প্রথম ছবি ব্ল'কবা'স্টার। দ্বিতীয় ছবি আরও বেশি সুপারহিট। দু’ দশকের ক্যারিয়ারে ছবি করেছেন ৪০টি। তারপরও এই নায়িকা অভিনয়ের তুলনায় বেশি পরিচিত ব্যক্তিগত জীবনে বিত'র্কের সুবাদে। পঁয়তাল্লিশ বসন্ত পার করা সেই নায়িকা, আমিশা পাটেল। মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি পরিবারের আমিশার জন্ম ১৯৭৫ সালের ৯ জুন। বাবা অমিত এবং মা আশার নাম মিলিয়ে তার নামকরণ করা হয়। আমিশার ভাই অস্মিতও একজন অভিনেতা।
বিখ্যাত রাজনীতিক তথা কংগ্রেস নেতা প্রয়াত রজনী পাটেলের নাতনি আমিশা মুম্বাইয়ের ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন ক্যানন স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। ছাত্রীজীবনে অত্যন্ত মেধাবী আমিশা এরপর আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন বায়োজেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়বেন বলে। দু’ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পরে আমিশা অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। আমিশার কাজের সূত্রপাতও অর্থনীতি নিয়ে। তিনি আমেরিকায় চাকরি শুরু করেন ইকোনমিক অ্যানালিস্ট হিসেবে। বেশিদিন ভাল লাগল না চাকরি। দেশে ফিরে তিনি যোগ দিলেন বিখ্যাত সত্যদেব দুবের নাটকের দলে।
রক্ষণশীল পরিবারের ধা'রা ভে'ঙে আমিশা নাটকে অভিনয় এবং মডেলিং শুরু করেন। বেশ কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপনে তিনি হয়ে ওঠেন পরিচিত মুখ। ১৯৯৯ সালে উর্দু নাটক ‘নীলম’-এ মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করার সময় তিনি রাকেশ রোশনের চোখে পড়ে যান।
আমিশার বাবা ছিলেন রাকেশ রোশনের ছোটবেলার বন্ধু। সেই সূত্রেই আমিশার কাছে ‘কাহো না প্যায়ার হ্যায়’ ছবিতে অভিনয়ের প্র'স্তাব এসে পৌঁ'ছায়। ছেলে হৃতিককে লঞ্চ করার জন্য নায়িকার ভূমিকায় নতুন মুখ খুঁ'জছিলেন রাকেশ।
প্রথমে কারিনা কাপুরের কাছে এই ছবিতে অভি'নয়ের প্র'স্তাব গিয়েছিল। ছ’দিন শুটিং করার পর কারিনা এই ছবি থেকে স'রে দাঁ'ড়ান। কারণ কারিনার মা ববিতার এই ছবির কিছু শর্ত পছন্দ ছিল না। তারপর সুযোগ পান আমিশা।
২০০০ সালে ‘কাহো না প্যায়ার হ্যায়’ হৃতিক আমিশাকে আকাশছোঁ'য়া সাফল্য দেয়। এরপর আমিশা ‘বদ্রী’ নামে একটি দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করেন। সেটিও বক্সঅফিসে খুবই সফল হয়েছিল। পরপর সাফল্যের সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পেতে সমস্যা হচ্ছিল না আমিশার। প্রথম দুই ছবির সাফল্যকে ছাপিয়ে গেল আমিশার তৃতীয় ছবি ‘গাদার এক প্রেম কথা’।
পরে এক সাক্ষাৎকারে আমিশা বলেছিলেন, তিনি গাদার ছবির অফার পেয়েছিলেন ‘কাহো না প্যায়ার হ্যায়’-তে অভিনয়ের আগেই। পাঁচশ' জন তরুণীর সঙ্গে অডিশন দিয়ে মনোনীত হয়েছিলেন আমিশা। ছবিতে তার লু'ক নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল।
বক্স অফিসে সুপারহিট ছবির হ্যাটট্রিকের দৌলতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান আমিশা। কিন্তু ক্যারিয়ারে সাফল্যের মতো ব্যর্থতাও এল বেশ তা'ড়াতা'ড়ি। হৃতিকের বিপরীতে আমিশার দ্বিতীয় ছবি ‘আপ মুঝে আচ্ছে লাগনে লাগে’ ফ্লপ হয়। এরপর আরও কিছু ছবি বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ করেনি।
‘ক্রান্তি’, ‘কিয়া এহি প্যায়ার হ্যায়’, ‘ইয়ে হ্যায় জলওয়া’, ‘পারওয়ানা’-সহ আমিশার বেশ কিছু ছবি মুখ থু'বড়ে পড়ে। বড় নায়কের সঙ্গে স্ক্রিনশেয়ার করেও এই ছবিগুলোতে কিছু করে উঠতে পারেননি আমিশা। একটানা ব্য'র্থতার পর কিছুটা আশার আলো আসে ‘হামরাজ’ ছবির হাত ধ'রে।
এই ছবিতে সাফল্যে ভর করে বলিউডে নিজের ক্যারিয়ার আবার গু'ছিয়ে নিতে চাইছিলেন আমিশা। সেই সময়ে বিত'র্ক শুরু হয় তার ব্যক্তিগত জীবন ঘিরে। বাবা মাকে আই'নি নো'টিশ পা'ঠিয়ে বসেন আমিশা! নায়িকার অভি'যোগ ছিল, তার ১২ কোটি টাকা নিয়ে ফের'ত দেননি তার বাবা-মা।
এই ঘ'ট'নায় পাটেল দম্পতির অভি'যোগ ছিল পরিচালক বিক্রম ভাটের দিকে। ‘আপ মুঝে আচ্ছে লাগনে লাগে’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে তার সঙ্গে পরিচয় আমিশার। ক্রমে তার থেকে প্রেম এবং তারপর লিভ ইন। যদিও আমিশার উপার্জন ও অন্যান্য আর্থিক হিসেব দেখভাল করতেন তার বাবা-ই।
তিনি মেয়ের থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন তার ব্যবসায়। তার অভি'যোগ ছিল, পরিচালক বিক্রম ভাটের ই'ন্ধনেই এই টাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার মেয়ে। অন্যদিকে, আমিশার অভি'যোগ ছিল, তার ইচ্ছার বিরু'দ্ধে এই টাকা নেওয়া হয়েছে। অভি'যোগ-পা'ল্টা অভি'যোগের চাপানউতোরে আমিশার ভাবমূ'র্তি ক্ষ'তিগ্রস্ত হয় ইন্ডাস্ট্রিতে।
পরে বিক্রম ভাটের মাকেও আমিশার বাবা-মা হুম'কি দেন বলে অভি'যোগ। এই মর্মে পুলিশের কাছে অভি'যোগ দা'য়ের করেন বিক্রমের মা। এতসব কিছুর পরে বিক্রমের সঙ্গে আমিশার সম্পর্ক পাঁচ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি। বি'চ্ছেদের মূলে অবশ্য ছিল দু’জনেরই ক্যারিয়ারে ব্যর্থতা।
সে সময় বলিউডে ক'ঠোর পরিশ্রম করা ছাড়া উপায় ছিল না আমিশার। তারপরও সুযোগ না পেয়ে তিনি তেলুগু ছবিতে অভিনয় শুরু করেন। আমির খানের বিপরীতে ‘মঙ্গল পাণ্ডে’ এবং অক্ষয়কুমারের বিপরীতে ‘মেরে জীবনসাথী’ ছবিও আমিশার ক্যারিয়ারের ছিঁ'ড়ে যাওয়া পালে নতুন বাতাস যোগ করতে পারেনি।
এমন অবস্থা দাঁ'ড়ায়, তেলুগু ছবি ছাড়া অন্য কোথাও নায়িকার ভূমিকায় দেখা যেত না আমিশাকে। বলিউডে তার পরিচয় দাঁড়িয়েছিল ‘অতিথি শিল্পী’। ভগ্নপ্রায় ক্যারিয়ারে কিছুটা উজ্জ্বলতা এনেছিল ‘হানিমুন ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘ভুলভুলাইয়া’। দু’টি ছবিতেই আমিশার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল।
কিন্তু সেই উ'জ্জ্বলতা বেশিদিন স্থায়ী হল না। যশরাজ ফিল্মের ‘থোড়া প্যায়ার থোড়া ম্যাজিক’ ছবির ‘লেজি লামহে’ গানে তাকে দেখা যায় বিকিনিতেও। কিন্তু তারপরও ক্যারিয়ারে রয়েই যায় ভাটার টা'ন। এ সময় লন্ডনের ব্যবসায়ী কনভ পুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় আমিশার। শোনা যাচ্ছিল দু’জনে বিয়ে করবেন। কিন্তু ২০১০ সালে শোনা গেল তাদের বি'চ্ছেদ হয়ে গেছে।
পরের বছর বন্ধু কুণাল ভূমরের সঙ্গে আমিশা নিজের প্রোডাকশন হাউস শুরু করেন। প্রথম ছবি ছিল ‘দেশি ম্যাজিক’ । কিন্তু সেই ছবি সম্পূর্ণ তৈরি হওয়ার পরও তা দিনের আলোর মুখ দেখেনি। এই ঘ'ট'নায় প্রযোজক অজয় কুমার সিংহের সঙ্গে তিন কোটি টাকা নিয়ে আই'নি ল'ড়াইও হয় আমিশার।
ইন্ডাস্ট্রিতে গু'ঞ্জন, বিবাহিত কুণালের সঙ্গে আমিশার সম্প'র্ক নি'ছক পেশাদার ব্যবসায়ীর নয়। বরং, তাদের দু’জনের সম্প'র্ক বেশ ঘনি'ষ্ঠ। কিন্তু তাদের প্রযোজনা সংস্থাও চলল না বেশিদিন। ব্য'র্থ আমিশা আর একবার ইন্ডাস্ট্রিতে ফেরার চেষ্টা করলেন। ‘রেস টু’, ‘ভাইয়া জি সুপারহিট’-এর মতো ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। কিন্তু আগের জনপ্রিয়তা আর ফিরে এল না। এ সময় নিজের ঔ'দ্ধ'ত্যের জন্য বারবার সমা'লোচিত হচ্ছিলেন আমিশা। ২০১৩ সালে ‘শর্টকাট রোমিও’ ছবিতে তাকে শেষ বারের মতো দেখা গিয়েছে বলিউডের বড় পর্দায়।
২০১২ সালে শুটিং শেষ হওয়া ‘ভাইয়াজি সুপারহিট’ ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৮ সালে। ফলে আমিশার কোনও পদক্ষেপই সফল হয়নি। এ সময় একটি বিয়েবাড়িতে নাচের জন্য ১১ লাখ টাকা নিয়েও তিনি পারফর্ম করেননি বলে অভি'যোগ। তার ম্যানেজারকে বিভিন্ন প্রযোজকের কাছে ঘুরতে দেখা গেছে। কিন্তু অভিনয়ের প্র'স্তাব আসেনি আমিশার কাছে।
অভিনয় থেকে বহু দূরে এখন আমিশাকে দেখা যায় ইনস্টাগ্রামে। বেশিরভাগ সময়েই তিনি শরীরচর্চার ছবি দেন। সেখানেও বহুবার ট্রোলড হয়েছেন। স'মা'লোচকদের মতে, এরপরও আমিশার ঔ'দ্ধত্য দূর হয়নি। হৃতিক রোশনের ‘মহেঞ্জাদাড়ো’ ছবি ব্যর্থ হওয়ার পর আমিশা মন্তব্য করেছিলেন, ‘সব নবাগতাকে দিয়ে বক্সঅফিসে ছবি সুপারহিট করানো যায় না’। সূত্র: আনন্দবাজার