বিনোদন ডেস্ক : বলিউডে সম্প্রতি আলোচিত ইস্যু হচ্ছে ‘বালিকা বধূ’খ্যাত অভিনেত্রী প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু। এ নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। তার মৃত্যুটি স্বাভাবিক অত্মহত্যা নয় বলেই দাবী করছেন অনেকে।
কারো কারো মতে পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড এটি। আর এই হত্যার দায় গিয়ে পড়ছে তারই প্রেমিক রাহুল রাজ সিংহর দিকে। আর রাহুলও এ ঘটনার পর থেকে দিয়েছিলেন গা ঢাকা। তবে রাহুল স্বেচ্ছায় থানায় এসে নিজেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। সেখানেই তিনি পুলিশের জেরার মুখে দিচ্ছেন বয়ান।
রাহুল পুলিশকে জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটে ঢুকেই তার চোখে পড়েছিল প্রেমিকার ঝুলন্ত দেহ। গলায় ফাঁস লাগানো দেহটি নিষ্প্রাণ কি না, বুঝতেই পারেননি।
গতকাল মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রত্যুষাকে মৃত ঘোষণা করার পরে হাসপাতালের ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি রাহুলকে। তবে, আজ তিনি নিজেই বাঙ্গুর নগর থানায় গিয়ে বয়ান দেন।
রাহুল জানান, তিনি প্রত্যুষাকে ওই অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ‘ভয় পেয়ে’ পুলিশে খবর দেননি! হাসপাতাল থেকেই থানায় যোগাযোগ করা হয়। প্রযোজনা সংস্থার মালিক রাহুলকে দফায় দফায় জেরা করছে পুলিশ।
পুলিশকে দেওয়া রাহুলের বয়ান বলে একটি ‘বিবৃতি’ প্রকাশ করেছে একটি ওয়েবসাইট। তাতে লেখা, ‘আমরা দুই কামরার ফ্ল্যাটে থাকতাম। একটি চাবি প্রত্যুষার ও অন্যটি আমার কাছে থাকত। বেডরুমে ঢুকেই দেখি প্রত্যুষার দেহ সিলিং থেকে ঝুলছে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। প্রতিবেশীদের ডেকে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ভেবেছিলাম, ও বেঁচে আছে। কিন্তু ততক্ষণে ও মারা গিয়েছে। হাসপাতাল থেকে ওকে মৃত ঘোষণা করার পরেই প্রত্যুষার বাড়িতে খবর দিই’।
একাধিক সংবাদপত্রের দাবি, গতকাল রাহুলের সঙ্গে একটি শপিং মলে গিয়েছিলেন প্রত্যুষা। সেখানে দু’জনের কথাকাটাকাটি হয়। সকলের সামনেই প্রত্যুষাকে চড় মারেন রাহুল। মার খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন প্রত্যুষা। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়। সূত্রের খবর, রাহুল তাদের মেয়েকে নির্যাতন করতেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন প্রত্যুষার বাবা-মা। মৃতার মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন বলে দাবি করেছেন ‘বিগ বস’এ প্রত্যুষার সঙ্গী কাম্য পঞ্জাবীও।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রত্যুষা আত্মঘাতী হয়েছেন। দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। গলায় পাওয়া গিয়েছে ফাঁসের দাগও। ময়নাতদন্তের পর ওশিয়ারা শ্মশানে শেষকৃত্য হয়েছে প্রত্যুষার। প্রসঙ্গত, মৃত প্রত্যুষার সিঁথিতে সিঁদুর দেখেছেন বলে দাবি করেছেন অভিনেত্রী ডলি বিন্দ্রা। যদিও প্রত্যুষার এক আত্মীয়ার দাবি, ওটা পুজোর টিকা।
প্রত্যুষার আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ হিসাবে উঠে আসছে নানা ইঙ্গিত। যার প্রধান ভিত্তি অভিনেত্রীর শেষ হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাস এবং ইনস্টাগ্রামে করা মন্তব্য। সেগুলি থেকে অনুমান করা হচ্ছে, রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতাই হয়তো টিভি সিরিয়ালের ‘বালিকা বধূ’কে ঠেলে দিয়েছিল অবসাদের মধ্যে।
হোয়াট্সঅ্যাপে অভিনেত্রীর শেষ ‘আপডেট’ ছিল, ‘মরকে ভি মুহ্ না তুঝসে মোড়না’ (মরে গেলেও তোমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেব না)। ইনস্টাগ্রামে তাঁর পোস্ট করা একটি উদ্ধৃতি ‘প্রত্যেক শক্ত এবং স্বাধীন মহিলার ভিতরে একটি ভাঙাচোরা বাচ্চা মেয়ে থাকে। সে কারও উপরে নির্ভরশীল না-হতে শিখতে চায়’। সঙ্গে প্রত্যুষার মন্তব্য, ‘এটাই বাস্তব’। ‘...তুমি জানো না কে তোমার জন্য প্রার্থনা করছে, আর কে তোমার সঙ্গে খেলছে’— এই উদ্ধৃতি-সহ এক একাকী মহিলার ছবি পোস্ট করেছিলেন প্রত্যুষা। সঙ্গে মন্তব্য, ‘দুঃখজনক। সত্যিও’।
এই সব মন্তব্যের উদ্দিষ্ট কি রাহুল? প্রত্যুষার ঘনিষ্ঠদের দাবি, রাহুল নাকি অন্য কোনও মহিলাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। অন্য একটি সূত্রের খবর, রাহুলের প্রাক্তন প্রেমিকা সালোনি শর্মা নাকি মাঝেমধ্যেই ফ্ল্যাটে গিয়ে প্রত্যুষাকে অপমান করতেন। একবার প্রত্যুষা তার গায়ে হাত তুললে তিনি পুলিশ ডাকেন। সালোনি আজ বলেন, ‘এই মৃত্যুর সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। কেন আমাকে জড়ানো হচ্ছে?’
রাহুল অবশ্য পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তিনি নির্দোষ। আজ ইনস্টাগ্রামে প্রত্যুষা এবং তার যুগল ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘অনেকে ভাবছেন, ওর আত্মহত্যার জন্য আমি দায়ী। লোকে ওর মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করবে, এমন দিন দেখব বলেই কি ওর সবকিছু হয়ে উঠেছিলাম’!
৩ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন