বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:৩৯:০২

'বাবু খাইছো': কেন এ ধরনের গান বাংলাদেশে তরুণদের আকৃষ্ট করছে

'বাবু খাইছো': কেন এ ধরনের গান বাংলাদেশে তরুণদের আকৃষ্ট করছে

"তরুণদের অনেকেই আজকাল তাদের প্রিয়জন, মানে গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডকে 'বাবু' বলে সম্বোধন করে। এর উৎপত্তি কোথা থেকে, সে সম্পর্কে জানা নেই। আমার তো মনে হয়, ইংরেজিতে রোমান্টিক পার্টনারকে বেবি বলে ডাকার প্রচলন থেকে এটা বাংলায় বাবু হয়েছে।" 

"বাবু খাইছো"- এই শিরোনামের একটি গান নিয়ে নিজের অভিমত ব্য'ক্ত করছিলেন বাংলাদেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিশাত পারভেজ।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউবে চলতি মাসেই রিলিজ করা হয় গানটি, আর খুব অল্প সময়েই এটি ভাইরাল হয়।সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখে ইউটিউবে প্রথমবার আপলোড করা হয় 'বাবু খাইছো' শিরোনামের গানটি।

প্রিমিয়ার করার পরপরই গানটি লুফে নেন বাংলাদেশের নেটিজেনদের অনেকেই।
দিন দশেকের মধ্যে ২০ লাখেরও বেশি বার গানটি দেখা হয়ে গেছে কেবল ইউটিউবেই।এই গানের শিরোনামে ব্যবহার করা হয়েছে সেই শব্দ যুগল, যা বাংলাদেশের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণরা কথায় হরহামেশা ব্যবহার করছেন।

কিন্তু এই শব্দ যুগল তরুণদের মধ্যে এতো সা'ড়া জা'গালো কেন? কিংবা এমন একটি গানই বা কেন তাদের পছন্দ তালিকায় জায়গা করে নিলো?

নিশাত পারভেজের মতে, মোবাইল কমিউনিকেশন, তারপর সামাজিক মাধ্যম, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে যে দূরত্ব তা ক'মিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। প্রতিমুহূর্তেই তারা পরষ্পরের খোঁ'জ নিতে পারছে।"খাবারের বিষয়টাও যেহেতু নৈমিত্তিক একটা বিষয়, স্বাভাবিকভাবেই প্রিয়জন খেয়েছে কি-না, কি করছে, এগুলো তারা জানতে চাইতেই পারে। সে কারণে এই 'বাবু খাইছো' টা'র্মটি তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।"
নিশাত পারভেজ অবশ্য জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় 'বাবু খাইছো' নিয়ে প্রচুর ট্র'লও হয়েছে।

তবে তিনি মনে করছেন, রোমান্টিক পার্টনারকে সম্বোধন, বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে গানের লিরিকস, সাথে ভিডিও-কোরিওগ্রাফি - সব মিলিয়ে এই শিরোনামের গানটি তরুণ সমাজের মধ্যে আলো'ড়ন তু'লতে স'ক্ষ'ম হয়েছে।

ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুমতাজ মুমুর অবশ্য এই গান সম্পর্কে রয়েছে একটু ভিন্ন রকমের অভিমত।"অনেকেই এ ধরনের মিউজিক বেশ উ'পভো'গ করে থাকেন। কিন্তু আসলে গান বলতে আমরা যেমন খুবই গ'ভীর বা মহান ধরনের আর্ট বা শিল্প বুঝি, সেই গভীরতাটা কিন্তু এ ধরনের মিউজিকে নেই।"

তিনি বলেন, এই 'অনেকেই' আবার সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করেন না। একটা বড় অংশ একটু জো'রা'ল মিউজিক ও ডিজে টা'ইপের গান পছন্দ করে, তবে এটাও আবার সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।বিনোদনের মাধ্যম এখন মানুষের হাতের কাছেই রয়েছে - যে কোন ডিজিটাল প্লা'টফরমে মানুষ চাইলেই তার যে কোন পছন্দের গান অ'নায়া'সে শুনতে পারে।

তবে এখন যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স'ক্রি'য়দের একটা বড় অংশই তাদের কথাবা'র্তায় বিশেষ ধ'রনের শব্দ চয়ন করছেন, তাই সঙ্গীতের প্রযোজকরা বরং একটা জনপ্রিয় সংস্কৃতির দিকেই হাত বা'ড়াচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মুমতাজ মুমু বলেন, "ক্ল্যাসিকাল মিউজিকগুলো যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখবো ওই সব গানের কথা সুন্দর, মিউজিকও খুব শ্রুতিমধুর। কিন্তু তরুণদের অনেকেই এই আর্টকে ক'দর করেন না। ডিজে ধরনের বা রংচ'ঙ ধরনের মিউজিক এদের বেশি টা'নে - শরীরে উ'ত্তে'জ'না সৃ'ষ্টিকা'রী, মু'ড লা'ইট করা ধরনের সব মিউজিক।"

বাংলাদেশে এখন তরুণদের মধ্যে গত ৪-৫ বছরে এমন কিছু মিউজিক ভিডিও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে, যেগুলোতে প্রাত্যহিক জীবনে তরুণরা ব্যবহার করে এমন শব্দ বা কথা ব্যবহার করা হয়েছে।

'বন্ধু তুই লোকাল বাস', 'এই যে বেয়াইন সাব', 'মাইয়া ও মাইয়া তুই অ'পরা'ধী রে', 'মা'ফ কইরা দেন ভাই' - এই গানগুলো বিভিন্ন ডিজিটার প্লাটফরমে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। রাস্তাঘাটে, শপিং মলেও এসব গান শোনা যায়।বাংলাদেশের মূলধারার সঙ্গীতের সাথে এই গানগুলোর খুব স'ম্পৃ'ক্ত'তা না থাকলেও তরুণ প্র'জ'ন্মের মধ্যে এগুলো আ'লো'ড়ন তু'লতে স'ক্ষ'ম হয়েছে।এর একটা বড় কারণ 'ব্য'ঙ্গ করা' করা বলে উল্লেখ করেন কামারুন কণিকা।

ঢাকার এই চাকরিজীবী নারী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "হে'ট স্পি'চ খুব দ্রু'ত মানুষের অ্যা'টে'নশ'ন পায়। আমরা চি'ন্তা-ভা'বনা কম করি। এই যে এই গানটা বা অ'পরা'ধী টা'ই'প গান - এগুলো মানুষ ঠিক মতো পু'রা গান শোনেও না, কিন্তু একটা-দু'টা লাইন নিয়ে ম'জা করে।" তার মতে, 'বাবু খাইছো' ধরনের শব্দ অনেকেই তাদের কথার মধ্যে ব্যবহার করেন, কিন্তু এসব গানের মাধ্যমে অন্যকে ব্য'ঙ্গ করে ম'জা পায় কিছু মানুষ।

সুকান্ত হালদার বাংলাদেশের বিনোদন জগতের সঙ্গে সং'শ্লি'ষ্ট। তিনি মনে করেন, এই গানের মূল টা'র্গে'ট অ'ডিয়ে'ন্স হলেন টিন'এজা'র'রা। গানটির কথা ও মিউজিক শুনলেই বোঝা যায়, তাদের কথা ভেবেই গানটির কথা লেখা হয়েছে, মিউজিক ক'ম্পো'জি'শন করা হয়েছে।"আমার ধারণা, তারা বেশ সু-প'রি'ক'ল্পি'তভাবেই কাজটি করেছেন। আর সে কারণেই এখন গানটি নিয়ে এতো আলোচনা হচ্ছে। তারা চেয়েছিলেন গানটি এমন হা'ই'প তৈরি করুক।"

হালদারের মতে, এই ধরনের গান অবশ্য জনপ্রিয়তার দিক থেকে খুব বেশি সময় ধ'রে টি'কে থাকে না। প্র'কা'শের পর দু-তিন মাস বেশ আ'লো'চনা হয়, তারপর হা'রিয়ে যায়।

গানটির সুরকার একজন ডি'স্ক জ'কি বা ডি'জে, মীর মারুফ। তিনি বলেন, তারা মূলত ট্রে'ন্ডিং কিছু ব্যাপার নিয়ে গান করার চে'ষ্টা করছেন। যেমন তারা করোনা ভাইরাস নিয়ে, কোয়ারেন্টিন নিয়ে গান করেছেন, ঠিক তেমনই গানে ব্যবহার করেছেন একটি ব'হু'ল ব্য'বহৃ'ত কথা, যা বাংলাদেশে প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে বলে থাকেন।

"এখনকার সম্পর্কগুলোতে কী হচ্ছে, কী ধরনের কথা হয়, সেটাই বলতে চেয়েছি আমরা।" সূত্র: বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে