বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৫৪:১০

যে কারণে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হয়েছে 'মালিক' ছবিটি

যে কারণে পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হয়েছে 'মালিক' ছবিটি

বিনোদন ডেস্ক : পাকিস্তানে এর আগে ছবি নিষিদ্ধ করা হয়েছে একমাত্র প্রাদেশিক সেন্সরশিপ বোর্ডের নির্দেশক্রমে। এই প্রথম দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে কোনো ছবির প্রদর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করল।

মালিক ছবিটি ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হচ্ছিল। ছবিটির যারা বানিয়েছেন তারা বিস্মিত এবং বলছেন তারা জানেন না কেন ছবিটি নিষিদ্ধ করা হল।

কিন্তু সাংবাদিক নশীন আব্বাস বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে বলছেন, এই ছবিটি নিষিদ্ধ করার কারণে পাকিস্তানে বর্তমানে কী ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়।

কী আছে ছবিতে? : 'মালিক' দেশটির বিশেষ বাহিনীর এক কমান্ডোর কাহিনি যাকে ভাড়া করা হয়েছিল এক দুর্নীতিবাজ সামন্ত প্রভুকে রক্ষা করার জন্য, যে সামন্ত প্রভু পরে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠেন।

ছবিটি কার 'আঁতে ঘা দিয়েছে'? : অনেকের - তবে বিভিন্ন কারণে- বলছেন সংবাদদাতা। কেউ কেউ বলছেন এই ছবিতে মুখ্যমন্ত্রীর চরিত্র - যার নাম সাঈন- তার সঙ্গে খুবই মিল রয়েছে সিন্ধ প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকাকে বলেছেন চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করার কারণ এতে সাবেক একজন মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাচুর্যপ্রিয় ও দুর্নীতিপরায়ণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে।

সিন্ধের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা ও সংসদ সদস্য নাফিসা শা এক টুইটার বার্তায় বলেছেন ''মালিক একটি দুরভিসন্ধিমূলক ছবি এবং এটি পাকিস্তানকে বিভক্ত করবে ও জাতীয় ঐক্য নষ্ট করবে। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা, যারা এটির অর্থায়ন করেছে, এবং এমনকী যারা এটি দেখানোর ছাড়পত্র দিয়েছে তারা দেশপ্রেমিক নন''।

ছবিটিতে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে গভীর বিভক্তি তুলে ধরা হয়েছে, কেউ কেউ বলছেন এটা সেনাবাহিনীর প্রচারণার পর্যায়ে চলে গেছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন এতে বেসামরিক সরকারকে এমনভাবে দেখানো হয়েছে যেন তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ব্যাপারে আন্তরিক নন।

এছাড়াও অভিযোগ আনা হয়েছে যে ছবিটির একটি দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে তার দেহরক্ষী গুলি করেছে। এর সঙ্গে পাঞ্জাবের গর্ভনর সালমান তাসিরকে গুলি করার বাস্তব ঘটনার মিল রয়েছে।

এ পদক্ষেপ কীসের ইঙ্গিত? : সংবাদদাতা বলছেন ছবিটিতে রাজনীতিকদের এবং সামন্তপ্রভুদের যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা কর্তৃপক্ষকে ক্ষুব্ধ করেছে।

সামাজিক মাধ্যমে এই ছবি নিয়ে যে কড়া প্রতিক্রিয়া হয়েছে তার থেকে বোঝা যাচ্ছে দেশটিতে বেসামরিক প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সম্পর্ক নিয়ে যে ভিন্নমত আছে এই ছবি সেই বিতর্ককে আরো উস্কে দেবে।

পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে বিদেশে এটা কীভাবে দেখা হবে তা তাদের ভাবাচ্ছে।

কোনো কোনো দেশে হয়ত এটাকে বাড়াবাড়ি প্রতিক্রিয়া বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সংবাদদাতা বলছেন পাকিস্তানে কোন বিষয় বিতর্কিত হলে বা তা কারো স্বার্থে আঘাত করলে কর্তৃপক্ষের জন্য সেই ছবি নিষিদ্ধ করে দেয়াটাই সমস্যা বাড়তে না দেয়ার সহজ পথ।

তবে পাকিস্তানেই অনেকে বলছেন একটি চলচ্চিত্র যাই বলুক না কেন তা নিষিদ্ধ করা মানেই সেন্সরশিপ আরোপ করা।

পাকিস্তানে বাক্-স্বাধীনতা ইতিমধ্যেই চাপের মুখে। বহু সাংবাদিক, বিশ্লেষক এবং ভাষ্যকার মনে করেন ধর্ম ও সেনাবাহিনী জাতীয় অনেক বিষয় নিয়ে লেখালিখি করা যাবে না - এসব বিষয় 'সোজা কথায়' ছোঁয়া যাবে না, যার অর্থ হল একধরনের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের সংস্কৃতিতে বাস করা।-বিবিসি
২৮ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে