বিনোদন ডেস্ক : ‘বাবা জানো, আমাদের একটা ময়না পাখি আছে না...!’ কী পাকা অভিনয়! একটি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ওই বিজ্ঞাপনচিত্রের ছোট্ট দীঘির কথা এখনো অনেকের মনে আছে নিশ্চয়? সেই ছোট্ট মেয়েটি এখন অনেক বড় হয়েছে। বাবার কাছে এখন দীঘি শুধু ময়না পাখির গল্পই বলে না, তার সব ভালো লাগা, মন্দ লাগার গল্পগুলোও বলার সঙ্গী এই বাবা। সেদিন দীঘির বেশ জ্বর। এরপরও বাবার কথায় সে সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ল। পত্রিকা অফিস থেকে লোক আসবেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে—তাই সে তৈরিও হয়ে গেল সময়মতো। কিন্তু জ্বরের রেশ মেয়েটির চোখেমুখে স্পষ্ট। দীঘি জ্বর বাধাল কেমন করে? বাবা সুব্রত একটু অভিমানের সুরেই বললেন, ‘শুটিংয়ের জন্য আমি একদিন ছিলাম না বাসায়। আর তখনই সে (দীঘি) সুযোগ পেয়ে গেল। ঠিকমতো খায়নি, ঘুমায়নি। এ জন্যই তো এসে দেখি জ্বরে পড়েছে।’ এসব শুনে পাশে বসা দীঘি তখন ঠোঁট চেপে হাসছে। বাবার ভাষায়, ‘দীঘি একটা লক্ষ্মী মেয়ে। শুধু খাওয়াদাওয়ার বেলায় একটু বেখেয়ালি।’ এ জন্যই তো কাজে গেলে ক্ষণে ক্ষণে ফোন করে বাবা দীঘির খবর নেন।
সেই দীঘিদীঘির মা চিত্রনায়িকা দোয়েল ২০১১ সালে মারা যাওয়ার পর থেকে দীঘির জীবনের পুরোটা জুড়েই বাবা। বাবাকে দীঘি ছায়ার মতো নিজের পাশে ধরে রাখে। সুব্রত শুটিংয়ের কাজে দিন কয়েকের জন্য বাইরে গেলেই দীঘির দুই চোখে বয়ে যায় বন্যা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাবার ফোন না পেলে দীঘির দিন নাকি কেমন ‘শূন্য শূন্য’ লাগে। আর এই শূন্য শূন্য লাগাটাকেই ভয় করেন সুব্রত। ছবি তোলার আগে দীঘি যখন পাশের ঘরে চুলটা ঠিক করতে গেল, তখন গলার স্বর নামিয়ে সুব্রত বললেন, ‘মায়ের শূন্যতা ওকে যেন না ভাবায়, এ জন্যই প্রতি মুহূর্তে আমি ওর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি।’
দীঘি এখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়ছে ধানমন্ডির একটি স্কুলে। সামনেই তার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা। রোজ সকালে মেয়ের ঘুম ভাঙিয়ে স্কুলের জন্য তৈরি করা থেকে শুরু হয় বাবা সুব্রতর কাজ। বাবা একটা ‘সুপারহিরো’র মতো, বলল দীঘি। মেয়েকে যখন শাসন করার তখন শাসন করছেন, আবার মায়ের মতো তাকে আগলেও রাখছেন। কোন জামার সঙ্গে কোন ওড়নাটা মানাবে, সেটাও যেমন দীঘিকে গুছিয়ে দেন, তেমনই জেএসসির পাট চুকিয়ে পড়াশোনায় কোন দিকে যাবে দীঘি, সে সমাধানও বাবার কাছ থেকে পায় সে। যে বাবাকে ঘিরে দীঘির দিবস-রজনী বাঁধা, সেই বাবার জন্য একটা ‘বাবা দিবস’ কি যথেষ্ট?-প্রথম আলো
১৯ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন