বিনোদন ডেস্ক : নায়িকা সংকট যেন কাটছেই না বাংলা চলচ্চিত্রে। মৌসুমী, শাবনূর, পপি অধ্যায়ের পর দীর্ঘদিনের নায়িকা সংকট কাটিয়ে ঢালিউড যখন অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহি,পরীমনিদের দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধছিলেন তখন তাদের অপেশাদার খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের জের টানতে হচ্ছে পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে।
দীর্ঘদিন ধরে অপু বিশ্বাস নিখোঁজ। হাতের পাঁচ চলচ্চিত্র ফেলে তিনি ডুব মেরেছেন আপন খেয়ালে। শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে মানসিক দ্বদ্বের জের ধরেই এমনটা ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু চলচ্চিত্রের স্বার্থে এমন অপেশাদার আচরণে অপু বিশ্বাসের উপর খেপেছেন নির্মাতারা।
অন্যদিকে, ঢালিউডের শীর্ষ নায়িকা খেতাবটি বুকে নিয়ে মাহিয়া মাহি সম্প্রতি হুট সিদ্ধান্তে বসে গেলেন বিয়ের পিঁড়িতে। এ নিয়ে ঘোর দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা। বিয়ের পর সিনেমা দুটিতে আদৌ তিনি অভিনয় করতে পারবেন কি না তা এখনো অনিশ্চিত। যার কিছুটা আঁচ পাওয়া যাচ্ছে মাহির কথায়, ‘অলরেডি ভাত রান্না শিখছি। যদি কেউ আমার ছবি পছন্দ না করে রান্নায় মনোযোগি হবো।’
সঙ্গে এও জানালেন, ‘কাজ কিছুটা কমিয়ে দেবো। সংসারটাও করতে হবে। বছরে দু’ একটা সিনেমা করবো। অবশ্যই বেছে বেছে কাজ করবো।’
মাহির বিয়ে নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢালিউডের জাঁদরেল অভিনেতা মিশা সওদাগর মন্তব্য করেছেন, ‘ফাজলামি বন্ধ করা উচিত। না হলে ইন্ডাস্ট্রি ফাইনালি বন্ধ হয়ে যাবে। একটা শিল্পী যখন তার অভিনয়ের জাদু দেখিয়ে বক্স অফিস হিট করে ইন্ডাস্ট্রির অপরিহার্য হয় তখন সে ইন্ডাস্ট্রির অংশ হয়ে যায়। সে তখন কোনো হুটহাট সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ তার দায়বদ্ধতা বেড়ে যায়। কিন্তু আজকালকার নায়ক-নায়িকাদের সিদ্ধান্ত ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দেখা নতুনদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময়ী নায়িকার হঠাৎ বিয়ের সংবাদে আমি হতবাক। এরা একটিবারও তাদের দায়বদ্ধতার কথা ভাবলো না। আমি এই প্রজন্মের এরকম হুটহাট সিদ্ধান্তকে কখনোই স্বাগতম জানাতে পারবো না। কারণ আমার পরিবার আমাকে আজকের এই মিশা সওদাগর বানায়নি। আমার নাম, আমার খ্যাতি, আমার প্রাচুর্য, আমার জাতীয় পুরস্কার- সব ইন্ডাস্ট্রি দিয়েছে। হুটহাট সিদ্ধান্তের পরিসমাপ্তি হোক।’
এদিকে, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস হাতে থাকা ছবিগুলো হলো- রাজনীতি, মাই ডার্লিং, লাভ ২০১৬, পাঙ্কু জামাই ও মা। কিছু ছবির কাজ প্রায় শেষের দিকে, আবার কিছু ছবির কাজ অর্ধেক হয়ে আটকে গেছে। কিন্তু অপুকে ছাড়া কিছুতেই ছবির কাজ শেষ করতে পারছেন না পরিচালকরা। যে নায়িকাকে নিয়ে কোটি টাকার বাজি ধরেছেন সেই নায়িকাই উধাও! প্রযোজকরা হা-হুতাশ করছেন।
অন্যদিকে ক্যারিয়ারের সম্ভাবনার চূড়োয় অবস্থান করে হিট নায়িকা তকমা নিয়ে মাহির হাতে রয়েছে দুটো সিনেমা। একটি ‘হারজিৎ’ আরেকটি ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’।
এ প্রসঙ্গে কথা হলো পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঙ্গে। উদ্ভুত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বাংলামেইলকে তিনি বললেন, ‘এমনিতেই তো নায়িকা সংকট আমাদের। এখন সংকটটা আরও বেড়ে গেলো। কারণ অপু বিশ্বাস ও মাহি দুজনের ইন্ডাস্ট্রির নির্ভরযোগ্য দুই নায়িকা। তবে মাহি বিয়ে হয়েছে। তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কিছু বলার নাই। বিয়ে করলেই যে সিনেমা কমে যায় তা কিন্তু না। বিয়ের পরও কিন্তু দিতি, চম্পা ও শাবানার কাজ করেছে। এটা নির্ভর করবে মাহির উপর। আর অপু বিশ্বাস তো শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করতো। তাকে ছাড়া কাজ করে না। সে হিসেবে বলা যায়, শাকিবের একজন নায়িকা কমে গেছে।’
এমন অবস্থায়, ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়মিত নায়িকা হিসেবে আছে পরীমনি ও ববি। তাদের উপর কতোটা আস্থা রাখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এ নির্মাতা অভিবাবক জানালেন, ‘পরীমনিকে নিয়ে আলোচনাই হয়েছে। কিন্তু তার কোন ছবি হিট করেনি। ববিও সেরকম। শাকিবের সঙ্গে দু’ একটা ছবি ছাড়া।’
বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই একজন নায়িকার ‘মৃত্যু’ হওয়া। দু’ একটা ব্যতিক্রম ছাড়া অতীত ইতিহাসও তাই বলে। তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা শাবনাজসহ অনেকেই বিয়ের পর ক্যারিয়ারে ‘দাড়ি’ টেনেছেন। নানা সংকটে ধুঁকতে থাকা ঢাকাই চলচ্চিত্রের সামনে তাই ঘোর অমানিশা.. বাংলামেইল
২৭ মে, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই