বিনোদন ডেস্ক : ঢালিউডের এক সময়ের আলোচিত ও সমালোচিত মডেল, চিত্রনায়িকা নাজনীন অাক্তার হ্যাপী। বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও তার আচরণের কারণে সমাজে সমালোচিত হয়েছেন। তিনি মূলত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে নিয়ে নানান তর্ক, বিতর্কের কারণেই বেশি অালোচিত হয়েছেন। তবে এসব কথা হ্যাপীর জন্য এখন শুধুই ইতিহাস। নতুন কথা হলো দুনিয়াবি সব কিছু ছেড়ে এখন দ্বীনি শিক্ষা গ্রহনের জন্য মাদরাসার অধ্যায়ন করছনে এবং নিয়মিত তাবলিগে যাতায়াত করছেন। তাবলিগে যাওয়ার পর থেকে ইসলাম প্রসঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পথহারা মানুষদেরকে সুপথের ঠিকানা বাতলে দেয়াই এখন তার প্রধান কাজ মনে করছেন। তাই আজ তেমনি একটি বিষয় নিয়ে হ্যাপী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে দিয়েছেন। হ্যাপীর ফেসবুক থেকে সেই স্ট্যাটাসটি এমটিনিউজ২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘আমাকে একটা স্থানে একটা কাজের জন্য পাঠানো হলো (কাজটা খুবই সহজ ও ছোট)এবং আসতেই হলো,একটা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য(কতক্ষন থাকতে হবে জানি না)। এখানে এসে আমি সবকিছুতেই মুগ্ধ! এত সুন্দর লাগছে বলার বাইরে! কি নেই এখানে! মনে হচ্ছে জান্নাতে আছি।এত সুখ,এত আরাম।চাইলেই মেয়ে/ছেলে আমাকে সঙ্গ দিচ্ছে,ইচ্ছামত ক্ষমতা দেখাতে পারছি,যখন যেখানে খুশি ঘুরতে পারছি,অমৃত স্বাদের খাবার খাচ্ছি সঙ্গে কোমল/কঠিন পানীয় খাচ্ছি,থাকার জায়গাটা আরামদায়ক,প্রয়োজনের বেশি টাকা আছে,দামী বাহারী পোষাক, সেবা করার জন্য কাজের লোকও আছে,আরও কত কি!
কতদিন থাকবো কে জানে!সবকিছুই যখন পাচ্ছি তখন একটু মনের মত করে সব ভোগ করি,ভোগেই সুখ!আর কাজটা যেহেতু অল্প ঐটা যাওয়ার আগে আগে করে ফেলব তাই বেশি চিন্তারও দরকার নেই তাছাড়া এখনো তো সময় আছেই!
এভাবেই চলতে থাকলো.....
কিছু সময় পর আমার আরামের ঘুম ভেঙ্গে গেল কলিং বেলের আউয়াজে।উঠলাম,কাজের লোক দরজা খুলে দিল একজন ভেতরে এলো ।বললেন, আপনার জন্য একটা সংবাদ এনেছি।এই নিন ,এই খামের মধ্যে একটা কাগজে সব লেখা আছে।
এই চিঠিটা খুললাম,মনে মনে একটা ভয় কাজ করতে লাগলো।চিঠি পড়া শুরু করলাম,স্পষ্ট করে লেখা,",আপনার এখানে থাকার মেয়াদ শেষ,আপনাকে এই মুহূর্তেই এই স্থান ত্যাগ করতে হবে।এবং আপনার উপরে যে কাজ দেওয়া ছিল সেটা মালিকের কাছে গিয়ে ঠিকঠাকমত জবাব দিতে হবে।আপনাকে মালিকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজনকে পাঠানো হয়েছে,আপনি তার সাথে চলে আসুন"।
শরীর ঘেমে গিয়েছে,সারা শরীরে কাপুনি উঠে গেল মনে মনে বলতে লাগলাম, হায়! আমার এখন কি হবে? আমি তো আমাকে দেওয়া কাজ গুলো করি নি।কি জবাব দেব এখন? এসব ভেবে তো এখন লাভ নেই।আমাকে এখনই এই আরাম-আয়েশের জায়গা ছেড়ে যেতে হবে।আচ্ছা, আমি এই জায়গা ছাড়ার জন্য এত কষ্ট পাচ্ছি কেন!এর কোনকিছুই তো আমার নয়,শুধু আমার নামেই ছিল,হ্যা যতদিন ছিলাম নিজের ইচ্ছামতই ভোগ করেছি কিন্তু এখন তো আর সাথে নিতে পারছি না।
যিনি আমাকে নিতে এসেছে তার সাথে পৌছে গেলাম মালিকের কাছে।ভেতরে ভেতরে ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি।অতঃপর মালিকের নিকট গেলাম,তিনি আমার দিকে দৃষ্টিপাতও করলেন না,মালিক রেগে আছেন।আমার কাছে সব কাজের হিসাব চাওয়া হলো,আমি চুপ! কারণ আমার কিছু বলার নেই।আমি এখন বুঝতে পারছি আমি কি ভুল করেছি,যখন সময় ছিল বুঝিনি।আহা! একবার যদি শুরু থেকে শুরু করতে পারতাম তবে আজ এই কঠিন বিপদের সামনে পড়তে হতো না!
কল্পনা করুন ,আপনার সাথে এমন হলে কি করবেন?যিনি নিতে এসেছেন তিনি মৃত্যুর ফেরশতা মালাকুল মউত আর মালিক মহান আল্লাহ।
আমাদের কখন মৃত্যু হবে এটা আমরা জানি না।আমাদের দুনিয়া খুব কম সময়ের,যে কাজের জন্য এসেছি সেটা না করলে মালিকের কাছে কি বলবো? আল্লাহ কোরআন ও নবী-রাসূলের মাধ্যমে তো বলেই দিয়েছেন কি করতে হবে অথচ সেসব ভালভাবে মানা তো দূরের কথা সে সম্পর্কে বেখবর।হাদীস কোরআন নিয়ে তর্ক করি অথচ কিছুই জানি না।নিজেরাই আইন তৈরি করি অথচ আল্লাহর আইন জানা নেই। জানতেও চাই না,কতটা দূর্ভাগ্য আমাদের!
কোরআনে এরশাদ হয়েছে,"অবশ্যই যেসব লোক আমমার সাথে সাক্ষাত লাভের আশা রাখে না এবং পার্থিব জীবন নিয়ে উৎফুল্ল রয়েছে,তাতেই প্রশান্তি অনুভব করছে এবং যারা আমার নির্দেশন সম্পর্কে বেখবর,এমন লোকদের ঠিকানা হল আগুন সেসবের বদলা হিসাবে যা তারা অর্জন করেছিল।"(সূরা ইউনুস,আয়াত-৭,৮)
আরও আছে,"পার্থিব জীবন ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়।পরকালের আবাস পরহেজগারদের জন্য শ্রেষ্ঠতর।তোমরা কি বুঝ না?"(সূরা আল-আনতাম,আয়াত-৩২)
এবং আরও আছে যে,"যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতা করে এবং সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন।সে সেখানে চিরকাল থাকবে।তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।"(সূরা আন নিসা,আয়াত১৪)
হাসরের ময়দানে গিয়ে আমরা আমাদের কৃতকর্মের জন্য এত আফসোস করবো যা আমরা কল্পনাতেও আনতে পারব না।তখন হুশ হবে কিন্তু তাতে লাভ হবে না।হতাশ হয়ে বলবো- হায়!আমার তো সবই বৃথা হল!মনে হবে-
.
হায়!আমি যদি আমার ঈমান ঠিক করতাম!(আল্লাহর প্রতি,নবী রাসূলের প্রতি,তাকদীরের প্রতি,মৃত্যুর পর আগত অবস্থানের প্রতি)
.
হায়! আমি যদি ফরয নামায আদায় করতাম!(অন্তত)
.
হায়! আমি যদি কোরআন হাদীস মেনে চলতাম!
.
হায় ! আমি যদি পর্দা করতাম!(ছেলে/মেয়ে)
.
হায়!আমি যদি আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকতাম!
.
হায়! আমার চরিত্র যদি ঠিক করতাম!
.
হায়!মুসলমানদের হক যদি পালন করতাম!
.
হায়!আত্বীয়ের সাথে যদি ভাল সম্পর্ক রাখতাম!
.
হায়!একে অপরের মতবিরোধ যদি দূর করতাম!
.
হায়! যদি গীবত থেকে দূরে থাকতাম!
.
হায়! যদি পরনিন্দা ও অপবাদ না করতাম!
.
হায়! যদি আল্লাহর খুশির জন্য ও তার ওয়াদার উপর একীন রেখে আমল করতাম!
.
হায়! যদি অহংকার না করতাম!
.
হায়! যদি মুনাফেক(মিথ্যাবাদী,ওয়াদা ভঙ্গকারী,আমানতের খিয়ানতকারী) না হতাম!
.
হায়! যদি আল্লাহর রাস্তায় বের হতাম!
.
হায়! যদি মা-বাবার সাথে দূরব্যবহার না করতাম!
.
হায়! যদি আল্লাহর রাস্তায় বের হতাম!
.
হায় ! যদি অহেতুক কথা ও থেকে দূরে থাকতাম!
মূলত,উপরোক্ত বিষয়গুলোর কোনকিছু বাদ দেওয়া-ই হলো আল্লাহর অবাধ্য হওয়তা।সবকিছুই ঠিক করতে হবে আমাদের,সময় কিন্তু নেই!
সেদিন আমাদের জবান বন্ধ করে দেওয়া হবে,আমাদের প্রত্যেকটা অঙ্গ-প্রতাঙ্গ কথা বলবে,সাক্ষ্য দেবে।কিছু লুকাতে পারবো না।সব প্রকাশ পাবে এমনকি যেটা মনে মনেও ভাবি।সব কিছু ভিডিও হচ্ছে সেদিন এই ভিডিও সবাই দেখবে,অপমানীত হতে হবে,কোনকিছুতেই তা থেকে রেহায় পাওয়া যাবে না।অতঃপর জাহান্নামের মধ্যে অনন্তকাল থাকতে হব।যন্ত্রনায় মৃত্য কামনা করব,এক মৃত্য নয় অনেক মৃত্যু কিন্তু কোন ফায়দা হবে না।কোরআনে এরশাদ হয়েছে-"যেদিন প্রকাশ করে দেবে তাদের জিহবা তাদের হাত,ও তাদের পা যা তারা করতো; সেদিন আল্লাহ তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দেবেন এবং তারা জানতে পারবে যে,আল্লাহই সত্য,স্পষ্ট ব্যক্তকারী।।"(সূরা আন নুর,আয়াত-২৪)’
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই