বিনোদন ডেস্ক : ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। ইদানিং কাজের পরিধি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় সরব থাকেন মৌসুমী। সম্প্রতি আরেক অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন মৌসুমী।
সাদিয়া আয়মানের মতো তার সঙ্গেও ঘটে যায় একটি ঘটনা। সেই প্রেক্ষিত ধরেই নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ফেসবুকে। পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, গভীর রাতে শাড়ি চেঞ্জের সময় একজন রুমে ঢুকে পড়ে।
মৌসুমী হামিদের ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘শুটিং এ একটা ঘটনা শেয়ার করি, প্রায় ৩ বছর আগের কথা পুবাইল শুটিং করছি। বেশ রাত হয়েছে কিন্তু অনেক কাজ বাকি। সাধারণত আমরা যখন শুটিং করি বিশেষ করে আউটডোর, তখন কাজের চাপ থাকে বেশি এবং শুটিং লোকেশন এবং মেকাপ রুম বা চেঞ্জ রুম বেশ দূরে হয়। বারবার দৌড়াদৌড়ি করে কাপড় পাল্টাতে বেশ কষ্ট হয় এবং সময় ও বেশি লাগে। রাত ১২.৩০ প্রায়। আমি যেখানে শুটিং করছিলাম তার পাশেই একটা মাটির ঘর ছিল যে ঘরে লাইটের কিছু জিনিস পত্র রাখা ছিল।
পরিচালক আমাকে খুব করে অনুরোধ করলেন বারবার মেকাপ রুমে যেয়ে চেঞ্জ করতে যেই সময় লাগছে সেই সময়টাও নেই, উনি বললেন আমি যদি অনুমতি দেই উনি আমার কাপড়ের ব্যাগটা ঐ মাটির ঘরে আনার ব্যবস্থা করবেন ওখানেই চেঞ্জ করতে পারব কিনা। আমি বললাম ঠিক আছে। যদিও সেই ঘরটা মোটেও আরামদায়ক বা সেইফ নয়। তার ওপর দেখি ছিটকানি ও নাই দরজায়। আমি বললাম তাহলে কীভাবে হবে?
তখন ক্যামেরায় যিনি ছিলেন উনাকে আমি মামা ডাকতাম উনি বললেন মামু তুমি টেনশন নিও না আমি আছি বাইরে পাহারা দিচ্ছি। আমি ওনার কথা বিশ্বাস করে ঐ মাটির ঘরে ঢুকি। সব জানলা বন্ধ করে দেই এবং দরজা চাপিয়ে দেই। আমি নিজেও শুনতে পাচ্ছিলাম ওনারা বাইরেই আছে কথাবার্তা বলছে। পরিচালক তখন সেটে বা অন্য কোথাও।
শাড়িটা পরা শুরু করি নাই তখনো। কি যেন মনে করে শাড়িটার ভাঁজ খুলে আমি পুরো শাড়িটা ওড়নার মত কাঁধের উপর রেখে দেই এবং ঠিক তখনি লাইটের একটা ছেলে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি ‘এই চেঞ্জ করি’ খুবি অস্বস্তিকর অবস্থা। ছেলেটা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে বের হয়ে গেল। সরি আপু আমি জানতাম না আপনি ছিলেন।
তখন প্রচণ্ড রাগ হলো মামার ওপর। চিৎকার দিলাম একটা, আমি শুধুমাত্র সহযোগিতা করার জন্য এমন একটা জায়গায় কাপড় পাল্টাতে রাজি হলাম কারণ আমাকে কথা দেওয়া হয়েছিল বাহিরে একজন দায়িত্ব নিয়ে পাহারা দিবে। কিন্তু ছেলেটা উঠান পার হয়ে ঘরে ঢুকে গেল কেউ ওরে বলল না যে ঘরে আমি আছি।
আমি যখন ঘরের ভিতর থেকেই চিৎকার করছি ইউনিটের উপর তাদের দায়িত্বহীনতা নিয়ে তখন সেই মামা (চিত্রগ্রাহক) বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন ‘আরে বাদ দে তো ও তো ঢুকেই বের হইয়া আসছে এইটুকু সময় আর কি দেখছে।’ ঐ ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো ‘ঐ তুই কিছু দেখছোস?’ বলে অসভ্যর মত হাসতে লাগলো। ছেলেটা কোন উত্তর দিল না।
আমার শরীরের যতখানি অংশ দেখা গেছে সেটা তেমন কোন বিষয়ই না আমি নাকি ওভার রিয়্যাক্ট করছি। এইকথা শোনার পর আমি বের হয়ে জীবনের সর্বোচ্চ রিয়্যাক্ট সেদিন করেছি সেটে। আমার কলিগের কাছে আমার ‘সম্ভ্রম’ এতটা তুচ্ছ? পরিবার ছেড়ে দিনের বেশিরভাগ সময় যাদের সাথে কাজ করি তারা এইভাবে তাদের দায়িত্বহীনতা জাস্টিফাই করবে?
সেটের বেশিরভাগ মানুষের কাছে মনে হয়েছে, দায়িত্ব নেওয়ার পরও নির্লজ্জের মত ওনার ঐ খ্যাঁক খ্যাঁক হাসায় আমি যে রিঅ্যাকশন দিয়েছি সেটা বেশি বেশি ছিল। সবাই তার অ্যাকশন কেই জাস্টিফাই করে গেল। কিন্তু পরিচালক আমার চিৎকার শুনে সেখানে এসে পুরো ঘটনা শুনে ঐ চিত্রগ্রাহকে সেট থেকে বের করে দেন। এবং উনি নিজেও ভুল বুঝতে পেরে সরি বলেন।
আমি পুরো ঘটনা ওনাকে বলে ওনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘তোমার পরিবারের কোন মেয়ে এমন অবস্থায় পড়লে দায়িত্বরত মানুষটা দায়িত্ব পালন না করে উল্টা যদি এমন করে রসায় রসায় হাসত, তারপর প্রচণ্ড অপমান বোধে যদি তোমার নিজের মেয়ে বা বোন বা তোমার বউ যদি রিয়্যাক্ট করত তুমি কি বলতা তোমার মেয়েকে, মামনি ওভার রিয়্যাক্ট করতেছো কেন? আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম সেটে ঐদিন ঐ চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বহীনতা ও অসভ্যতা কে যারা জাস্টিফাই করছিলেন তাদের ওপর।
এবং আবারো অবাক হয়েছি যারা আয়মান সাদিয়ার ভিডিও দেখে পোস্ট করেছেন ‘ভিডিওতে তো তেমন কিছুই দেখা যায় নাই’ তাদের ওপর। যিনি ভিডিওটি পোস্ট করেছেন তার জন্যে আমার কিছুই বলার নাই। উনি ভিডিও ডিলিটও করেছেন। আমি সাধুবাদ জানাই কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার তো হয়ে গেছে। ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে এবং মানুষের ট্রলিং। কারণ আমি ওনাকে যতটুকু চিনি উনি একদমই ক্ষতিকারক মানুষ নন।
বেশ বন্ধু সুলভ হাস্যোজ্জ্বল এবং প্রচণ্ড পরোপকারী মানুষ। আমি বিশ্বাস করতে চাই না উনি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এমন কাজটা করেছেন। লুকিয়ে বা গোপন ক্যামেরায় তো নয়ই। বরং উনি অনুতপ্তই হয়েছেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু যারা বলছেন ‘এই ভিডিওতে তেমন কিছুই দেখা যায় নাই তাদের জন্য প্রশ্ন আছে, এই তেমন কিছুই না দেখা ভিডিওটির কারণে যে পরিমাণ নোংরা, অসভ্যতা, বুলিং, বডি সেইম, রেইপ থ্রেট মেয়েটাকে সহ্য করতে হয়েছে বা এখনো হচ্ছে সেটা যদি আপনার পরিবারের কোন মেয়েকে সহ্য করতে হয়, আপনি সেটা দেখার জন্য প্রস্তুত আছেন তো?’