বৃহস্পতিবার, ০৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০:১২

যেভাবে ছিনতাইকারী থেকে হাজার কোটির মালিক মিশু!

যেভাবে ছিনতাইকারী থেকে হাজার কোটির মালিক মিশু!

বিত'র্কি'ত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রে পা'লিয়ে যাওয়ার গোপন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার অন্যতম সহযোগী ও বিজনেস পার্টনার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান (৩৯)। তাদের ফ্লাইট ছিল গতকাল ভোররাতে। কিন্তু হয়নি শেষর'ক্ষা। আকাশপথে ফ্লাই করার আগেই তাদের আ'স্তা'নায় হা'না দেয় এলি'ট ফো'র্স র‌্যাব।

মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে ভাটারার বাসা থেকে পৃথক অভি'যানে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি অভিজাত ফেরারি গাড়ি, ১৩ হাজার ৩০০ পিস ই'য়া'বা, একটি অ'স্ত্র, ৬ রাউ'ন্ড গু'লি, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় জা'ল রুপি, সিসার কাঁচামাল জ'ব্দ করা হয়। র‌্যাব বলছে, মিশু আমেরিকার গ্রিনকার্ড হোল্ডার। এদিকে রি'মা'ন্ডে থাকা বিতর্কিত মডেল পিয়াসা ও মৌকে দ'ফায় দ'ফায় জে'রা করছে গোয়ে'ন্দা পুলিশ। আয়ের উৎস না থাকলেও আলিশান জীবন যাপন করতেন পিয়াসা আর মৌ। তাদের আয়ের উৎস কী? গোয়েন্দাদের এমন প্রশ্নে কোনো জবাব ছিল না লেডি মা'ফি'য়ার দুই গ্যাং'স্টা'রের কাছে। ২০১৮ সালে সংঘ'টিত পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনে নতুন ত'থ্য পাওয়া যাচ্ছে পিয়াসার কাছ থেকে। রিমা'ন্ডে থাকা পিয়াসা তার ব্যবহারের বিলাসবহুল ফেরারি, বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজ গাড়ি কিংবা আলিশান জীবন-যাপনের জন্য টাকার উৎসের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। 

গোয়েন্দাসূ'ত্র জানান, আলিশান জীবনযাপন ছিল মডেল পিয়াসা ও মৌর। নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, দেশি-বিদেশি দামি পোশাক, শেলফের তাকে তাকে সাজানো জুতাসহ বাহারি সব পণ্যের সমাহার ছিল তাদের বাসায়। বাসার ভিতরে প্রবেশ করলে চোখ চড়'কগাছ হওয়ার উপক্র'ম। কারণ তাদের দৃ'শ্যমান আয়ের উৎসের সঙ্গে জীবনযাপনের ব্যয়ের ছিল আকাশপাতাল ব্যবধান। গোয়ে'ন্দাদের ভাষায়, পিয়াসার বাসা ছিল অনেকটা ‘রাজরানী’র ঘরের মতো। 

গতকাল বিকালে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমা'ন্ডা'র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মিশু ও জিসানের বিরুদ্ধে অ'স্ত্র, মা'দক এবং প'র্নো'গ্রা'ফি আইনে মামলা হবে। জিসানের ব্রা'হা'মা গরু পালনের ব্যাপারে আমরা পশু ও প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন এ ব্যাপারে জিসানকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি অনেক কালো টাকার মালিকের অর্থ বিদেশে পা'চার করেছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। মিশুর নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মা'দক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকা'ন্ড চা'লিয়ে আসছিলেন তিনি।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, মিশু একসময় রাজধানীতে পে'শা'দার ছিন'তাই'কারী হিসেবে পুলিশের তালিকাভু'ক্ত ছিলেন। একসময়ের ছিন'তাই'কারী এখন হয়ে উঠেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হ'ত্যা, চাঁ'দাবা'জি, চু'রি, মা'দকের অন্তত ১১টি মামলা রয়েছে। মিশু এর আগে বিভিন্ন মামলায় তিনবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ক্যা'সি'নো ও চাঁ'দাবা'জির মামলায় গ্রেফতার মোহাম্মদপুরের সাবেক আলোচিত কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীবের ঘনি'ষ্ঠ সহযোগী এবং অনেক অপকর্মের সা'ক্ষী মিশু। রাজীব গ্রেফতারের আগে তার বাসাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। 

এ ছাড়া মডেল পিয়াসার চোরাচালান চক্রের অন্যতম প্রধান সহযোগী মিশু। পিয়াসার মাধ্যমে অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ঘনি'ষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন তিনি। চোরাচালানের সুবাদে মিশুও এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। রাজধানীর উপকণ্ঠে সান ডেইরি নামে একটি গরুর ফার্মের আড়ালে এ চ'ক্রটি দীর্ঘদিন ধ'রে মা'দ'ক ও অ'স্ত্রের কারবারে জড়িত। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানির সময় গরুর পেটে করে আনা হয় হীরা ও সোনার চালান। গত পাঁচ বছরে এভাবে হাজার কোটি টাকার চালান দেশে আনা হয়। 

সূত্র বলছেন, শুধু হীরার ও সোনার চালান নয়, গরুর পেটে করে ই'য়া'বার চালানও আনা হয়। এজন্য মাঝেমধ্যে টেকনাফ থেকেও গরুর চালান আনা হতো। এভাবে চো'রাচা'লানের টাকায় রাতারাতি বিত্তশালী বনে যান মিশু। মিশু হাসান শুল্কমু'ক্ত গাড়ি চো'র চক্রের সদস্য। মিশুর বিরুদ্ধে অ'স্ত্র ও নারী পা'চারের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘব'দ্ধ চ'ক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য ১০-১২ জন। 

তারা রাজধানীর অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম হোতা। এসব পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করতেন। এরা দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় ও প্লেজার ট্রি'পের আয়োজন করতেন। সুকৌশলে তারা ক্লা'য়েন্টদের গো'পন ছবি ধারণ করে পরে তাদের ব্ল্যা'কমে'ল করতেন। পার্টিতে ক্লা'য়েন্টের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দেওয়া হতো। গাড়ির ব্যবসা, আমদানি ও গরুর ফার্মের ব্যানারে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন জনের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে আসছিলেন। 

র‌্যাব বলছে, মিশু হাসান দেশের বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে নামিদামি ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি সরবরাহ করে আসছিলেন। তবে তাদের সরবরাহকৃত গাড়িগুলো রোডিও ড্রাইভ, ইউরো কার, সলিউশন ওয়ার্কশপে টে'ম্পা'রিং করা হতো। পিয়াসাকেও গাড়ি সরবরাহ করেছিলেন মিশু। বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রেও মিশু বিভিন্ন অনি'য়ম ও ছ'লচাতু'রীর আশ্রয় নিতেন। নিজে ব্যবহারের জন্য তার কাছে দুটি রেঞ্চ রোভার, অ্যাকুয়া, ভ'ক্স ওয়াগন, ফেরারিসহ পাঁচটি গাড়ি রয়েছে। গোয়েন্দা তদ'ন্তে এ সি'ন্ডি'কে'টের সদস্য হিসেবে নাম উঠে এসেছে ডায়মন্ড ব্যবসায়ী দিলীপ আগারওয়ালের। অবৈধ উপায়ে আনা ডায়মন্ডগুলো স্থান পায় দিলীপের শোরুমে। দিলীপ-পিয়াসা-মিশু সিন্ডিকেট একেকটি চালানে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ কোটি টাকা মুনাফা করে। সূ'ত্র নিশ্চিত করেছেন, প্রশাসন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে অভি'যান চালালেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। চোরাচালানের মাধ্যমে দিলীপ প্রায় ৫-৬ হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন রাতারাতি। যেভাবে উত্থা'ন মিশুর : মিশুর অতীত অ'নুস'ন্ধানে নেমে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর তাজমহল এলাকায় বেড়ে ওঠেন তিনি। এলাকায় ‘ছোট মিশু’ হিসেবে তার ছিল ব্যাপক পরিচিতি। একসময় টাউন হল ও জেনেভা ক্যাম্প ছিল ওই অঞ্চলের ‘অপরাধ জোন’। 

কম বয়সেই ২০০৩ সালে ওই এলাকায় গড়ে তোলেন কিশোর 'গ্যাং'। সে সময় ওই এলাকায় ছি'নতা'ই ছিল তাদের নিয়মিত কাজ। তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত মকবুলের নাম ভাঙিয়ে তট'স্থ রাখতেন এলাকাবাসীকে। ছিনতাইয়ের অভিযোগে ধ'রা পড়ে একবার জেলও খাটেন মিশু। ২০০৪ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কোনো এক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান মিশু। তবে বেশিদিন থাকেননি। বছরখানেকের মধ্যেই ফিরে আসেন। ফিরে এলেও তাকে আর মোহাম্মদপুরের দিকে খুব একটা দেখা যেত না।

অ'নুস'ন্ধানে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে মিশু ঢুঁঁ মা'রা শুরু করেন গুলশানের অভিজাত ক্লাব-রেস্তোরাঁয়। স'খ্য গড়ে তোলেন বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে। গুলশানের ফ্যা'ন্টা'সি বিলি'য়ার্ড সেন্টার, মুভে'নপি'ক নামক অভিজাত রেস্তোরাঁসহ ওয়ান্ডারল্যান্ডের আশপাশে আড্ডা দেন। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু করেন ডি'জে ব্যবসা। ডিজে ব্যবসায় ওই সময়ের পরিচিত নাম ডি'জে জামিল এবং ডিজে নাতাশাকে নিয়ে বিস্তৃতি ঘ'টান ব্যবসার। কিন্তু এর আড়ালে তিনি সিসা, ই'য়া'বাসহ ভ'য়ং'কর সব মাদকের বাণিজ্য শুরু করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাবসহ দেশে-বিদেশে নারী সরবরাহের সঙ্গেও জড়িয়ে যান। 

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ডি'জে জামিল ও নাতাশা চক্রের সঙ্গে মিলে গুলশান পিং'কসিটির বিপরীতে গড়ে তুলেছিলেন সি'সা বা'র। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বি'ত'র্কি'ত কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের (বর্তমানে বরখাস্ত ও জেলব'ন্দী) সঙ্গে এক হয়ে নিয়'ন্ত্রণ করতেন ঢাকার ফুয়াং ক্লাবের ক্যা'সি'নো ব্যবসা। যদিও ক্যা'সিনো'বিরোধী অভিযানের পর এসব ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু থেমে থাকেনি মিশুর অপ'রাধক'র্ম। শুরু করেন এয়ারপোর্টে লাগেজ ব্যবসা। তবে অল্প কয়েকদিনেই লাগেজ ব্যবসার বিষয়টি চাউর হয়ে গেলে নামেন চো'রাই গাড়ির ব্যবসায়।-বিডিপ্রতিদিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে