বিনোদন ডেস্ক : ‘মহেঞ্জোদড়ো’ বা মৃতের স্তূপের প্রেক্ষাপটে এক ভালবাসার গল্প বলেছেন পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর। ২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রেক্ষিতে সেই ভালবাসার গল্পের নায়ক হৃত্বিক রোশন। ইতিমধ্যেই চমক দিয়েছে এই ‘মহেঞ্জোদড়ো’ ছবির ট্রেলার। ছবির মুক্তি ১২ আগস্ট।
চমকের নাম হৃত্বিক রোশন। একের পর এক চমক দিয়ে চলেছেন তিনি। আর সেই চমকের সবটাই তাঁর নতুন ছবি ‘মহেঞ্জোদড়ো’কে ঘিরে। এমনিতেই বলা হচ্ছে এই বছরের সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত এই ‘মহেঞ্জোদড়ো’। যার বাজেট নাকি ছাড়িয়ে গেছে ১০০ কোটি টাকা। আর তার মধ্যে ঋত্বিক রোশনের পারিশ্রমিকই নাকি এই ছবিতে ৫০ কোটি টাকা।
এটা তো গেল প্রথম চমক। দ্বিতীয় চমক এই ছবির সদ্যপ্রকাশিত দুটি ট্রেলার। যার একটিতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে এই ছবির জন্য নিজের শরীরটাকে তৈরি করেছেন হৃত্বিক। সত্যিই চমকে যেতে হয় এই ট্রেলারে ঋত্বিকের নতুন চেহারাটা একবার দেখলে। আর অন্যটিতে আছে মহেঞ্জোদড়ো শহরের ধ্বংসাবশেষ। আর সেই ধ্বংসাবশেষ থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি কতগুলো স্টিল ছবি। যেখানে শুধুই যুদ্ধ আর রক্ত। ছবিটির বাজেট কেন বলা হচ্ছে ১০০ কোটি টাকার বেশি তা এই স্টিল ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায়।
আর তৃতীয় চমক ছবির প্রকাশিত ফার্স্ট লুক এবং পোস্টার। তার কোনওটাতে দেখা যাচ্ছে বাঘের সঙ্গে লড়ছেন ঋত্বিক আবার কোনওটাতে কুমিরের সঙ্গে হৃত্বিকের লড়াই। সেই ২০১৪–তে মুক্তি পেয়েছিল হৃত্বিকের ছবি ‘ব্যাং ব্যাং’। সেই ছবি বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। সাফল্য পায়নি তার ‘কাইটস’, ‘গুজারিশ’ বা ‘অগ্নিপথ’ও। তার ওপরে ব্যক্তিগত জীবনেও নানা বিতর্ক আর সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন হৃত্বিক। তাই ‘ব্যাং ব্যাং’-এর প্রায় দু’বছর পরে মুক্তি পেতে চলা এই ছবিতে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন হৃত্বিক। আর তারই প্রকাশ ছবি ঘিরে এই একাধিক চমক।
আশুতোষ গোয়ারিকরের পরিচালনায় এটি হৃত্বিকের দ্বিতীয় ছবি। প্রথম ছবি ‘যোধা আকবর’। এমনিতেই আশুতোষের প্রিয় বিষয় ইতিহাস। তাই বারবার ছবির বিষয় খুঁজতে ইতিহাসকে আশ্রয় করেছেন আশুতোষ। তার ‘লগান’, ‘যোধা আকবর’, ‘খেঁলে হম জি জান সে’ ছবিগুলোই তার প্রমাণ। এবারও সেই ইতিহাসকেই আশ্রয় করেছেন আশুতোষ। যেমন–তেমন ইতিহাস নয়, একেবারে মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতার ইতিহাস।
মহেঞ্জোদড়োর বর্তমান অবস্থান পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে। আনুমানিক ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ভারতের সিন্ধুনদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই নগরসভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর অন্যতম। স্থানীয় ভাষায় মহেঞ্জোদড়ো নামের অর্থ মৃতের স্তূপ। ছবিতে এই মৃতের স্তূপের মধ্যেই এক ভালবাসার গল্পের সন্ধান করেছেন আশুতোষ গোয়ারিকর।
কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল এই সভ্যতা, তা নিয়ে নানা ঐতিহাসিকের নানা মত। তবে বেশিরভাগ পণ্ডিতই মনে করেন বিদেশি কোনও শক্তিশালী শত্রুর আক্রমণে ধ্বংস হয়েছিল এই সভ্যতা। আর এই জায়গাটা থেকেই আশুতোষ শুরু করেছেন তার গল্প। একসময়ে নাকি চিতোরের রানী পদ্মিনীর রূপে মুগ্ধ হয়ে, তাকে পাওয়ার লোভে চিতোর আক্রমণ ও ধ্বংস করেছিলেন আলাউদ্দিন খিলজি।
বা যেরকম রাজকুমারী হেলেনের রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে হরণ করে এনেছিলেন ট্রয়ের রাজকুমার প্যারিস— সেরকমই এক গল্প বলেছেন আশুতোষ, তার এই ছবিতে। সেখানে দেখানো হয়েছে মহেঞ্জোদড়োর রাজকুমারীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়েছে শত্রুদলের নেতা। এই শত্রুদলের নেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হৃত্বিক রোশন ও রাজকুমারীর ভূমিকায় নতুন অভিনেত্রী পূজা হেগড়ে। এরা ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন কবীর বেদি, অরুণোদয় সিং, কিশোরী সাহানে, নীতীশ ভরদ্বাজ, দিগন্ত সিং প্রমুখ।
তবে আশুতোষের পক্ষে সহজ হয়নি এই গল্প তৈরি করা। ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে প্রথম এই ছবির ঘোষণা করেন আশুতোষ। সেই বছরেরই আগস্টে এই ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন হৃত্বিক রোশন ও পূজা হেগড়ে। কিন্তু তখনও আশুতোষের কাছে এই সভ্যতার খাদ্যাভ্যাস, পোশাক বা সমাজজীবন সম্পর্কে তথ্য এতটাই অপ্রতুল ছিল যে তা নিয়ে একটা সিনেমা তৈরি ছিল অসম্ভব।
প্রায় তিন বছর ধরে ক্রমাগত ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে ও বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা গল্প তৈরি করেন আশুতোষ। এই ছবির জন্য জসুয়া বেকারের তিন মাসের ট্রেনিংয়ে নিজের শরীরটাকে নতুন করে তৈরি করেন হৃত্বিক রোশন। তা সত্ত্বেও শুটিংয়ে একবার আঘাত পেয়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় হৃত্বিকের। ফলে কিছুদিন বন্ধও ছিল এই ছবির শুটিং।
২০১৫-র ২৭ জানুয়ারি ভুজে শুরু হয় এই ছবির প্রথম শুটিং, টানা ১০১ দিনের শিডিউলে। মে মাসে শেষ হয় এই প্রথম পর্বের শুটিং। পরের শুটিং শুরু সেই ভুজেই জুন থেকে অক্টোবর। এই সময়েই শুট করা হয় বাঘের সঙ্গে হৃত্বিকের লড়াইয়ের দৃশ্যটি। নভেম্বরে আবার জব্বলপুরে শুরু হয় শুটিং। সেখানেই টেক করা হয় কুমিরের সঙ্গে হৃত্বিকের লড়াইয়ের দৃশ্য। ছবির বাকি শুটিং হয়েছে মুম্বাইয়ের ফিল্ম সিটিতে। আর ছবির ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যটির শুট হয়েছে থানেতে।
ছবির সঙ্গীত পরিচালনায় আছেন এ আর রহমান এবং গান লিখেছেন জাভেদ আখতার। সব মিলিয়ে এটা পরিষ্কার, এই ছবির সাফল্যের জন্যে আশুতোষ বা হৃত্বিক করেননি এমন কিছু আর বাকি নেই। ছবির ট্রেলারও ইতিমধ্যেই মুগ্ধ করেছে দর্শককে। তবে শেষ পর্যন্ত কতখানি সাফল্য পায় এই ছবি, হৃত্বিক আবার ফেরেন কিনা বড়সড় একটা হিট ছবির নায়ক হয়ে বা এই বিশাল বাজেটের ছবি সাফল্যের রেকর্ড ভাঙতে পারে কিনা তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত। ওইদিনই মুক্তি পাচ্ছে ‘মহেঞ্জোদড়ো’।
১৮ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস