমান।-বিডি নিউজ
২৯ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস