বিনোদন ডেস্ক : সিনেমা হল কী, সেটা ভুলতে বসেছে রাজশাহীর নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা। নবপ্রজন্মের তরুণদের কাছে ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন সেখানকার এক সিনেমাপ্রেমী। পরিত্যক্ত লাকী সিনেমা হলটি ভাড়া নিয়ে ঈদুল ফিতরে তিনি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছেন শাকিব খান অভিনীত ছবি ‘বরবাদ’।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ইতিম আলী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। শৈশব থেকে সিনেমার প্রতি ভালোবাসা থেকে চাকরি নিয়েছিলেন সিনেমা হলে। পরে পেশা বদল করেন তিনি। তবে নেশা রয়ে যায়। তাই সেখানকার লাকী সিনেমা হল লিজ নিয়ে চালাতে শুরু করেন তিনি। ব্যত্যয় ঘটে কেবল করোনাকালে।
বছর পাঁচ আগে মারা যান লাকী হলের মালিক আবদুর রশিদ। তার ছেলে-মেয়েরা সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে সিনেমা হলের নিচের অংশে দোকান হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। ওপরে করেছেন গোডাউন। আবদুর রশিদের স্ত্রীকে অনুরোধ করে দালানটির দোতলা মাত্র ১০ দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে সিনেমা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন ইতিম আলী।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ওই এলাকায় বসে মেলা। মেলা ও মাজারকেন্দ্রিক দর্শনার্থীদের আনন্দে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে পরিত্যক্ত লাকী হল দশ দিনের জন্য ভাড়া করেন ইতিম আলী। জাগো নিউজকে তিনি জানান, হলটি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে গোডাউন হিসেবে। দশ দিনের জন্য ওই গোডাউনকে দুভাগে ভাগ করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির দর্শকদের বসার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। সেখানে ২শ থেকে ২৫০ জন দর্শক একত্রে বসে সিনেমা দেখতে পারে। ১০ দিনের জন্য ভাড়া দিতে হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
ইতিম আলী বলেন, ‘আমি এলাকার সন্তান। আগে সিনেমা হলে চাকরি করতাম। সেই থেকে সিনেমার প্রতি ভালোবাসা। সিনেমা দেখার ঐতিহ্য ধরে রাখতে লাকী সিনেমা হলের মালিকের স্ত্রী মিনু বেগমের কাছ থেকে এবার গোডাউন ভাড়া নিয়ে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা করেছি। মন্ত্রণালয়, পরিচালক, প্রযোজক ও পরিচালক সমিতি এবং রাজশাহী জেলা প্রশাসকের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে।’
লাকী সিনেমা হল ভাড়া নিয়ে চালানো হচ্ছে শাকিব খানের নতুন সিনেমা ‘বরবাদ’। ঈদের দিন থেকে জনপ্রতি ১শ ২০ টাকায় টিকিট কেটে সিনেমা দেখছেন দর্শকরা। সরাসরি ঢাকা থেকে সার্ভারের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে সিনেমা। বেলা সাড়ে ১২ থেকে শুরু করে প্রতিদিন চলছে ৪টি করে শো। এতে দর্শকদের বেশ সাড়াও মিলছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
গত সোমবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে লাকী সিনেমা হল পরিদর্শন করে দেখা যায়, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেক দর্শনার্থী সেখানে ভিড় করছেন। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১২টা, দুপুর ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা, রাত ৯টা ও ১২টায় শো চলছে। হল চালু থাকা অবস্থায় নতুন সিনেমাকে কেন্দ্র করে আগে বাজার সড়কের মোড়ে লাগানো হতো পোস্টার, করা হতো মাইকিং। মৌসুমী এ হলের জন্যও একই ধারায় পোস্টার সাঁটা হয়েছে, করা হয়েছে মাইকিং। বাঘা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, সিনেমা হল চালানোর ব্যাপারটা জানতে পেরে তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি।
বাঘায় এখন আর কোনো সিনেমা হল নেই। উপজেলা সদরে লাকী, নারায়ণপুর বাজারে মনিকা ও আড়ানী বাজারে শিমুল নামে ৩টি সিনেমা হল ছিল। সেসব এখন বসতবাড়ি, গোডাউন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করছেন মালিকেরা। এ অবস্থায় পরিত্যক্ত লাকী ভাড়া নিয়ে মৌসুমী হল চালানোয় সাধুবাদ কুড়াচ্ছেন ইতিম আলী।