মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৬:২৬:২৫

বাংলা সিনেমার গল্প বলছে দেবের রেস্তোরাঁ

বাংলা সিনেমার গল্প বলছে দেবের রেস্তোরাঁ

সৌগত চক্রবর্তী: দেওয়ালজোড়া ছবিতে ক্যামেরায় লুক থ্রু করছেন সত্যজিৎ রায়, অন্য দেওয়ালে বাংলা সিনেমার গত ১০০ বছরের শতাধিক পোস্টার। কে নেই সেখানে! সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিক তো আছেনই, আছেন প্রমথেশ বড়ুয়া, যমুনা বড়ুয়া থেকে শুরু করে প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণা, জিৎ—সবাই। ‘রংবাজ’-এর পোস্টারে দেবও আছেন। আছে ‘পথের পাঁচালী’, ‘যদুবংশ’, ‘মনের মানুষ’ ছবির পোস্টারও। তবে যেটা সব থেকে তাকলাগানো, তা হল কাউন্টার। অবিকল পুরনো দিনের মুভিওয়ালা বায়োস্কোপের ধাঁচে গড়া হয়েছে সেটিকে। আর ক্যামেরা! কত সংস্থার, কত রকম মডেলের ক্যামেরা রয়েছে— ১৯৪০-এর রোলেক্স ১৬ এমএম মুভি ক্যামেরা থেকে শুরু করে হালআমলের ক্যামেরা— লাইন দিয়ে সাজানো। মনে হতেই পারে, বাংলা ছবির কোনও সংগ্রহশালার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু না, এসবই দেখা যাবে টালিগঞ্জের নায়ক দেবের রেস্তোরাঁ ‘টলি টেলস’-এ। কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে ৩৪ নম্বর ডাক্তার শরৎ ব্যানার্জি রোডে বছর শুরুর প্রথম দিনেই খুলে গেছে এই রেস্তোঁরা। এখানে ভারতীয়, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল কুইজিনের স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি আস্বাদন করা যাবে বাংলা ছবির ইতিহাসও। দেবের ভাষায়—এখানে কথা বলবে বাংলা ছবি। বয়স্করা এসে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হবেন, আর নতুন প্রজন্মের বাঙালি বাংলা ছবির অনেক না–জানা গল্প জানবেন। তাই এই রেস্তোঁরার নাম দেওয়া হয়েছে ‘টলি টেলস’। কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ দেবের? ‘আসল উদ্দেশ্য ছিল বাবাকে কোনও একটা কাজে ব্যস্ত রাখা। এই রেস্তোরাঁ বাবাকে আমার দেওয়া উপহার’, বললেন দেব। আসলে দেবের বাবা গুরুপদ অধিকারী ও মা মৌসুমী অধিকারী দীর্ঘদিন ধরেই মুম্বই প্রবাসী। সেখানে ফিল্ম শুটিংয়ে খাবার সাপ্লাই দেওয়ার ক্যাটারিং ব্যবসা ছিল তার। এখন দেব প্রতিষ্ঠিত কলকাতায়। তবে দেব পরিবারের মানুষজন নিয়ে থাকতেই ভালবাসেন। বাবা-মাও চান না আলাদা থাকুন তাদের আদরের রাজু। অথচ কাজের চাপে প্রয়োজনে কলকাতা-মুম্বাই করা একটু কষ্টসাধ্যই। তার ওপর একমাত্র বোন দীপালির বিয়েও হয়েছে এই রাজ্যেই। তাই পাকাপাকিভাবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকার উদ্যোগ দেবের। সেইজন্যই বাবাকে কাজে ব্যস্ত রাখার কারণে এই রেস্তোঁরা। তবে শুধু রেস্তোরাঁই যদি লক্ষ্য হত, তবে এমন সাজ কেন? ‘এই টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আজ আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, তা এই ইন্ডাস্ট্রিরই দান। তাই নিজের উদ্যোগে বাংলা ছবিকে কিছুটা অন্তত ফিরিয়ে দিতে চাই। বারবার বলছি, ব্যবসা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি চাই, নতুন প্রজন্ম বাংলা ছবি সম্পর্কে উৎসাহিত হয়ে উঠুক,’ বললেন দেব। কিন্তু সদাই ব্যস্ত এই নায়কের সময় কোথায় রেস্তোঁরার দেখভাল করার? কে দেখাশোনা করবেন এই সব দুর্লভ ক্যামেরা বা প্রোজেকশন লাইটের? ‘দায়িত্বে মূলত থাকবেন বাবা। একসময় উনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। উনি জানেন কীভাবে এই সব জিনিসের যত্ন নিতে হয়। আর ব্যবসা দেখাশোনা করবে আমার বোন দীপালি আর ভগ্নীপতি অনির্বাণ,’ মন্তব্য দেবের। বললেন, ‘কম নয়, প্রায় আড়াই বছর ধরে গবেষণা চালিয়েছি বাংলা ছবি নিয়ে। ধীরে ধীরে এক–এক করে এই সমস্ত সরঞ্জাম জোগাড় করেছি। যার জন্য অসংখ্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়েছে।’ জানিয়েছেন, প্রতি রাতে এই রেস্তোরাঁয় দেখানো হবে একটা করে বাংলা ক্লাসিক ছবি। ৫ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে