বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০১৬, ০৭:৪৩:৪৩

বাংলাদেশের খেলা যত দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি : অমিতাভ বচ্চন

বাংলাদেশের খেলা যত দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি : অমিতাভ বচ্চন

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়াদিল্লি : তিনি কোনো দিন বাংলাদেশে যাননি। কিন্তু টেলিভিশনে বাংলাদেশের ক্রিকেট থাকলে হাঁ করে দেখেন। ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চন মনে করেন, এভাবে খেলতে থাকলে বাংলাদেশ একদিন বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করবে।

তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসানদের জন্য আরও একটা খবর, আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের খেলা অমিতাভ বচ্চন কিন্তু আগ্রহ নিয়ে দেখবেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল।’

অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর পরিচালনায় ও সুজিত সরকারের প্রযোজনায় পিংক সিনেমার শুটিংয়ের জন্য অমিতাভ এখন দিল্লিতে। মজার কথা, দিল্লির যে এলাকায় তার বাবা কবি হরিবংশরাই বচ্চনবাড়ি করেছিলেন, এখনো দিল্লি এলে যে বাড়ি অমিতাভের ঠিকানা, পিংক-এর শুটিং হচ্ছে সেই পাড়াতেই। সেখানেই তাঁর ভ্যানিটিতে বসে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা শিল্পী ও ভারতীয় বিনোদন জগতের ‘ভীষ্ম পিতামহ’ বললেন, ‘বাংলাদেশকে যত দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি। কী খেলছে ছেলেগুলো! কী প্যাশন! আহা, চোখ জুড়িয়ে যায়।’

এই ‘প্যাশন’ই অমিতাভকে মোহিত করে রেখেছে। বললেন, ‘দেশকে ভালো না বাসলে এই প্যাশন বোধ হয় আসতে পারে না। ঢাকায় এশিয়া কাপে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে ওই ছেলেগুলো যখন হারাচ্ছিল, আমি ওদের চোখমুখগুলো অবাক হয়ে দেখছিলাম। যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আর কিছু নেই! বাংলাদেশের জয়ই যেন একমাত্র সত্য, বাকি সব মিথ্যা। মনে হচ্ছিল, জেতা ছাড়া ওদের আর কোনো লক্ষ্য নেই। যেন এই খেলার ওপরই নির্ভর করছে ১৬ কোটি মানুষের বাঁচা-মরা। এই প্যাশন আমি বহুদিন কোনো দেশের ১১ জনের চোখে-মুখে দেখিনি।’

কী করে এই প্যাশন আসে? অমিতাভ মনে করেন, দেশপ্রেম। দেশকে ভালোবাসা, দেশের জন্য কিছু করার অদম্য তাগিদ এবং এর পাশাপাশি নিজেদের প্রমাণ করার উদগ্র বাসনা থেকেই এই প্যাশনের জন্ম। ভারতীয় সিনেমার সর্বকালের অন্যতম সুপারস্টারের ব্যাখ্যায়, ‘রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের পর বাংলাদেশ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। দেশকে সব দিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক দুরন্ত বাসনা সবার মধ্যে রয়েছে। এই তো কিছুদিন আগে টিভিতে দেখছিলাম, কোনো একটা ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টে একটা মেয়ে ফার্স্ট হয়েছে। ভিকট্রি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গলায় সোনার মেডেল। বাংলাদেশের পতাকা ধীরে ধীরে উঠছে। জাতীয় সংগীত বাজছে। আর অঝোরে কেঁদে চলেছে মেয়েটা (মাবিয়া আক্তার)! দেশকে ভালো না বাসলে এটা হয় না। আমি হলফ করে বলতে পারি, এই দৃশ্যটা বাংলাদেশে হাজার হাজার ওই রকম মেয়ের জন্ম দেবে।’

ঠিক এ রকমই মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল বা সাকিব আল হাসানরা বাংলাদেশে আগামী দিনে ঝাঁকে ঝাঁকে বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের জন্ম দেবে বলে অমিতাভের বিশ্বাস। সাকিবকে তিনি আগে দেখেছেন। আইপিএলে। ‘দারুণ স্পিনার এবং ফাটাফাটি ব্যাট। ওয়ান ডে-তে যেকোনো টিমে চোখ বুজে ঢুকে যাবে। তামিম ইকবাল। কী ব্যাটটাই না করছে! ব্যাটিংয়ের সময় ওর চোখমুখ দেখো। বোলার নয়, নজর হাতে ধরা বলের দিকে। কী কম্পোজড! মাশরাফি। ওই তো ক্যাপ্টেন? তাই না? কীভাবে দলটাকে চাগিয়ে রেখেছে দেখেছ? আর ওই ছেলেটা? রোগা লিকলিকে বাঁ হাতি পেসারটা? হ্যাঁ হ্যাঁ মুস্তাফিজুর। মুস্তাফিজুর রহমান। আহা! চোখ জুড়িয়ে যায় ওর বোলিং দেখে। কী ফোকাসড ছেলেটা! কী চমত্কার লেংথ মেনটেন করে চলেছে। আমার তো পুরোনো দিনের ওয়াসিম আকরামকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সবার নাম জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, এই টিমটা কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত যাবে।’

বাংলাদেশের ক্রিকেট অমিতাভ বচ্চনের নজর কেড়েছে। এই দেশটায় তিনি কোনো দিন যাননি। বাংলাদেশের কোনো সিনেমাও তিনি দেখেননি। কারণ, ‘ওই বাংলার সিনেমা এ দেশে আসে না। আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালেও সেভাবে এসেছে বলে মনে হয় না। তাই দেখা হয়নি। তবে যেভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট সবাইকে চমকে দিয়েছে, কে জানে কোনো একদিন এ দেশের সিনেমাও চমকে দেবে কি না?’ তবে এই দেশটায় তিনি আসতে চান।

বললেন, ‘সুন্দরবনে যেতে চাই। আর ওই পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল থাকা জায়গাটা...?’
‘চিটাগং? মানে চট্টগ্রাম?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ। চিটাগং। শুনেছি অপূর্ব জায়গা।’

চৈত্র মাসের শুরু। গুলমোহর পার্কে পাতা ঝরছে ঝরঝর ঝরঝর। ভ্যানিটির বাইরে কয়েক শ মানুষের ভিড়। এখনো এই মানুষটাকে ঘিরে আট থেকে আশির মুগ্ধতা। সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের জন্য এই এলাকায় প্লট দিয়েছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ‘মধুশালা’র রচয়িতা হরিবংশরাই বচ্চন সেই সুবাদেই জমি পেয়েছিলেন। সেই জমিতে গড়ে উঠেছিল বচ্চন পরিবারের প্রথম বাড়ি ‘সোপান’, আশির দশকের গোড়ায়। সেই পাড়ার রাস্তায় ঝরা পাতা মাড়িয়ে এই প্রথম অমিতাভ বচ্চন সিনেমার শুটিংয়ে নামলেন। ঠান্ডা ভ্যানিটির দরজা খুলে রাস্তায় নামার আগে বললেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এই টুর্নামেন্টে আমার অনেক শুভেচ্ছা রইল। আমি কিন্তু ওদের খেলা চান্স পেলেই দেখব।’ -প্রথম আলো
১৬ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে