বিনোদন ডেস্ক : ‘বলিউড কিং’ নামে পরিচিত শাহরুখ খান। ভারতীয় সিনেমার প্রভাবশালী অভিনেতা ও প্রযোজক। অঢেল অর্থের মালিক।
অথচ এই শাহরুখই এক সময় অর্থের অভাবে সিনেমা দেখতে পারেননি। ছোটবেলায় একবার বাবার সঙ্গে দিল্লিতে গিয়েছিলেন। ছোট্ট শাহরুখ বাবার কাছে আবদার ধরেন সিনেমা দেখবে বলে।
কিন্তু সিনেমা হলের বাইরে থেকেই বাবা তাজ মহম্মদ খানের সঙ্গে ফিরে আসতে হয়েছিল ছোট্ট শাহরুখকে! সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানিয়েছেন এ অভিনেতা।
তিনি বলেন, ‘বাবা ছিলেন দুনিয়ার সবচেয়ে সফল ও ব্যর্থ মানুষ। অর্থের অভাব এতটাই প্রকট ছিল যে, একদিন সিনেমা দেখার ইচ্ছা হলেও প্রেক্ষাগৃহে ঢুকতে পারিনি টিকিটের টাকার অভাবে।’
অভিনয় করার জন্য শাহরুখ যখন মুম্বাই এসেছিলেন তখন তার চলার পথটা সহজ ছিল না। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে টেলিভিশনে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর বলিউড।
আজ এ ইন্ডাস্ট্রিতে খান সাম্রাজ্যের অধিপতিদের অন্যতম তিনি। আছে বিত্ত, বৈভব। কিন্তু ছোটবেলা কেটেছে খুব কষ্টে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ক্যানসারে বাবা মারা যান।
১৯৯০ সালে মা লতিফ ফতিমা খানও দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা যান। চিকিৎসাটাও ঠিকভাবে করতে পারেননি শুধু অর্থের অভাবে। মায়ের মৃত্যুর এক বছর গৌরিকে বিয়ে করেন শাহরুখ। তখন সবে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেছেন।
এরপর প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ। প্রতিষ্ঠা পেয়েছেনও। কিন্তু অতীত কখনোই ভুলতে পারেন না এ বলিউড সুপারস্টার। স্ত্রী ও তিন সন্তান আরিয়ান, সুহানা আর আব্রাহাম খানকে নিয়ে এখন তার সুখের সংসার। জৌলুসের ঘাটতি নেই। সন্তানদের আবদার মিটে যায় নিমিষেই।
কিন্তু তবু মাঝে মাঝে বলিউড বাদশা আনমনা হয়ে যান। সাক্ষাৎকারে শাহরুখ সেটাই বলেছেন, ‘আমার এখন সবকিছু আছে। তবু কোথাও জানি শূন্যতা বিরাজ করে। আসলে আমার মধ্যেই কিছু সমস্যা আছে। সেটা আমি বুঝতেও পারি। কিন্তু সমস্যাটা কী সেটাই ধরতে পারি না।
আমার একটা সুন্দর পরিবার, কিছু ভালো বন্ধু, সবই আছে। তবু নিজেকে একা মনে হয়! আসলে বাবার কষ্টগুলো খুব মনে পড়ে। বাবার মতো মরতে চাই না আমি। বিশ্বাস করুন, একটা খালি খালি বোধ হয় নিজেকে। একটা অস্থিরতা, দম আটকানো পরিস্থিতি কাজ করে মনের ভেতরে, যা আমি অভিনয় দিয়ে পূর্ণ করি।’
ছোটবেলার স্মৃতি মনে করে শাহরুখ বলেন, ‘বাবা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। ইচ্ছাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাবার যথেষ্ট অর্থ ছিল না। এদিন বাবা আমাকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছিলেন সিনেমা দেখাবে বলে। কিন্তু তার কাছে যথেষ্ট টাকা ছিল না। আমরা হলের বাইরে বসে আসা যাওয়া করা গাড়ি গুনেছিলাম।
সেদিন বাবা আমাকে বুঝিয়েছিলেন গাড়ির আসা-যাওয়া দেখতে কত ভালো লাগে! আমার ছেলে এখন নিজেই গাড়ি নিয়ে যায় সিনেমা দেখতে! যদি বাবা সেটা দেখতে পেতেন! আমার মনে হয় আমার বাবা ছিলেন এ পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ও ব্যর্থ মানুষ। তবু আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তার অভাববোধই আজকে আমাকে শাহরুখ খান বানিয়েছে।’