যে ১০টি কারণে সফলতার শীর্ষে শাহরুখ খান
বিনোদন ডেস্ক : খুবই সাধারণ একটি পরিবার থেকে বলিউডে পা রেখেছিলেন শাহরুখ খান। যার চৌদ্দগোষ্ঠির কেউই জড়িত ছিলেন না বলিউডের সাথে। তারপরও তিনি এসেছেন, জয় কেরেছেন হয়েছেন এখন বলিউড বাদশা।
বর্তমানে বলিউডে তিনিই সব থেকে বেশি সফল একজন অভিনেতা। তার সাফল্য অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয়। অনেকেই ভাবছেন কি করে সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। ইচ্ছে আর একাগ্রতা থাকলে সব কিছুই সম্ভব। আর তার জলজ্যান্ত প্রমাণই হচ্ছেন আজকের বলিউড বাদশা শাহরুখ খান।
তাহলে আসুন দেখে নিই শাহরুখ খানের আজকের সফলতার নেপথ্যে কি সেই রহস্য?
১। ব্যবসা বোঝেন ভালো : শাহরুখ নিজেকে ‘বিপণন বিশেষজ্ঞ’ বলে দাবি করেন। আসলেই তিনি তাই। ‘দিলওয়ালে’ ছবির প্রচারণায় তিনি ও কাজল কোনো সুযোগই হাতছাড়া করেননি। এমনকি তাঁর টুইটের মাঝেও ছিল স্বকীয়তা। আর ‘দিলওয়ালে’ ছবির বক্স অফিস সাফল্যই বলে দিচ্ছে— তাঁর এই দাবি যুক্তিযুক্তই বটে।
২। একাগ্র, দৃঢ়সংকল্প : শাহরুখ একবার যা করবেন বলে ভাবেন, সেটা করেই ছাড়েন। চাইলে বছরে মাত্র একটা ছবির কাজ করতে পারেন, আবার চাইলে বিশ্রামেও চলে যেতে পারেন। আবার ইচ্ছে হলে পরিবারকে নিয়েই কাটিয়ে দিতে পারেন অনেকটা সময়। ইচ্ছে হলো, তো ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন ঘুরতে! যেহেতু তিনি যা-ই করেন সেটাই জনপ্রিয়তা পায় এবং তাতে ছবির প্রচারটাও ভালো হয়, তাই এ নিয়ে নির্মাতারাও কোনো উচ্চবাচ্য করেন না। তবে তিনি যেকোনো কাজই মন দিয়ে করেন। শাহরুখের কাজের প্রতি এই একাগ্রতা এবং দৃঢ় সংকল্পই আজ তাঁকে এত দূর এনেছে।
৩। নিজেই বানান ব্র্যান্ড : ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিতে যেমন দক্ষিণ ভারতকে ছবিতে তুলে এনেছিলেন, তেমনটি এবার শাহরুখ উঠে পড়ে লেগেছেন তাঁর ছবিতে পশ্চিমবঙ্গকে ‘দেশের সবচেয়ে মধুর পর্যটন স্পট’ হিসেবে তুলে আনতে। এই প্রচারের মূল লক্ষ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ। মুম্বাইয়ের পত্রিকা ‘মিড-ডে’-র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসুর স্বীকারোক্তি। খুব শিগগিরই শাহরুখ খান পশ্চিম বাংলায় আসবেন দুদিনের শুটিংয়ে। নতুন নতুন বিজ্ঞাপন এবং ছবিতে পশ্চিমবঙ্গকে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে দেখানোর জন্য প্রায় ৮ কোটি রুপির বাজেট হয়েছে।
৪। ঝুঁকি নেন : ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দল কিনেছেন শাহরুখ। শাহরুখের রেড চিলি এন্টারটেইনমেন্ট এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের সহ-মালিক জুহি চাওলা ও তাঁর স্বামীর বিনিয়োগ রয়েছে এই দলে। উল্লেখ্য, মার্ক ওয়ালবার্গ এবং জেরার্ড বাটলারের মতো হলিউড তারকাদেরও এই লীগে দল আছে।
৫। সৃজনশীল : শাহরুখের আছে সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা। একটা ছবি কতটা সফল হবে, সেটা অনেকখানি নির্ভর করে সে ছবির প্রচারের সাফল্যের ওপর। আর এই কাজটি খুব ভালো বোঝেন শাহরুখ। মুম্বাই মিররের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছবি তোলা এবং সাক্ষাৎকার দেওয়ার বদলে শাহরুখ তাঁর ছবির সহ অভিনেতাদের (যেমন দীপিকা পাডুকোণ, অভিষেক বচ্চন, সনু সুদ, বোমান ইরানি) নিয়ে বিশ্বব্যাপী শো এর আয়োজন করে থাকেন এবং তা করেন একেবারে ছবি মুক্তির আগে। এসব শো থেকেও প্রচুর আয় হয়, আবার ছবির প্রচারটাও হয়! ছবির প্রচারে তাঁর চেয়ে বড় ওস্তাদ বলিউডে আর কে আছে?
৬। বিজ্ঞাপনে অর্থ-খ্যাতি : বিজ্ঞাপনে অভিনয় ও কণ্ঠ দিয়ে প্রচুর আয় করেন শাহরুখ। তাঁর পরিচিতি, জনপ্রিয়তা এবং একটার পর একটা ব্যবসাসফল ছবি তাঁকে বিজ্ঞাপনে বেশি আয় করতে সাহায্য করে। মানতেই হবে বিজ্ঞাপনের জগতে শাহরুখ এখন এক ‘ব্র্যান্ড’-এর নাম।
৭। স্বত্ব থেকে আয় : কৃত্রিম উপগ্রহের কাছে নিজের ছবির প্রচারণা স্বত্ব বিক্রি করেও প্রচুর আয় হয় শাহরুখের। তিনি খুব ভালো করেই জানেন, অনেকেই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারেন না। টিভিতে প্রচারিত হলে তাঁরা তা দেখবেনই। তাই তিনি এ কাজটা করেন। যেমন, চেন্নাই এক্সপ্রেস ছবির স্বত্ব বিক্রি করে তিনি জি এন্টারটেইনমেন্ট এর কাছ থেকে নিয়েছিলেন ৪৮ কোটি রুপি! এমনকি ছবিটি যদি ১০০ কোটিরও বেশি আয় করে, তবে এই স্বত্বের মূল্য আরও বাড়ানোর চুক্তি করা থাকে। জানা গেছে, এমন প্রতিটি চুক্তিতে শাহরুখ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকেন।
৮। নিজের মূল্য বোঝেন : কে যেন বলেছিলেন, ‘তুমি যে কাজটি ভালো পারো, সেটি কখনো বিনা মূল্যে করো না। আপনি না জানলেও শাহরুখ বিষয়টি নিশ্চিত জানেন। তাই প্রতিটা অনুষ্ঠানে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি মঞ্চে ওঠেন। টাকার অঙ্কটা অবশ্যই কোটিতে হয়। মুম্বাই মিরর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কিং খান নাকি একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেই ১৫ হাজার ডলার নেন, আর কিছু করে দেখাতে নেন ৮ কোটি রুপি! ২০১২ সালে নাকি ২৫০টি বিয়েতে উপস্থিত থাকার নিমন্ত্রণ তিনি পেয়েছিলেন, যার মধ্যে মাত্র ১০ টিতে তিনি গিয়েছেন। এর মানে এই দাঁড়ায় যে, শুধুমাত্র বিয়ে খেয়েই শাহরুখ বছরে রোজগার করে ফেলেন ৮০ কোটি রুপি!
৯। প্রচার বোঝেন ভালো : ছবির প্রচার এবং বিপণনে শাহরুখের জুড়ি নেই বলিউডে। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ও সাম্প্রতিক ‘দিলওয়ালে’ ছবির তুমুল সাফল্যই এর বড় প্রমাণ। শহর জুড়ে চক্কর দিয়ে বেড়ানো, সংবাদ সম্মেলনে হাজিরা দেওয়া, টিভি শোয়ে উপস্থিত হওয়া-এমন সব কাজই তিনি করেন তাঁর ছবি মুক্তির আগে ও পরে। এটাও জানা গেছে যে দিল্লিতে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবির দুটি টিকিটের সঙ্গে একটি বিনা মূল্যে দেওয়ার বুদ্ধিটাও শাহরুখের মাথা থেকেই বের হয়েছিল!
১০। বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারী : বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারী শাহরুখ খুব ভালো করেই বোঝেন, কোথায় বিনিয়োগ করলে তাঁর লাভ বেশি। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি তাঁর টাকা খাটিয়েছেন। আইপিএলে কেকেআর দল, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট— এই উদ্যোগের অন্যতম। নিজের অঢেল সম্পদ অলস ফেলে না রেখে, বরং এভাবে টাকা খাঁটিয়ে সম্পদ দ্বিগুণ করে নেওয়ার কৌশলটিও শাহরুখ ভালোই জানেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে দেব দুলাল গুহ।
০৫ জানুয়ারি, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন
�