বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের রুপালি পর্দার নব্বইয়ের দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সুদর্শন অভিনেতা বলা হয় তাকে। সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে আসেন তিনি। প্রথম সিনেমায় অভিনয় করে ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি সালমান শাহ।
মাত্র ২৫ বছর বেঁচে ছিলেন দেশের ইতিহাসে তুমুল জনপ্রিয় এই নায়ক। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনক মৃত্যু হয় এ অভিনেতার। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের শুরু হয়। গতকাল (৬ সেপ্টেম্বর) ছিল তার মৃত্যু দিবস।
মারা যাওয়ার ২৮ বছরেও হয়নি তার মৃত্যুর রহস্যের সমাধান। হয়নি বিচারও। আজও তার মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আওয়াজ তুলে যাচ্ছেন। সালমান শাহর মৃত্যুর পর তৈরি হয় নানা বিতর্ক।
তাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি আত্মহত্যা করেছেন সেই রহস্য আজও উদঘাটন হয়নি। শুধু সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে নয়, বিতর্ক ছিল চিত্রনায়কের মা নীলা চৌধুরীকে নিয়েও। সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে মামলা করেন তিনি। যদিও এখনো সেই মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে ফের ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেছেন নীলা চৌধুরী।
পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তাকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি একটি চলচ্চিত্রে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল, এমনও দেখানো হয়েছে।
সম্প্রতি লন্ডন থেকে দেশের একটি গণমাধ্যমে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন নীলা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে দেশে ফিরিয়ে এনে এই হত্যার বিচার করা প্রয়োজন। ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে নানাভাবে অপমান করা হয়েছে আমাকে। এমনকি একটি চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে, এরশাদ সাহেবের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। এরশাদ সাহেবের সঙ্গে মিলে আমিই নাকি খুন করেছি সালমান শাহকে।’
এরশাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট করে নীলা চৌধুরী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আমলে অনেক বদনাম রটানো হয়েছিল আমার নামে। এরশাদ সাহেব জেল থেকে বের হওয়ার পর আমার বাসায় আসেন। কিন্তু আমি শুরুতে ওনাকে আমার বাসায় আসতে দিইনি। পরে উনি টেলিফোনে আমাকে বলেন, তোমার ছেলে যদি দরজায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকত তাহলে কি ফিরিয়ে দিতে? আমি তো জেল থেকে সালমান শাহর মৃত্যুর খবর পেলাম। এরপর আমার স্বামী গিয়ে দরজা খুলে দিল। এভাবে আমাদের বাসায় ওনার আসা-যাওয়া শুরু হয়। এরশাদ সাহেব আমাকে তার মায়ের সঙ্গে তুলনা করতেন। আমার আচরণের সঙ্গে নাকি তিনি তার মায়ের মিল খুঁজে পান।
তিনি আরো বলেন, প্রায় সব জায়গাতেই সালমান শাহর ভক্ত আছে। ডিজিএফআই, এনএসআইতেও আছে। ডিজিএফআই থেকে আমাদের একটা সময় বলা হলো, যদি এরশাদ সাহেব আপনাদের বাসায় যাতায়াত করে, তাহলে এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের আলাদা একটা নজর থাকতে আপনাদের ওপরে। এতে করে আপনাদের জীবনের ঝুঁকি কমে যাবে। ঠিক এ কারণেই এরশাদ সাহেব প্রায় আমাদের বাসায় আসতেন। আমার সঙ্গে তার কোনো খারাপ সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু বিষয়টা ভিন্নভাবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। উনি ভীষণ ভালো একজন মানুষ ছিলেন, আমাকে সব সময় তার মায়ের সঙ্গেই তুলনা করতেন তিনি।