বিনোদন ডেস্ক : সম্প্রতি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সালমান খানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ভারতের আলোচিত সংগীতশিল্পী অরিজিৎ সিং। কিন্তু তিনি কেন ক্ষমা চাইলেন? কি হয়েছিল? এর কোন ব্যাখা তিনি তার সে স্ট্যাটাসে দেননি।
অরিচিতের ক্ষমা চাওয়ার পর থেকে এ নিয়ে বলিউডজুড়ে সৃষ্টি হয় দারুণ আলোচনা। কেন সালমান খান তার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন? এ নিয়ে বলিউড ভাইজান সালমান খানও কোন মুখ খুলেননি। যার ফলে এ বিষয়টি নিয়ে কৌতুহলের সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে।
এদিকে সালমান খানের সাথে কি হয়েছিল? এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলেছেন শিল্পী অরিজিৎ নিজেই। সম্প্রতি তিনি এবেলাতে একটি সাক্ষাৎকারে সে বিষয়ে বলেছেন। অরিজিতের সেই সাক্ষাৎকারটি এমটিনিউজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল।
প্রশ্ন: আপনি সালমান খানের কাছে খোলাখুলি ক্ষমা চেয়েছেন। আপনার ফ্যানেরা কিন্তু এটা ভালভাবে নেননি।
অরিজিৎ: আমি জানি আমার ফ্যানেরা কী চান। কিন্তু আমি যা করেছি, তার জন্য আমি অনুতপ্ত নই। যে গানটি ‘‘সুলতান’’ থেকে বাদ গিয়েছে, সেটি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে গান বাদ যাওয়াটাই আসল কারণ নয়।
প্রশ্ন: তাহলে?
অরিজিৎ: আমি কিন্তু গানটির সঙ্গে যুক্ত সকলকে বলেছিলাম, আমার সঙ্গে যেন এই গানটি রেকর্ড করা না হয়। কারণ সালমান খানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল নয়।
প্রশ্ন: ঠিক কী হয়েছিল আপনাদের মধ্যে?
অরিজিৎ: সেটা ছিল আমার প্রথম অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান। আমি ওই অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি ছিলাম না। কারণ আমার মেন্টক প্রীতমদার (সুরকার প্রীতম চক্রবর্তী) সঙ্গে একটি গানের এডিটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের সেই বিশেষ অ্যাওয়ার্ডটির অন্যতম জুরি ছিলেন মুকেশ ভট্টজি। তিনিই আমাকে অনুষ্ঠানে যেতে বলেন। আমার বলিউডে কেরিয়ার শুরুই হল ভট্টজিদের ‘‘আশিকি ২’’ দিয়ে। তাই আমি ওকে না বলতে পারিনি।
প্রশ্ন: তার পরে?
অরিজিৎ: আমি প্রীতমদার সঙ্গে ক্যাজুয়াল শার্ট এবং চপ্পল পরে কাজ করছিলাম। তাড়াহুড়োয় সেগুলো পরেই চলে যাই। কিন্তু আমার বিন্দুমাত্রও মনে হয়নি যে এই কারণে অনেকে মনে করবেন যে, আমি সমগ্র অনুষ্ঠানটিকেই অপমান করছি।
প্রশ্ন: অনুষ্ঠানে পৌঁছনোর পরে কী হল?
অরিজিৎ: আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম। অনুষ্ঠানে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমার নাম ঘোষণার পরে কেউ আমাকে ঠেলে তুলে দেয়। এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলে। আমি জানি ওইভাবে ঘুমিয়ে পড়া আমার উচিত হয়নি। কিন্তু কী-ই বা করার ছিল? আমি এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে চোখ লেগে আসছিল।
প্রশ্ন: কিন্তু সলমন এটাকে ব্যক্তিগতভাবে নিলেন কেন?
অরিজিৎ: আমি তখন স্টেজে উঠছি। সকলেই আমাকে ক্যাজুয়াল এবং চপ্পলে দেখছেন। স্টেজে সালমান খান তখন হাসছেন আর বলছেন, ‘‘তু হ্যায় উইনার?’’ স্টেজে ওঠার পরে উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কি না। নার্ভাস হয়ে আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, ‘‘আপ লোগো নে সুলা দিয়া’’ (আপনারা ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছেন)। এর পরেই অবশ্য জিভ কেটে নিই।
প্রশ্ন: এতেই সালমান রেগে যান?
অরিজিৎ: মনে হয়। আমি তো অন্য কোনও অপমানের কথা মনে করতে পারছি না। তবে এটা বলছি যে, ওই কথাটা আমার বলা উচিত হয়নি।
প্রশ্ন: ক্ষমা চেয়েছিলেন?
অরিজিৎ: উনি তখন আমার হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন। আমি ওঁর কানে কানে ‘‘সরি’’ বলি। তখন তার থেকে বেশি আর কিছু বলার ছিল না। আমি স্টেজ থেকে নেমে দেখি বসার জায়গা নেই। তাই হেঁটে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। সেই সময়ে সালমান খান বলেন, ‘‘এই ছেলেটিকে দেখুন। ও নিজের পুরস্কার নিল আর সোজা হাঁটা দিল।’’ আমি সত্যিই তার পরে ঘাবড়ে যাই।
প্রশ্ন: কী করলেন?
অরিজিৎ: সে রাতের ফ্লাইটেই আমি কলকাতায় আসি। গোটা রাস্তা ঘটনাটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে এসেছি। খুব খারাপ লাগছিল। কলকাতায় ফিরে সলমন স্যরকে টেক্সট করলাম। উনি বললেন, অত ক্যাজুয়ালি অনুষ্ঠানে আমার যাওয়া উচিত হয়নি। অনুষ্ঠানটি অপমান করা উচিত হয়নি। আমার তখন এটা ভেবে ভাল লেগেছিল যে, একজন সিনিয়র হিসেবে উনি আমাকে বকেছেন এবং রাগটা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখনও অসন্তুষ্ট হয়ে রয়েছেন, সেটা বুঝতে পারিনি।
প্রশ্ন: পরে কীভাবে বুঝলেন সেটা?
অরিজিৎ: মিট ব্রাদার্সে ‘‘কিক’’ ছবির জন্য একটা গান রেকর্ড করছিলাম। সেই সময়ে আমাকে বলা হয় যে, ‘ভাই’ গানটি ছবিতে রাখতে চান না। আমি বুঝেছিলাম, উনি এখনও চটে রয়েছেন। তার পরে ফের ক্ষমা চাইতে শুরু করি। আমি দেখা করে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলাম। পারিনি। আমি ওঁকে বলি আমি একজন নিউকামার হিসেবে ভুল করে ফেলেছি। তাই আমাকে যেন উনি ক্ষমা করে দেন। তার পরে এল ‘‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’’।
প্রশ্ন: সেখানেও তো আপনার গাওয়া একটা গান ছিল?
অরিজিৎ: আমি গাইনি। প্রীতমদাকে মিউজিকে সাহায্য করছিলাম। একটি গানের জন্য আমাকে নির্বাচন করা হয়। ‘ভাই’ তাতে বাধা দেন। প্রীতমদা তখন আমাকে বলেন যে, আমাকে দিয়ে এই ছবির কোনও গানই উনি গাওয়াবেন না কারণ পরে সেই গানটি ফেলে দিতে হতে পারে। আমি প্রীতমদার সঙ্গে ‘‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’’-এর সুর দেওয়ার কাজও বন্ধ করে দিই। তার পরে ফেল ক্ষমা চাই। আশা করি সময়ের সঙ্গে সবই ঠিক হয়ে যাবে। ৫ বছর, ১০ বছর...আমি পুরোটা সময়ের উপরেই ছেড়ে দিয়েছি।
প্রশ্ন: তার পরে?
অরিজিৎ: বিশাল দাদলানি যখন আমাকে ফোন করে বললেন যে ‘‘সুলতান’’-এর জন্য একটা গান গাইতে হবে, তখন আমি মুম্বাইয়ের বাইরে। আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি। ভেবেছিলাম সালমান স্যর আমাকে ক্ষমা করেছেন। তার পরে মুম্বই ফিরে রেকর্ড করি। গানটাও দুর্ধর্ষ। বিশাল আমাকে ফোন করে বলে যে, সালমান স্যরেরও গানটি বেশ পছন্দ হয়েছে। ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। ঠিক করে ফেলেছিলাম, ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পরে গানটি সালমান স্যরকে ডেডিকেট করব। ওঁর বাড়িতে যাব এবং ধন্যবাদ জানাব। তখন বিশাল দাদলানির থেকে একটি এসএমএস পাই। বলেন, ‘‘সুলতান’’-এ আমার গানটি রাখা যাবে না। সালমান স্যর আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু ওঁর ছবিতে আমি কোনও দিন গাইতে পারব না।’’
প্রশ্ন: ব্যাপারটায় তো সেখানেই দাঁড়ি ফেললে পারতেন?
অরিজিৎ: আমি যদি খারাপ গাইতাম, তাহলে সেটা বাদ দেওয়ার একটা যুক্তি থাকত। আমি বিশাল দাদলানির কাছে জানতে চাই যে, সালমান স্যরের সঙ্গে কথা বলব কি না। উনি বলেন, আমার কথা বলা উচিত। তবে তাতে এই গানটি নিয়ে সলমনের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসবে না। আমি এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। এর পরে নিতা অম্বানীজির ছেলের জন্মদিনে ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়। আমি বেরিয়ে গিয়েছিলাম। সালমান স্যর এসেছেন শুনে ফিরে যাই। এই সুযোগটা হারাতে চাইনি।
প্রশ্ন: আপনাকে এড়িয়ে গেলেন?
অরিজিৎ: না। কথা বলেছেন। আমি ফের ক্ষমা চাই। উনি বলেন, ‘‘ইট্স ওকে। সব ঠিক আছে।’’ কিন্তু শৈত্যটা আমি টের পেয়েছিলাম। ‘‘সুলতান’’-এর গানটা যাতে বাদ দেওয়া না হয়, তার জন্য আমি ওঁকে ফোন করেছিলাম, টেক্সটও করি। গানটা নিয়ে জোরদার খেটেছিলাম। সালমান স্যরের জন্য আমি গাইতে চাই।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে আপনার অবস্থা কী?
অরিজিৎ: আমি আহত। আমি যদি গানটা ভালভাবে গাইতে না-পারতাম, তাহলে ঠিক ছিল। কিন্তু এই গানটা সরিয়ে দেওয়ার কোনও যুক্তিই নেই। আমি তখন মুম্বইয়ে নেই। আমাকে জানানো হয় যে, গানটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি মুম্বইয়ে থাকলে সোজা ওঁর (সালমান) বাড়িতে যেতাম। কমন ফ্রেন্ডদের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা ছেড়ে সোজা ফেসবুকে লিখে দিই। আমি জানতাম, ওটা ভাইরাল হবে। একঘণ্টার মধ্যে সেটা হয়েছিল। তার ফল কী হতে পারে, সে সম্পর্কেও বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল ছিলাম।
প্রশ্ন: তাহলে? কোনও আফশোস নেই?
অরিজিৎ: না। একেবারেই নয়। ‘‘সুলতান’’-এ গান গাইতে চেয়েছিলাম, এই কথাটা বলতে আমার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। আমি জানি আমার ফেসবুক পোস্টের মর্ম কেউ না কেউ বুঝবেন। তবে তাতে কিছু যায়-আসে না। আমার কাছে গানটাই আসল কথা। এ-ও ঠিক যে, সালমান স্যরের সঙ্গে সম্পর্কটাও গুরুত্বপূর্ণ। একদিন আমাকে ক্ষমা করতেই হবে। আমি ওঁকে অপমান করতে চাইনি।
৩০ মে, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন