বিনোদন ডেস্ক : অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অভিনয় করে থাকেন তারকারা। এমন ঝুঁকিপুর্ণ শটে অংশ নিতে গিয়ে মৃত্যুকেও খুব কাছ থেকে দেখেছেন অনেক তারকা। বলিউড-হলিউড তারকাদের এমনই কিছু ভয়ংকর মুহূর্তের কথা থাকছে আজকের প্রতিবেদনে।
মাইকেল জে ফক্স : কাজের প্রতি কতটা নিবেদিত হলে আপনি প্রাণ হাতে নিয়ে গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলতে পারবেন? কোটি টাকার প্রশ্ন। হাতে গোনা দু-একজনকেও এতটা করতে দেখা যাবে কিনা সন্দেহ। তবে নিজের চলচ্চিত্র ব্যাক টু দ্য ফিউচার ৩ এর শুটিং এ ঠিক এই কাজটিই করেছিলেন অভিনেতা মাইকেল জে ফক্স। প্রথমে বেশ কয়েকবার বাক্সের ওপর দাঁড়িয়ে থেকেই গলায় দড়ি বেঁধে ঝোলার অভিনয় করছিলেন তিনি।
তবে তার কোনটাই নির্মাতার মনমতন না হওয়ায় শেষ অব্দি সত্যি সত্যিই দড়িতে ফাঁস নেওয়ার চিন্তা করেন তিনি। আর টানা ৩০ সেকেন্ড তার সেই ঝুলন্ত অবস্থার দৃশ্যায়নও করা হয়। ৩০ সেকেন্ড পর হঠাত্ সবার খেয়াল হয় যে অভিনেতার কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তখন সত্যি সত্যি জ্ঞান হারিয়েছিলেন ফক্স। তাড়াতাড়ি তাকে অনেক চেষ্টায় তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়।
টম ক্রুজ : সবসময় নিজের কাজ নিজে করতেই পছন্দ করেন টম ক্রুজ। সেটা কোন সাধারণ ব্ডাপার হোক, কিংবা নিজের ছবির বিপদজনক সব স্ট্যান্ট। তবে যে দুর্ঘটনার শিকার টম হয়েছিলেন তার জন্যে টম দায়ী ছিলেন না, দায়ীছিলেন এমিলি ব্লান্ট। এজ অব টুমোরো ছবির একটি গাড়ি চালানোর দৃশ্যে দুজনকেই দেখা যায় গাড়ির ভেতরে। গাড়িতে এমিলি ছিলেন চালকের জায়গায়। তখন একটা ভুলের কারণে সব গড়বড় করে ফেলেন এই তারকা। আর তাতেই গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রায় মরতে বসেন হলিউডের বিখ্যাত তারকা টম ক্রুজ।
জ্যাকি চ্যান : পুলিশ স্টোরির কথা মনে আছে? জ্যাকি চ্যানের এই বিখ্যাত ছবিটিতে শেষ দৃশ্যে বেশ মারামারি হয়। আর সেই পুরো দৃশ্যটাতে স্ট্যান্ট হিসেবে নিজেই কাজ করেন জ্যাকি। বিপদজনক ভঙ্গীতে লাফ দেন, আশেপাশে বাল্বগুলোকে নিজের ওপরে ফাটতে দেন আর সাধারণ স্ট্যান্ট কাঁচের চাইতে আরেকটু ভারী সুগার গ্লাসেও অনায়াসে আঘাত করেন। আর এতসব কারণে শরীরের নানা অংশ পুড়ে যায় তার। পেলভিস নড়ে যায় আর কিছু পেশী ছিঁড়ে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়েছিল।তবে তাতে কি? নিজে পুরোপুরি ভচকে গেলেও ঠিকই ছবির কাজ শেষ করেন জ্যাকি।
অমিতাভ বচ্চন: বলিউডের বিগ বি খ্যাত অমিতাভ বচ্চনের কুলি সিনেমার কথা নিশ্চয় সকলেরই মনে আছে। তবে সেই কুলি সিনেমায় মারামারি দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন বলিউড শাহেনশা, এটি অনেকেরই অজানা। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে, লাখো দর্শকের ভালোবাসায় ফিরে এসেছিলেন তিনি। সেই সময়ে প্রায় দু-তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল অমিতাভকে।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন: শ্বশুরের মতো বউমা ঐশ্বরিয়াকে সুটিংয়ে আহত হয়ে পড়ে থাকতে হয়েছিল হাসপাতালে। তবে সাবেক এই বিশ্বসুন্দরীর চোট অমিতাভের মতো এতোটা ভয়াবহ ছিল না। ‘খাকি’ সিনেমার সুটিং চলাকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জিপ গাড়ি সজোরো ধাক্কা দেয় এই অভিনেত্রীকে। ঘটনা অনেক মারাত্মক হতে পারতো, তবে বলতে হয় ভাগ্যের জোরোই সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন রাই সুন্দরী। পায়ের গোড়ালি প্রচন্ড আঘাত নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই নেয়া হয় হাসপাতালে। পরে তার পায়ে দশটি সেলাই দেয়া লেগেছিল।
সালমান খান: দাবাং হিরো সালমান খান সম্প্রতি জানিয়েছেন, ‘তেরে নাম’ সিনেমায় অভিনয়ের সময়ে ঘটে গেছে ভয়ংকর এক ঘটনা। যদিও এতোদিন এটি অপ্রকাশিতই ছিল। রেললাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সালমান, আর তাঁর পেছনে আসছে রেল। দৃশ্যটি ধারনের সময়ে অভিনেতা অভিনয়ে এতোটাই বুঁদ ছিলেন যে, ট্রেন তার খুব চলে এসেছিল। কিন্তু তিনি সেটা আন্দাজই করতে পারেননি। পরে এক সহ অভিনেতা ধাক্কা দিয়ে তাকে লাইন থেকে সরিয়ে দেন বলে জানিয়েছেন।
মার্গারেট হ্যামিল্টন : দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজ চলচ্চিত্রটির সেই কুটিল জাদুকরের কথা মনে আছে? যে কিনা পশ্চিম থেকে উদয় হত আর খানিক পরপরই রঙ্গিন ধোঁয়ার ভেতরে উধাও হয়ে যেত। চলচ্চিত্রটির সেই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মার্গারেট হ্যামিল্টন আর আরো কয়েকবারের মতন সেবারেও ধোঁয়ার ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মূলত, পেছনে একটা দরজা থাকতো ডাইনীর। যেটা দিয়ে মার্গারেট উধাও হয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু সেবার হঠাত্ করেই আটকে গেল দরজাটা। একেবারেই খুলল না। এদিকে মার্গারেটের মেক-আপে থাকা পেট্রোলিয়াম আর ধোঁয়া মিলেমিশে আগুনের সৃষ্টি হলে মারত্মকভাবে তার মুখ ও হাতের ত্বক খ্ষতিগ্রস্ত হয়।
সিলভস্টের স্ট্যালন : রকি ৪ চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মন জয় করেছিল মারামারির দৃশ্যগুলোর জন্যে। বক্সিং রিং এর ভেতরে করা অভিনয়গুলো বাস্তব ছিল।সত্যিই একে অন্যকে আঘাত করছিলেন তারকারা। দৃশ্যটির শেষ ধাপে যখন নায়ক স্ট্যালন একটা ঘুষি খেয়ে একেবারে পড়ে যান, সেবার তিনি প্রতিপক্ষে বলেন যতটা জোরে সম্ভব তাকে ঘুষি মারতে। কথামতন কাজ করা হলে সত্যিই প্রচন্ড আঘাত পান এই তারকা আর হৃদপিন্ড থেমে যায় তার। হাসপাতে ইনটেনসিভ কেয়ারে পরবর্তী ৮ দিন ভর্তি ছিলেন সিলভস্টের স্ট্যালন।
ড্যানিয়েল ডে লুইস : ১৮৬৩ সালের গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই গ্যাংস অব নিউ ইয়র্ক মুভিটিতে সে সময়কার পোশাক পরে অভিনয় করতে হয় অভিনেতা ড্যানিয়েল ডে লুইসকে। ফলে ঠান্ডায় খুব দ্রুত নিউমোনিয়া লেগে যায় তার। তখন এ রোগের ভালো কোন চিকিত্সা না থাকায় ডাক্তারা একটা পর্যায়ে লুইসকে তার মৃত্যুর ব্যাপারে সাবধান করে দেন। তারপরই লুইস সতর্ক হন।
২৮ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি