বিনোদন ডেস্ক : একেকটা মুহূর্ত তৈরি হয়, যেটা ঘটতে পারে, তা-ই কেউ মাথায় আনে না। একেকটা কাজ কেউ করে ফেলে, যেটা সে করতে পারত, তা-ও কেউ ভাবতে পারে না।কিন্তু তার পরেও মুহূর্তগুলো তৈরি হয়। ঘটনাগুলো ঘটে। নীরজা ভানোতের মতো মানুষেরা বোধহয় সেই সুতোগুলোকেই এক জায়গায় টেনে আনেন। হয়ে ওঠেন ‘সবসে বাহাদুর বচ্চা’। রাম মাধবানি পরিচালিত ‘নীরজা’ ছবিতে যে কেউ নীরজা হতে পারতেন। তাতে এ ছবির কিছু যেত বা আসত না। কারণ, এটা নীরজা ভানোতের গল্প বলে।
মুম্বই বিমানবন্দরে উড়ানের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্যান অ্যাম ৭৩। করাচি হয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট। এদিকে করাচিতে বিমান অপহরণের প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে আবু নিদাল অর্গানাইজেশনের জঙ্গিরা। ওই প্যালেস্তিনীয় জঙ্গি সংগঠনের ছক, গ্রিসের সাইপ্রাসে বিমানটি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের কিছু সঙ্গীকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনা। কিন্তু ওই যে, ছকের বাইরেও কিছু ছক কষা থাকে। সেটা বোধহয় নিয়তির ছক। সেখানেই জঙ্গিদের পরিকল্পিত চিত্রনাট্যে প্রবেশ নীরজার।
নীরজা ঠিক কেমন ছিলেন? ২১ বছর বয়সে দেখাশোনা করে নীরজার সঙ্গে এক দোহা প্রবাসী ভারতীয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। সে বিয়ে টেকেনি। কারণ, গার্হস্থ্য হিংসা। পদে পদে বাপের বাড়ির শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে স্বামীর বক্রোক্তি। এবং অবশ্যই পণের কথা বলে যাওয়া। নীরজা স্বাধীনভাবে মডেলিং করতে চেয়েছিলেন। যে স্বাধীনচেতা হওয়ার মানসিকতা তিনি পেয়েছিলেন মা-বাবার কাছ থেকেই।
যারা তাকে শিখিয়েছিলেন, অন্যায় সহ্য না করতে। তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। সে পাঠ নিয়েছিলেন নীরজা। পরীক্ষায় পাশ করে প্যান অ্যামের মতো বিমানসংস্থায় ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট হয়েছিলেন নীরজা। এ ছবিতে নীরজার চরিত্রে সোনম কাপুর। নিঃসন্দেহে এ রকম একটা চরিত্র স্বপ্নের।
হয়তো এখনও পর্যন্ত ‘খুবসুরত’এর পর এটাই সোনমের সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনয়। কিন্তু কোথাও কোথাও আবার ঠিক মনও ভরাতে পারলেন না তিনি। মনে হল, নীরজা কি ওই পরিস্থিতিতে সত্যিই এ রকম করে কেঁদেছিলেন? মনে হল, নীরজা তো সোনমের মতো আচরণ না-ও করতে পারতেন! কয়েকটা বিষয় বাদ দিলে অবশ্য সোনম নীরজার কাছাকাছি।
বলা ভাল, নীরজার মতো মানুষদের কাছাকাছি। যারা ওই পরিস্থিতিতেও নিজে পালিয়ে বাঁচার কথা ভাবেন না। যারা চোখের পলক পড়ার মতো মৃত্যুর আসা-যাওয়া অনুভব করেও সাহস হারান না। হয়তো নীরজারা এমনই হন, যেখানে তাদের জীবনটা পর্দায় ফোটাতে গিয়ে অভিনেত্রীর কোথায় ত্রুটি হল, দেখতে ইচ্ছে করে না।
ছবির কয়েকটা ডিটেলিং বেশ চোখে পড়ার মতো। কখনও সেটা প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিদের কথোপকথনের মধ্যে। কখনও মুম্বইয়ে নীরজাদের ছোট্ট বাড়িটার মধ্যে। কখনও সংবাদপত্রের অফিসে টেলিপ্রিন্টারে টুকরো খবর সংগ্রহ করার মধ্যে। পরিচালককে সাধুবাদ দিতেই হচ্ছে। ছবির স্ক্রিনপ্লে সাইউইন কোয়াদ্রাসের। নীরজার চরিত্রের নির্যাস তিনি তৈরি করেছেন স্ক্রিনপ্লে জুড়ে।
মুম্বাইয়ের সঙ্গে করাচিকে সমান্তরালে রেখেছেন তিনি। যেখানে বিমানের পরিস্থিতি স্বামীর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো ছুঁয়ে যাচ্ছে। কখনও বাবার শেখানো ‘সবসে বাহাদুর বচ্চা’র মন্ত্রটা নীরজাকে বলছে, ‘ওঠো, পড়ে যাও, কিন্তু আবার ওঠো’। অতিরিক্ত বলিউডি মেলোড্রামাও সেই স্ক্রিনপ্লে’তে নেই। এ ক্ষেত্রে নীরজার মায়ের চরিত্রে শাবানা আজমি এবং বাবার চরিত্রে যোগেন্দ্র টিকুর কথা না বললেই নয়। কী শক্তিশালী পারফরম্যান্স! আর ততটাই কম্পোজ্ড। কাস্টিং টিমকেও ধন্যবাদ, এ রকম কাস্ট খুঁজে আনার জন্য। আর নেপথ্য সংগীত? সেটা প্রায় নেই! যার ফলে অন্য মাত্রা পেয়েছে এ ছবি।
‘আনন্দ’ ছবির সেই সংলাপটা মনে আছে তো, ‘জিন্দেগি লাম্বি নাহি বাড়ি হোনি চাহিয়ে বাবুমশাই...’? এটা ছিল নীরজা ভানোতের জীবনমন্ত্র। যে নীরজাই হয়তো সোনমের মুখে এই সংলাপটা বসাতে পারতেন, ‘আই
হেট টিয়ার্স’!
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন