বিনোদন ডেস্ক : ১৯৮৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল সালমান খান ও ভাগ্যশ্রী অভিনীত তুমুল হিট ছবি ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’। সে সময় এ দেশে হিন্দি ছবি মানে এলাকার ভিডিও ক্যাসেটের দোকান থেকে ভাড়া নিয়ে ভিসিআরে দেখা।
যে ছবি বা যে তারকা দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলত, দিনের পর দিন, মাস এমনকি বছর পেরিয়েও গেলেও তার চর্চা চলত। পোস্টার, ভিউকার্ডে স্থান পেত তারকাদের মুখ, ছবির দৃশ্য। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ তেমনই একটি হিন্দি ছবি। গতকাল ছবিটির ৩৪ বছর পূর্ণ হলো।
তখন অ্যানালগ যুগ। আজকের ডিজিটাল যুগে যা কিছু সম্ভব, সেসব তখন কল্পনারও বাইরে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা গুগল সার্চের কোনো সুযোগ ছিল না। থাকবে কীভাবে? তখন তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গুগল কিছুই ছিল না।
ফিতা ক্যাসেটের সে যুগে হয়তো ছবিটি বাংলাদেশে আসতে কিছুদিন সময়ও লেগেছিল; তবে সেই যে এল, আর ভুলতে পারেনি দর্শক। রাতারাতি আলোড়ন ফেলেছিল সেই ছবি। কালক্রমে জায়গা করে নিয়েছিল বলিউডের অন্যতম হিট ছবিগুলোর তালিকায়।
ছবিটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেল যে ৩৪ বছর পরেও লোকের মুখে মুখে ফেরে তার গান ও সংলাপ। এখনো মানুষ ইউটিউবে খুঁজে খুঁজে দেখে, শোনে ‘দিল দিওয়ানা বিন সাজনা’ বা ‘তুম ল্যাড়কি হু’ কিংবা ‘কবুতর যা যা’ গানগুলো।
এটা ছিল সুরাজ বরজাতিয়ার প্রথম পরিচালিত ছবি। আর নায়ক হিসেবে সালমান খানের দ্বিতীয় ছবি। নায়িকা ভাগ্যশ্রীর প্রথম ছবি এটিই। এই ছবির গল্প প্রেম (সালমান খান) আর সুমনকে (ভাগ্যশ্রী) ঘিরে, যাঁদের প্রথমে বন্ধুত্ব হয় এবং পরে ধীরে ধীরে সেই বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে।
সেই সময়ে বলিউডে একটা ‘চকলেট ওয়েভ’ চলছিল। পরিচালক সুরাজ বরজাতিয়া নায়ককে সেই মোড়কে উপস্থাপন করেই বাজিমাত করেছিলেন। মাত্র ৮ কোটি রুপি খরচ করে বানানো ছবিটি সেই সময়ে তুলে এনেছিল ৫০ কোটি রুপি।
‘ছেলেমানুষ’ চেহারায় লাজুক চাহনির সালমান খান ১৯৮০-এর দশকের শেষ ধাপে এই ছবি দিয়েই দুর্দান্ত সফলতা পান। সেই সময় মূলধারার হিন্দি ছবিতে ফর্মুলার বদল ঘটছিল। অ্যাকশন হিরোদের একচেটিয়া বাজারে সফলভাবে ভাগ বসাতে শুরু করেন ‘চকলেট বয়’ আমির খান, সালমান খানরা।
সেই বছরে এটা ছিল সবচেয়ে সফল ছবি। অবশ্য শুধু ওই বছর নয়, ১৯৮০-এর দশকে এই ছবি সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন হয়েছিল বক্স অফিসে। সবচেয়ে সফল ১০টি ভারতীয় ছবির তালিকায় স্থান করে নিয়েছিল এই ছবি।
জানা যায়, সালমান খানকে এই ছবির জন্য প্রস্তাব করেছিলেন শাবিনা দত্ত নামের একজন মডেল। তাঁকেই প্রথমে এই ছবির মূল নায়িকা হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে উনি স্ক্রিন টেস্টে বাদ পড়ে যান।
শাবিনার সঙ্গে একটা টিভি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছিলেন সালমান খান। ছবির নায়িকা ভাগ্যশ্রী এই ছবির আগে পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকারের সঙ্গে ছোট পর্দার ধারাবাহিক ‘কচ্চি ধুপে’ অভিনয় করেছিলেন। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ এতটাই জনপ্রিয় হয় যে এই ছবির বিভিন্ন প্রপ, কস্টিউম ব্যাপক বিক্রি হয়। বলিউডের ছবিতে এর আগে এমনটা হয়নি।
সেই বছর এই ছবি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসে ১৩টি মনোনয়ন পায়। এর মধ্যে ৭টিতে পুরস্কার বাগিয়ে নেয় এই ছবি। তখন পর্যন্ত এটাই ছিল সর্বোচ্চ পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি। পরে এই ছবির রেকর্ড ভেঙে দেয় ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ সুপারহিট হওয়া সত্ত্বেও এক বছর পর্যন্ত আর অন্য কোনো ছবির প্রস্তাব পাননি সালমান খান।
মজার বিষয় হচ্ছে, ছবিটির জন্য সম্মানী হিসেবে মাত্র পাঁচ হাজার রুপি পেয়েছিলেন সালমান। সেই সময় অবশ্য পাঁচ হাজার রুপি মানে অনেক অর্থ। তা হাতে পেয়ে সালমান খান মোটরসাইকেল কিনবেন বলে ঠিক করেছিলেন। পরে অবশ্য বাবার অমতের কারণে তা আর কেনা হয়নি।
‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছবি দিয়ে আলোচনায় এলেও খুব দ্রুতই বলিউডকে বিদায় জানান ভাগ্যশ্রী। অনেক ছবির প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
বেশ কিছুদিন আগে ভাগ্যশ্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার কোনো আফসোস নেই যে আমি ক্যারিয়ারের বদলে আমার জীবন, আমার পরিবারকে বেছে নিয়েছি। যশজী (প্রযোজক যশ চোপড়া) আমাকে প্রায়ই বলতেন, বোকা মেয়ে। হ্যাঁ, আমি বোকা। আর বোকা হয়েই সুখে আছি।
আমি সেসব নারীকেও সম্মান করি, যাঁরা ক্যারিয়ারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। কিংবা ক্যারিয়ার ও পরিবার দুটিকেই সময় দেন। কিন্তু আমি হোমমেকার হয়ে খুশি। যখন নিজের সন্তানদের চোখের সামনে সুন্দরভাবে বড় হতে দেখবেন, সেটাও খুব আনন্দের।’
এক সাক্ষাৎকারে ছবিটি মুক্তির প্রথম দিনের স্মৃতিচারণা করেছিলেন সালমান খান। তিনি বলেন, ‘সেদিন আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। আমার বন্ধু রাকেশের সঙ্গে মিঠুনের (চক্রবর্তী) চেহারার খুব মিল ছিল। তাই ওকে আমি মিঠুন বলে ডাকতাম। ওর সঙ্গে বাইকে চড়ে থিয়েটারে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখতে গিয়েছিলাম।
আর ঠিক সেই সময়ে চলছিল বিরতি। দর্শক আমাকে চিনে ফেলেন। ভিড় জমতে শুরু করে। ব্যস, বাইকে করে আমি আর বন্ধু পালিয়ে গেলাম!’
সালমান খান আরও বলেন, ‘আমার ছবির সঙ্গে সানি দেওলের “আগ কা গোলা” মুক্তি পেয়েছিল। পরিচালক ছিলেন ডেভিড ধাওয়ান। আমি ডেভিডের কাছে গিয়েছিলাম আমার ছবির প্রতিক্রিয়া জানতে। ডেভিড বলেছিলেন “আমার ছবির তো বারোটা বেজে গেছে”...।’
সেই থেকে সালমানের বিজয়রথ চলছে তো চলছেই। পাঁচ হাজার রুপি দিয়ে শুরু করা সেই অভিনেতা এখন বলিউডের শীর্ষ পারিশ্রমিক নেওয়া তারকাদের একজন।