সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:৪৩:৪৭

বলাকা সিনেমা হলে গিয়ে পাওয়া সেই লিফলেটেই আসলাম হয়ে উঠেন ঢাকাই সিনেমার ‘মান্না’

বলাকা সিনেমা হলে গিয়ে পাওয়া সেই লিফলেটেই আসলাম হয়ে উঠেন ঢাকাই সিনেমার ‘মান্না’

বিনোদন ডেস্ক : আজ অভিনেতা আসলাম তালুকদার মান্নার জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতীর কৈতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চলচ্চিত্রের দুর্দিনে অসংখ্য সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন মান্না। দুই যুগেরও বেশি সময় বাংলা সিনেমায় দাপিয়ে বেড়ানো এই নায়ককে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির মানুষ এখনো শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন মান্না। তার আসল নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার। তবে সিনেমায় এসে তিনি নাম বদলে মান্না রাখেন। ধীরে ধীরে ঢাকাই সিনেমার যুবরাজ হয়ে ওঠেন তিনি।

টাঙ্গাইলের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে আসলাম চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। এখানে পড়াকালীন একদিন বলাকা সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যান। গিয়ে সেখানে দেখতে পান একটি লিফলেট।

যাতে লেখা, এফডিসি থেকে নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছে। আসলাম সেই আয়োজনে নাম নিবন্ধন করে অংশ নেন এবং বিচারকদের মন জয় করে টিকেও যান। তখন নিজের নাম বদল করে রাখেন মান্না। তখন থেকেই এক নতুন গল্প শুরু।
যদিও সিনেমার কাজ পেতে মান্নাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল।

পরিচালক-প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। এফডিসির এগলি-ওগলিতে পড়ে থাকতেন। অবশেষে সুযোগ আসে। মান্না অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘তওবা’; কিন্তু প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘পাগলী’। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ সিনেমার মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন মান্না।

কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দাঙ্গা’ ও ‘ত্রাস’ সিনেমা দিয়ে মান্না হয়ে ওঠেন পরিচালক-প্রযোজকদের নির্ভরযোগ্য নাম। মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘অন্ধ প্রেম’, মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দেশদ্রোহী’— ছবিগুলো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মান্নার অবস্থান শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন মান্না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দাঙ্গা, কাসেম মালার প্রেম, আম্মাজান, শান্ত কেন মাস্তান, কষ্ট, লাল বাদশা, বীর সৈনিক, অবুঝ শিশু, সাজঘর, উত্তরের খেপ, কাবুলিওয়ালা ইত্যাদি।

সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি মান্না প্রযোজনাও করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে তিনি লুটতরাজ, স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, পিতা-মাতার আমানতসহ আটটি সিনেমা প্রযোজনা করেছিলেন। যার সব কয়টি সিনেমাই সুপারহিট হয়।

২০০৩ সালে ‘বীর সৈনিক’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে মান্না জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি তিনবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ও পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন।

২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন মান্না। তার মৃত্যুতে পুরো সিনেমা অঙ্গনে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। মান্নাকে হারানোর ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো দর্শকরা তার অভাব গভীরভাবে অনুভব করেন। এ ছাড়া বর্তমান সময়ের অধিকাংশ নায়ক তাকে আইডল মনে করেন। বাংলা চলচ্চিত্র যত দিন থাকবে, তত দিন নায়ক মান্নার সিনেমা দর্শকের মন কেড়ে নেবে। তার নামটি থাকবে স্মরণীয় হয়ে। অভিনয়, অ্যাকশন, সংলাপ বলার ধরন— সব কিছু মিলেই একটা স্বতন্ত্র স্টাইল দাঁড় করেছিলেন মান্না। তার অভিনীত এমন কিছু সিনেমা আছে, যার জন্য মান্না চিরদিন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে মহানায়ক হয়ে থাকবেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে