বিনোদন ডেস্ক :মডেল কন্যা সিনহা রাজের মন জয় করতে নানা ছলনার আশ্রয় নিয়েছিলেন অভিজিৎ অভি। দেশসেরা অভিনেত্রী বানানো থেকে শুরু করে নানা প্রলোভন দিয়েছিল অভি। শুধু তাই নয়, সিনহাকে পেতে ধর্মান্তরিতও হন। অভি গৃহশিক্ষক হিসেবেই সিনহার বাসায় প্রবেশ করেন। আর বের হন স্বামী হয়ে। এ আরেক কাহিনী। সিনহা তখন বিবাহিতা। এক সন্তানের মা। সবই জানতেন অভি। তারপরও প্রেমের মায়ায় জড়িয়ে ফেলেন সিনহাকে। একসময় সিনহাও ভালোবাসতে থাকেন অভিকে। আর এ ভালোবাসার টানেই ভেঙে দেন সংসার। সিনহার পিতা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। ধনাঢ্য এই পিতার সম্পত্তির প্রতিও লোভ ছিল অভির। বিয়ের পরের জীবন সুখের হয়নি মোটেও। স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত ‘আত্মহত্যা’ করেছেন সিনহা। গতকাল সিনহা ওরফে মাহাতারা রহমান শৈলীর পিতার বাসা কাজীপাড়ায় গেলে এসব কথা জানান তার স্বজনরা।
সর্বশেষ গত ১২ই জুন কাজীপাড়ার বাসায় যান সিনহা। সিনহার মা-বাবা জানান, তখন তাকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো। বাবা মতিউর রহমান তার হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়েছিলেন। নিজের ছয় বছর বয়সী মেয়েকে কোলে তুলে আদর করেছিলেন সিনহা। এটাই ছিলো মা হিসেবে সিনহার শেষ আদর। দীর্ঘদিন থেকেই স্বামী অভির সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিলো সিনহার। বাবা-মা তা জানতেন। তাই বাবা মতিউর রহমান তাকে বলেছিলেন, ‘মাগো-সব ছেড়ে চলে আয়। এখানে থাকবি। তোর মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাবি। তুই আমাদের একমাত্র সন্তান। তোর কিসের এতো দুশ্চিন্তা।’
এসব কথার কোন জবাব দিতেন না সিনহা। সেদিন কয়েক ঘণ্টা বাসায় অবস্থান করে চলে যান তিনি। তার আগে গত বছরের ডিসেম্বরে সিনহাকে মেরে রক্তাক্ত করেছিলেন অভি। ওই সময়ে শেওড়াপাড়ায় থাকতেন তারা। হঠাৎ করেই সিনহা ফোনে তার মাকে বলেন, আম্মু- অভি আমাকে মেরে ফেলছে। আমাকে বাঁচাও আম্মু। তখন সিনহাকে উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। সিনহার মা সেলিনা রহমান জানান, সিনহার মাথায় কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছিল। এমনকি একবার তাদের কাজীপাড়ার বাসাতেও সিনহাকে মারধর করেছেন অভি। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতে মহাখালী দক্ষিণপাড়ার বাসার সামনের রাস্তায় মারধর করার পর আত্মহত্যা করেন সিনহা। কেন এভাবে মারধর করতেন অভি? এ বিষয়ে সিনহার মা জানান, মূলত অর্থ-সম্পত্তি দেখেই সিনহার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েছিল অভি। তার কোন আয় ছিল না। বিয়ের পর থেকে বিভিন্নভাবে সিনহার মাধ্যমে টাকা নিতেন অভি। এমনকি স্ত্রী সিনহাকে মেরে চিকিৎসা করানোর সময়ও তার কাছে কোন টাকা ছিল না। তখন শাশুড়ি সেলিনা রহমানের কাছ থেকে টাকা খুঁজে নেন। বাসা ভাড়ার টাকাও দিতে হতো তাদের। সেলিনা রহমান বলেন, টাকার জন্যই আমার মেয়েকে দিয়ে মডেলিং করাতো। আমরা তো মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার। আমার মেয়ে মডেল হওয়ার কথা ছিল না। অভি তাকে এই পথে নামিয়েছে। কিন্তু মডেলিং আর অভিনয়ের টাকায় জীবনযাপন করা সম্ভব না। তাই মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য সিনহাকে অভি নির্যাতন করতো বলে অভিযোগ করেন তার মা সেলিনা রহমান। নির্যাতনের কারণে গত বছরের শেষের দিকে তিন মাস অভি থেকে আলাদাও ছিলেন সিনহা।
সেলিনা রহমান জানান, প্রথম স্বামী মিরাজের সঙ্গে সংসার ভাঙা, অভির সঙ্গে বিয়ে এসব কিছুই তারা সহজে মেনে নেননি। অভির নির্যাতনের কারণে সিনহাকে নিজেদের কাছে নিতে চেয়েছিলেন তারা। তখন সিনহা বলেছিলেন, আমি তৃতীয় বিয়ে করতে চাই না। অভি যত নির্যাতনই করুক তার সঙ্গেই সংসার করব। শেষ পর্যন্ত আমার মেয়েটাকে ওই ছেলে মেরে ফেলেছে... বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সেলিনা রহমান।
সিনহার মা-বাবা জানান, ২০০৬ সালে অল্প বয়সেই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সিনহার। বর বরিশালের বাবুগঞ্জের মিরাজুর রহমান মিরাজ। তিনি ঢাকায় একটি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা। বিয়ের কারণে তখন এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি সিনহার। বিয়ের পর সিনহার লেখাপড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন তার স্বামী। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সিনহা। তখন থেকেই অভির সঙ্গে পরিচয়। গৃহশিক্ষকতা করেন অভি। সিনহার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ওই টিউশনি পান তিনি। সিনহার স্বজনরা জানান, তার আগে ২০১০ সালে এক কন্যা সন্তানের মা হন সিনহা। স্বামী, সন্তান নিয়ে থাকতেন কাজীপাড়ায় পিতার বাসায়। গৃহশিক্ষকতার সুযোগ পেয়ে সিনহার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন অভি। কিন্তু বিষয়টি তখনও বুঝতে পারেননি তার মা-বাবা। সিনহার মা সেলিনা রহমান জানান, হঠাৎ করেই স্বামী মিরাজের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেন সিনহা। এসবই হচ্ছিলো অভির পরামর্শে। কিন্তু বিষয়টি মেনে নিচ্ছিলেন না সিনহার মা-বাবা। ভদ্রজন হিসেবে মিরাজ ছিল তাদের পছন্দের। অন্যদিকে একমাত্র মেয়ে সিনহা ছিল অনেক আদরের। নিজের ইচ্ছাতেই ২০১১ সালে মিরাজকে ডিভোর্স দেন সিনহা। পরের বছর হঠাৎ উধাও হয়ে যান সিনহা। পরে জানতে পারেন অভি ও সিনহা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছেন। গৃহশিক্ষকের সঙ্গে মেয়ের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সিনহার মা-বাবার। তারা বুঝতে পারেন মিরাজের সঙ্গে সংসার ভাঙার পেছনে এই অভিই মূল হোতা। প্রায় দুই বছর মেয়ের এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি তারা।
সিনহার পিতা মতিউর রহমান বলেন, শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালে ওই বিয়ে মেনে নিতে বাধ্য হই। এফিডেভিটের মাধ্যমে অভিজিৎ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তার নাম পরিবর্তন করে অভি রাখা হয়। সেখানে অভি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে জানান সিনহার মা সেলিনা রহমান। সিনহাকে পড়ানোর নামে মডেল বানানোর স্বপ্ন দেখাতেন অভি। সিনহার মামাতো ভাই ইমরান জানান, মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে সিনহার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে অভি। তখন থেকেই অভিনয় জগতের অনেকের সঙ্গে সখ্য ছিল অভির। অভির প্রলোভনে পড়ে ভুল পথে পা বাড়ায় সিনহা। পরিবারের সবার অজান্তেই এই সম্পর্ক গড়ে উঠে। যখন তারা জানতে পারেন তখন আর কিছুই করার ছিল না তাদের। শেষ পর্যন্ত অভির নির্যাতনে ‘আত্মহত্যা’ করেছে মডেল সিনহা।
এ ঘটনায় বনানী থানায় মামলা করেছেন সিনহার বাবা সাবেক পুলিশ সুপার মতিউর রহমান। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে অভিজিৎ অভিকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল অভিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শ্রীদাম। আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। অভিজিৎ অভির বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রামগঞ্জে।-এমজমিন
১৭জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর/এমএম