সুজিষ্ণু মাহাতো : আগে লোকে গালাগালি দিয়ে বলত, ‘‘বাবার বিয়ে দেখিয়ে দেব।’’ এখন বাবার বিয়ে দেখাটাই নতুন ট্রেন্ড। রিল থেকে রিয়েল লাইফ—এ দৃষ্টান্ত যত্রতত্র।
সেদিন তার সত্তরতম জন্মদিনে কবীর বেদী দশ বছরের পুরনো বান্ধবী পারভিন দুসাঞ্জকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বলিউডের বহু তারকাই উপস্থিত ছিলেন সেই পার্টিতে। দেখা যায়নি কবীর-কন্যা পূজাকে। বরং দেখা যায়, তার ট্যুইটে সৎমা-কে তিনি ‘দুষ্টু ডাইনি’ বলতেও কসুর করেননি!
বাবাকে অভিনন্দন : পরে অবশ্য পূজা লেখেন, “আগের ট্যুইট মুছে দিয়েছি। ভালই হবে সব, এই আশা রইল। বাবাকে অভিনন্দন।”
বাবা-মায়ের একাধিক বিয়ে ও সন্তানের মেনে নেওয়া নিয়ে নানা মুনির নানা মত। অথচ খোদ বলিউডে এই ছবিটা ক্রমশ বদলাচ্ছে। শাবানা আজমির সঙ্গে যেমন ফারহান আখতার ও জোয়া আখতারের দারুণ ভাল সম্পর্ক।
করণ জোহরের শো-তেই ফারহান জানিয়েছিলেন, প্রথমে তার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কছেদের জন্য তিনি বাবা জাভেদ আখতারের উপরে বেশ রেগেই গিয়েছিলেন। পরে, ধীরে ধীরে শাবানার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুবই ভাল হয়। এ জন্য তিনি কৃতিত্ব দিচ্ছেন তার মা হানি ইরানি ও সৎ-মা শাবানা—দু’জনকেই।
সৎমা-ই বন্ধু : সুন্দর সম্পর্ক হেলেন-সালমান খান, কারিনা কাপূর-সারা খানের মধ্যে। মাঝেমধ্যেই তারা একসঙ্গে ঘুরতে, খেতে যান। একেবারে তিন বন্ধুর মতো। ‘কফি উইথ করণ’-এ কারিনা জানিয়েছেন, সাইফ আলি খান ও অমৃতা সিংহের দুই ছেলেমেয়ে সারা ও ইব্রাহিম—দু’জনের সঙ্গেই তার সম্পর্ক বন্ধুর মতো। কারিনা এ-ও জানান, দু’জনেরই একজন অসাধারণ মা রয়েছেন, তাই তিনি ওদের মা হতে চান না, বন্ধু হয়েই থাকতে চান।
ব্যতিক্রমের আরেকটি ছবি জনপ্রিয় হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তা হল গয়না ব্র্যান্ড ‘তনিশকের’ বিজ্ঞাপনের। সেখানে পাত্রীর ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়ছিলেন পাত্র। ‘ইংলিশ-ভিংলিশ’-এর পরিচালক গৌরী শিন্দে পরিচালিত ওই বিজ্ঞাপন বিয়ের প্রচলিত ‘ট্যাবু’ ভেঙেছিল বলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
একই রকম ইতিবাচক ছবি রাহুলের (নাম পরিবর্তিত) ক্ষেত্রে। শহরেরই একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রাহুলের যখন চার বছর বয়স তখন তার বাবা-মার ডিভোর্স হয়। তিনি বাবার কাছেই বড় হয়েছেন। তার বাবা দ্বিতীয় বার যাকে বিয়ে করেন, তাকেই তিনি মা বলে মনে করেন।
রাহুল বলছেন, ‘‘মাতৃত্বের অনুভব আমি পেয়েছি ওর কাছেই। তাই আমাকে জন্ম না দিলেও তিনিই আমার মা।’’ রাহুল এখন বিবাহিত। তিনি জানাচ্ছেন, বাবার থেকেও তার ‘সৎমা’-ই তার কাছে বেশি প্রিয়।
মায়ের বিয়ে : বাস্তবেও বাবার মৃত্যুর পর মায়ের ফাঁকা ফাঁকা লাগায় মায়ের সঙ্গীর জন্যই তার মায়ের পুরানো স্কুলের বন্ধুর সঙ্গে ছোট করে একটা ম্যারেজ পার্টির মাধ্যমে বিয়ে দিয়েছিলেন যাদবপুরের রত্নাবলী।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রিমা মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বিয়ের আগে যেমন এখন প্রি-ম্যারিটাল সম্পর্ক নিয়ে মাথা ঘামানো কমেছে, তেমনই যদি বিয়ে সফল না হয় তাহলে সন্তানরাই বাবা-মাকে অন্য সম্পর্কের কথা বলছে।
ঠিক এমনটাই ভেবেছিলেন দুই বোন পায়েল ও কোয়েল (নাম পরিবর্তিত)। বাবার মৃত্যুর পর তাদের মায়ের সঙ্গে এক ব্যক্তির সম্পর্ক হয়। বিয়ে না করলেও তাদের বন্ধুত্বে যতি পড়েনি। সেই ভদ্রলোক কলকাতার বাইরে থাকলেও শহরে এলে তার বান্ধবী ও বান্ধবীর মেয়েদের সঙ্গেই থাকেন।
তা মেনে নিতে কোনও অসুবিধেও হয়নি দুই বোনের। বছর পঁচিশের বড় বোন বলছেন, মা তার নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছেন। তিনি খুশি থাকলে আমরাই বা আপত্তি করব কেন? -আনন্দplus
২৫ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি