হুইলচেয়ারে গ্র্যান্ডমাস্টার অমিতাভ বচ্চন!
প্রবীরকুমার রায়: ২৭ বছর আগের পরিকল্পনা অবশেষে রূপায়িত হয়েছে৷ আর তা পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে মাত্র বাকি কয়েকটা দিন৷ আগামী ৮ জানুয়ারি বিধু বিনোদ চোপড়া এবং অভিজাত যোশির চিত্রনাট্যে সমৃদ্ধ ‘ওয়াজির’ পর্দায় আলো ফেলতে আসছে৷ ২০১৬ -তে মুক্তি পাবে এই ছবি৷ তবে পরিকল্পনা অনেকদিনের৷ অন্তত ২৭ বছর আগের৷ মূল পরিকল্পনাটি বিধু বিনোদ-এর, সেই ১৯৮৮-র৷ এ ছবির স্বপ্নবীজ বপন শুরু তখন থেকেই৷ প্রথমে বিধু বিনোদের ইচ্ছে ছিল ছবিটিকে হলিউডে করবেন৷ মোটামুটি পাকাও হয়ে গিয়েছিল প্রধান চরিত্রে বিশিষ্ট অভিনেতা ডাস্টিন হফম্যান-এর নাম৷ ঠিক ছিল ছবির নাম হবে ‘দ্য ফিফ্থ মুভ’৷ এখন মুক্তির পথে আর মাত্র কয়েক কদম বাকি৷ তার আগে এই ছবি সম্পর্কে যে সব নাটকীয় ঘটনা জানা যাচ্ছে তা এককথায় বিচিত্র৷ ‘ওয়াজির’এ অভিনয় করেছেন অনিতাভ বচ্চন, ফারহান আখতার, অদিতি রাও হায়দারি, নীল নীতিন মুকেশ, জন আব্রাহাম, মানব কল, অঞ্জুম শর্মা প্রমুখ৷ অভিজাত যোশি ও বিধু চিত্রনাট্য লিখলেও ‘ওয়াজির’এর প্রধান প্রযোজক, পরিকল্পক বিধু বিনোদ চোপড়াই৷ সংলাপ লিখেছেন অভিজিৎ দেশপান্ডে ও গজল ধালিওয়াল৷ পরিচালনা করেছেন বিজয় নাম্বিয়ার৷ ক্যামেরা নির্দেশনায় রয়ছেন সানু ভার্গিস৷ শান্তনু মৈত্রর সুরসমৃদ্ধ এ ছবির গল্প ও পরিকল্পনা নাকি বিগ বি তথা অমিতাভ বচ্চন ১৫ বছর আগেই জেনেছিলেন! তখনকার নির্দিষ্ট প্রযোজকের আকস্মিক মৃত্যুতে গেটা পরিকল্পনা পিছিয়ে যায়৷
তারও পরে ১৫ বছর লেগে গেল পরিকল্পনার বাস্তবায়নে৷ এমনকি যখন ডাস্টিন হফম্যানকে নিয়ে নায়ক হিসেবে ছবিটির হলিউডি সংস্করণের পরিকল্পনা হয়েছিল, সেখানেও বিগ বি-কে শিল্পী তালিকায় রেখেছিলেন বিধু বিনোদ৷ অমিতাভ চিত্রনাট্যও পড়ে ফেলেছিলেন৷ তিনি রয়েছেন এক প্রাক্তন গ্র্যান্ডমাস্টারের ভূমিকায়৷ এই গ্র্যান্ডমাস্টার হলেন পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ধর, শরীরী প্রতিবন্ধকতার কারণে যিনি সবসময় হুইলচেয়ারে বন্দী৷ রাশিয়ার কাছাকাছি কোনও এক জায়গা থেকে আসা অধিবাসীর কথা মাথায় রেখে এই চরিত্রের কথা ভাবা হয়েছিল৷ পরে ঠিক হয় চরিত্রটি হবে ভারতীয়৷ অমিতাভ বচ্চনকে তখন থেকেই বেছে নেওয়া হয়৷ যাই হোক হলিউডি সংস্করণ ‘দ্য ফিফ্থ মুভ’ আর হয়ে ওঠেনি৷ সেখানে এল ‘ওয়াজির’৷ নির্মাতারা জানিয়েছেন, ‘ওয়াজির’ অ্যাকশন থ্রিলার হলেও গতানুগতিকতার বাইরে এর অবস্হান৷ পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ধর-এর চরিত্রে অমিতাভ যেভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছেন তা ছবিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে৷ অমিতাভ-র এই চরিত্রায়ন তাঁর ‘পা’, ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে কাজের সমতুল্য৷ এই দাবি স্বয়ং বিধু বিনোদ চোপড়ার৷ তাঁর কথায়, ‘পুরো ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে গেলে আপনাকে ছবিটা অবশ্যই দেখতে হবে৷ ওঁর চরিত্রটাই তো বেশ অন্যরকম৷ বিগ বি-কে তো আমরা কখনই হুইলচেয়ার বন্দী অবস্হায় দেখিনি! এটাইতো ছবিতে অন্য রঙ এনে দিচ্ছে৷ ওই রকম দীর্ঘ মানুষটার জন্য ঠিকঠাক হুইলচেয়ারের ব্যবস্তা করতে কসরত করতে হয়েছিল অনেক৷ এক, দুই, তিন করে ৪৩টা চেয়ার ট্রাই করেছিলাম৷ পা ভাঁজ করে সব দৃশ্যে অভিনয় করতে হয় তাঁকে৷ ব্যাপারটা কেমন কষ্টকর বুঝতে পারছেন তো? তবে উনি সুপার্ব৷ অভিনয়ে একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন৷ জাস্ট ব্রিলিয়ান্ট৷ ২৭ বছর অপেক্ষার পর ছবিটা হয়েছে, আর আমরা পেলাম বচ্চনজীর এক অসাধারণ পারফরম্যান্স৷ এমন অভূতপূর্ব চরিত্রে তাঁর অভিনয় বিচিত্র স্বাদ এনে দিয়েছে৷’ সাধারণ চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ছবির মুক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন৷ তবে এই ছবি দেখতে গেলে বেশিদিন নয়, ২০১৬-র ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷
অমিতাভর সঙ্গে ফারহান আখতার ছবিতে রয়েছেন৷ সন্ত্রাসবাদ দমন শাখার অফিসার দানিশ আলি-র চরিত্রে৷ ফারহান তো ছবিটি সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত৷ তিনি বলেই ফেলেছেন, ‘লক্ষ্য-র প্রদর্শনের সময় বিধু বিনোদ ছিলেন, আমাকে জানিয়েছিলেন যে ছবিটার (লক্ষ্য) সেকেন্ড হাফ তাঁর ভাল লাগেনি৷ তখন থেকেই নিজের ছবি সম্পর্কে ওঁর খোলামেলা সৎ, উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে ওঁর প্রতি আমার আস্হা, শ্রদ্ধা বাড়তে থাকে৷ ওর কিছুদিন পরে উনি জানান যে নতুন চিত্রনাট্য তৈরি, সে বিষয়ে আমার মতামত চাই৷ তখন ২০০৪, দশ বছর পরে ২০১৪তে ওঁর সঙ্গে দেখা৷ চিত্রনাট্য শুনে আমি তো ফিদা হয়ে গেলাম৷ এই ছবির মধ্যে আবেগ আছে, থ্রিলিং ব্যাপার-স্যাপার আছে, কিন্তু সবটাই বেশ উপভোগ্য পর্যায়ে৷ মানুষকে টেনে রাখবে, বাস্তব জীবনের সঙ্গে অনেকেই এর ঘটনা পরম্পরার মিল খুঁজে পেতে পারেন৷ এক অসম বন্ধুত্বের গাঢ় রসায়ন কীভাবে গড়ে উঠেছে তা তারিয়ে উপভোগ করার মত৷ একজন বয়স্ক দাবাড়ু, অন্যজন এ টি এস অফিসার!’ জন আব্রাহাম এখানে এক সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় (এস পি) রয়েছেন৷ নামভুমিকায় আছেন নীল নীতিন মুকেশ, রুহানা আলির চরিত্রে অদিতি রাও হায়দারি৷ ছবিটির শুটিং মূলত মুম্বাইতেই হয়েছে, দৃশ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০১৪-র সেপ্টেম্বরের শেষাশেষি৷ ছবিটির ট্রেলার মুক্তি পায় গত নভেন্বরে৷ এখন অপেক্ষা ০৮ জানুয়ারি পর্যন্ত৷
৩ জানুয়ারি,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসএস/এসবি
�