শাকিবের জন্য কঠিন, বাপ্পীর ধ্বস, মাহির অগ্নি পরীক্ষা : জাজ
বিনোদন ডেস্ক : ২০১৬ সালে ঢাকাই সিনেমার হালহকিকত কেমন যাবে? কিংবা এবছর ঢাকাই সিনেমার কোন নায়িকার অবস্থান কেমন হবে? কে উঠে আসবে আর কে পরে যাবে? এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণমুলক ভবিষ্যত পরিকল্পনা করেছেন বাংলাদেশের আলোচিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। আর সেই বিশ্লেষণ এ সংস্থাটি তাদের নিজস্ব পেইজেও পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা গেছে শাকিব খানের জন্য এ বছর যাবে খুব খারাপ। আর মাহির জন্য এ বছরটাকে অগ্নি পরীক্ষার বছর বলে উল্লেখ্য করে সংস্থাটি। সেই সাথে বাপ্পীর ধ্বসটাও বলা হয়েছে এখানে।
এ ছাড়া এ বছর আরও ১৫০টি হল ডিজিটালাইজেশনসহ পাইরেসি বন্ধে সোচ্চার হবে বলেও জানায় জাজ। সেই সঙ্গে ঈদে হলমালিকরা জাজের ছবি মুক্তি না দিলে তাদের ছবি দেওয়া বন্ধ করারও ঘোষণা দিয়েছে।
জাজ-এর পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘একজন ব্যবসায়ী কে অবশ্যই সঠিক ভবিষ্যৎ দূরদৃষ্টি থাকতে হবে, যদি না থাকে তাহলে ভালো ব্যবসায়ী হতে পারবে না। তাই জাজ যেহেতু ব্যবসা করে তাকে অবশ্যই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হয় এবং ভবিষ্যৎ দেখতে হয়। সম্বব্য ভবিষ্যৎ বাণী করছি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে।
১. জাজ ৫ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে। ২০১৫'তে ২০ কোটি টাকা সিনেমা বানাতে লগ্নি করেছে। আর ২০১৬'তে আরও ২০কোটি টাকা লগ্নি করে বাকি সব হল ডিজিটাল করে ফেলবে।
২. আশা রাখছি ২০১৬ রোজার ঈদ এর আগেই আরও ১৫০ হল ডিজিটাল করা সম্ভব হবে। যদি করতে পারি তাহলে আগামী রোজার ঈদ থেকে পাইরেসি বন্ধ হয়ে যাবে। আপনারা জানেন জাজ এর সার্ভার এ সিনেমা চালালে কোন পাইরেসি হয় না।
৩. সিনেমা বানানোর সংখ্যা কমে যাবে।
৪. যারা পেশাদারি বা নিয়মিত বা পুরাতন প্রযোজক তারা এই বছর কোন সিনেমা বানাবে না। সিনেমায় লগ্নি হবে ৩ ধরনের..
ক) গ্লামার জগতের জন্য।
খ) অনেক টাকা আছে, তাই শখে একটি সিনেমা বানাবে।
গ) বিকল্প ধারা বা পুরস্কার এর জন্য সিনেমা।
উপরের ৩ টি কারণ এ সিনেমার জন্য খুব খারাপ। এতে সিনেমা হল বা শিল্প বাঁচবে না।
৫. জাজ ২০১৬ তে ১২ টা সিনেমা তৈরি করবে।
৬. এই বছর মৌসুমী প্রযোজক বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ দুই এক জন প্রযোজক আছে যারা বছরে একটা সিনেমা বানায় শুধু ঈদ এর জন্য অথচ যারা সারা বছর ৪-৫ টা সিনেমা বানায় তারা ঈদ এ ভালো করতে পারে না। এটা ঠিক না। যারা বার মাস সিনেমা বানাবে লাভ লস এর কথা চিন্তা না করে, তাদেরই ঈদ এ সিনেমা রিলিজ এর মূল দাবিদার হওয়া উচিত।
৭. জাজ ঈদ এর আগে ৫ টা সিনেমা রিলিজ করবে, সব বিগ বাজেট কমার্শিয়াল সিনেমা, আর এই সিনেমাগুলো হল মালিকদের চালাতে হলে, জাজ এর সিনেমার ঈদ বুকিং করতে হবে। আর হল চালু রাখতে হলে, হল মালিককে অবশ্যই জাজ এর সাথে ঈদ বুকিং করতে হবে। নতুবা জাজ ওই সব হল কে সিনেমা দিবে না।
৮. জাজ এই রোজার ঈদে ৩ টা সিনেমা, কোরবানি ঈদে ২ টা সিনেমা রিলিজ দিবে। তাই, দুই ঈদ এ অন্য কোন প্রযোজক হল পাবে না বা সিনেমা রিলিজ দিতে পারবে না।
৯. ২০১৫ এর মত ২০১৬ তেও অনন্ত জলিল এর কোন সিনেমা রিলিজ হবে না। এতে আমরা অনন্ত জ্বলিল এর কোন দোষ দিব না। এক জন মানুষ আর কত লস করবে। তবে, তিনি বিভিন্ন ভাবে আলোচনায় থাকবেন।
১০. শাকিব খান- এর জন্য এই বছর খুব কঠিন হয়ে পরবে। গত বছর শাকিব এর ঈদে সিনেমা শুধু ব্যবসা করতে পেরেছে। ঈদ ছাড়া বাকি দুইটা সিনেমা খুবই বাজে গেছে। শাকিব তার সিনেমার শুটিং বিভিন্ন ভাবে দেরি করিয়ে ঈদ এ আনার চেষ্টা করবে যাতে ব্যবসা করে। কিন্তু এটা সফল হবে না। কারণ, জাজ এই জানুয়ারি থেকে ঈদ এর সিনেমার বুকিং করবে এবং হল থেকে ঈদ এর সিনেমার টাকা নেওয়া শুরু করবে। জাজ ছাড়া অন্য কেউ এই বছর ঈদ এ কোন সিনেমা রিলিজ করতে পারবে না। তাই শাকিব'কে তার কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু এ বছরও শাকিব ১ নাম্বার হিরো থাকবে নিশ্চিন্তে।
১১. বাপ্পি’র জন্য বছরটা খুব খারাপ যাবে। এই বছর বাপ্পি'র একাধিক সিনেমা মুক্তি পাবে। এর মধ্যে ১ টা সিনেমা ব্যবসা করতে পারে। বাকি সব ব্যবসা খারাপ করবে এবং কাকরাইল এ বাপ্পি’র চাহিদা আরও কমে যাবে। ৬ মাস আগে বাপ্পি’র সিনেমা ৬০ লক্ষ টাকা টেবিল কালেকশন করতো, এখন করে ২০ লক্ষ টাকা। এই বছরের শেষে তা কমে ১০ লক্ষ টাকা হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত বাপ্পি এর অবস্থান আরেফিন শুভর উপরে আছে , কাকরাইল ও হল মালিকের কাছে । কারণ শুভর ঘরে অগ্নি, (ছুঁয়ে দিলে মন, সারা দেশ ব্যাপী হিট না) এই দুটি ছাড়া কোন হিট সিনেমা নাই, বাপ্পি এর অনেক আছে। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি আরেফিন শুভ বাপ্পি কে ছাড়িয়ে যাবে। তা ছাড়া এই বছরও বাপ্পি’র কোন সিনেমা ঈদে রিলিজ হবে না। আর ঈদে কোন নায়ক বা নায়িকার সিনেমা রিলিজ না হলে তার মার্কেট ভেলু পড়ে যায়। বাপ্পির ক্ষেত্রে তাই হবে। তাই বাপ্পির এখনই উচিত বেছে সিনেমা করা, ভালো সিনেমা ভালো পরিচালক না পেলে বসে থাকা। বছরে একটা হিট সিনেমা দিতেই হবে তাকে
১২. আরেফিন শুভ’র জন্য বছরটা ভালো যাবে । অন্তত দুই নাম্বার আসনে চলে আসবে। তবে এই বছরও শাকিব এর কাছাকাছি যেতে পারবে না। তার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, তিনি মিডিয়া পরিচালক এর উপর খুব বেশি নির্ভর করতে চায়। কিন্তু ইতিহাস বলে, কোন মিডিয়ার পরিচালক এখন পর্যন্ত কোন হিট সিনেমা দিতে পারে নাই। তাই তাকে গল্প ও পরিচালক বাছতে খুব সাবধানী হতে হবে । আর তাকে অবস্থার উন্নতি করতে হলে, অবশ্যই ঈদে কোন ভাল এবং খুব বড় সিনেমা আনতে হবে। কিন্তু সেটা বোধ হয় তার পক্ষে সম্ভব না ।
১৩. পুরাতন অন্য কোন নায়ক উঠে আসতে পারবে না । কোন ভালো সিনেমা হলেও, কাকরাইল, বুকিং সিন্ডিকেট তাদের ধরা শায়ী করে ফেলবে।
১৪. এই বছর নতুন এক জন বাংলাদেশি নায়ক উঠে আসবে এবং খুব ভালো করবে ।
১৫. এই বছর জিৎ এর একটি সিনেমা মুক্তি পাবে।
১৬. অঙ্কুশ এর কোন সিনেমা এই বছর মুক্তি পাবে না।
১৭. ওম এর একাধিক সিনেমা মুক্তি পাবে এবং ভালো একটি অবস্থান করবে।
১৮. মাহি’র জন্য বছরটি একটি অগ্নি পরীক্ষার বছর। একজন নায়ক বা নায়িকা কোন হাউস বা কোন পরিচালক এর অধীনে কাজ করছে সেটা দর্শক বা ডিস্ট্রিবিউশন এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল, তার সিনেমা হিট করে কিনা। তাই তাকে এই বছর খুব হিসাব করে চলতে হবে। গত তিন বছর মাহি'কে কারো সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে হয়নি। একক রাজত্ব করতে পেরেছে। এখন তার পিছনে আছে ফারিয়া। এখন তার পারিশ্রমীক ১০ লক্ষ টাকা। এই বছর যদি কোন বড় হিট ছবি না দিতে পারে তবে বছর শেষে তাকে ৫ লক্ষ টাকায় নেমে আসতে হবে। আর তাকে যেকোনো ভাবেই হোক, ঈদে সিনেমা নিয়ে আসতে হবে, নতুবা আলোচনার বাহিরে চলে যাবে।
১৯. অপু বিশ্বাস - এ বছর ও শাকিবময় থাকবে। শাকিব খান তাকে ছাড়া ২-৩ টা সিনেমা করবে এবং ভাল ব্যবসা করবে। তাই অপু বিশ্বাস এর জন্য বছরটা খারাপ যাবে।
২০. পরিমনি-যে সিনেমা আসে তাই সাইন করে। তাই তার কোন সিনেমাই এ বছর ব্যবসা করবে না। যেহেতু মাহি ছাড়া কোন দ্বিতীয় ভালো নায়িকা পাচ্ছিল না, তাই সবাই পরিমনি কে নিচ্ছে। কিন্তু বছর শেষে পরিমনির চাহিদা কমে আসবে, কারণ দুইটা: (ক) সিনেমার সংখ্যা কমে যাবে (খ) নতুন নায়িকা দাঁড়িয়ে যাবে।
২১. ফারিয়া-খুব কৌশলে এগুচ্ছে এবং সে জানে কিভাবে লাইম লাইট এ থাকতে হবে। এই বছর খুব ভালো অবস্থানে চলে আসবে। কিন্তু অন্য প্রযোজকদের কাছে তিনি খুব এক্সপেনসিভ। কারণ তিনি ১০ লক্ষ’র কমে কোন সিনেমা করবে না । শুধু কম টাকার কারণে অনেক ভালো সিনেমা ফিরিয়ে দিয়েছে।
২২. বছরের সেরা হিট সিনেমা দিবে জলি। তার প্রথম ২টা সিনেমাই খুব বড় হিট হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। খুব বেশি ভাগ্যবতি। মাহি'কে মাহি হতে পোড়ামন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। পোড়ামন কারো কারো জীবনে একবারই আসে হয়তো। কিন্তু জলির জীবনের প্রথম সিনেমাটি পোড়ামন হতে যাচ্ছে। মাত্র দুটি সিনেমা দিয়েই জলি দর্শকের মনে স্থান করে নিবে। অঙ্গার ও নিয়তির গল্প ও গানগুলিই এমন যে সিনেমা দুটি হিট হবেই। এই সিনেমা মূল আকর্ষণ হচ্ছে, গল্প, গান ও নির্মাণশৈলী। এই সব তার ভাগ্য তাকে এনে দিয়েছে। কিন্তু তাকে নিজেকে আরও ডেভেলপ করতে হবে, নতুবা ২ টা সিনেমা করে হারিয়ে যাবে।
২৩. এই বছরও সিনেমার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করবে কাকরাইল এর বুকিং এজেন্ট । জাজ ছাড়া সব প্রযোজকরা বুকিং এজেন্ট এর কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে। গতবছর ব্ল্যাক সিনেমার প্রযোজক জনাব লিপু সাহেবের মত অনেক পুরাতন প্রযোজক ও কাকরাইল এর সিন্ডিকেট এ পড়ে নাকানি চুবানি খেয়েছে। আর নতুনদের তো কথাই নেই। নতুন প্রযোজক এসে শুধু পুঁজি হারিয়ে চলে যাবে।
২৪. মোটকথা ২০১৬ চলচিত্রের জন্য কোন সুখের বছর নয়।
২৫. দরকার জাজ এর মত কর্পোরেট ব্যবসায়ী যারা ৩ বছরের পরিকল্পনা করে সিনেমাতে লগ্নি করবে।
২৬. এই বছর ও চলচ্চিত্রের জন্য সরকার থেকে কোন সুবিধা পাওয়া যাবে না, যদি না প্রযোজক সমিতি সঠিক নেতৃত্বের হাতে পড়ে। বর্তমানে যারা আছে, তারা গত ৫ বছর কোন সিনেমা বানায় না, কিন্তু যারা বানাচ্ছে তাদের কিভাবে ক্ষতি করা যায়, তার জন্য তাদের সারাদিন চিন্তা ভাবনা। কি ভাবে ক্ষমতা ধরে রাখবে তার চিন্তা ভাবনা। দরকার নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর। তাহলে যদি সিনেমার ভাগ্যের কিছু পরিবর্তন হয়।
বিঃ দ্রঃ - এটা জাজ এর নিজস্ব গবেষণার ফলাফল। কাউকে ছোট বা কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়। যদি আমাদের এই লিখাতে কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে আমরা দুঃখিত।’’-জাজ
০১ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন
�