মাহতাব হোসেন : সেটা ১৯৯০ সালের কথা। আমার বাসায় আসলেন গীতিকার আহমেদ কায়সার, সুরকার আশরাফ উদাস। বললেন একটা গান করেছি। সেটা আপনাকে গাইতে হবে। তখন মানুষ আমার টুকটাক নাম চেনে। আমি বললাম কোথায় গাইতে হবে? জনালেন রেডিওতে। আমি স্বাভাবিক একটা গানের মতোই রেডিওতে গেয়ে এলাম। আমার মধ্যে আলাদা কোনো প্রতিক্রিয়া নাই। কিছুদিন পর একটা স্টেজ প্রোগ্রাম করতে গেছি, খেয়াল করলাম সেখানে কিছু মানুষ 'পাগল মন' গান শোনার আহ্বান জানাচ্ছে। আমি গাইলাম। দর্শকরা বেশ মজা করল। এরপর যেখানেই স্টেজ প্রোগ্রাম করতে যেতাম সেখানেই পাগল মন গানের অনুরোধ আসতে থাকে। তখন চিন্তা করলাম আমার গানের একটা অ্যালবাম করলেই তো হয়। যদিও তখন অ্যালবাম ছিল আমার।
১৯৯২ সালের কথা। তখন ডন মিউজিকের বাবুল চৌধুরীর কাছে গিয়েছিলেন দিলরুবা। বাবুল চৌধুরী অ্যালবাম বের করবেন তবে শর্ত দিলেন যে টাকা পয়সা দিতে পারবেন না। দিলরুবা রাজি হয়ে গেলেন। 'আমি রাজি হলাম তবে তাঁকে বললাম আমার মিউজিকের খরচটা দিতে। সেটা তিনি দিলেন। আলী আকবর রূপুর সংগীত আয়োজনে গান দাঁড় করানো হয়। অ্যালবাম বের হলো। আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম।' তখন দেশজুড়ে গ্রামে গঞ্জে 'পাগল মন' বেজেই যাচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে পাগল মন তুমুল আলোড়ন তোলে। প্রবাসেও পাঠানো হতে থাকে প্রচুর ক্যাসেট।
দিলরুবা বলেন, ডন মিউজিকের একটি সূত্রে জেনেছিলাম 'পাগল মন' অ্যালবাম দেড় কোটি কপি বিক্রি হয়েছিল। তবে এক কোটি বিক্রি হওয়ার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম। তখন একটা গানের ক্যাসেটে লাভ ছিল ৮ টাকা। সেই অনুযায়ী 'পাগল মন' ন্যূনতম লাভ করে ৮ কোটি টাকা। টাকা পয়সার ব্যাপারে আমার কোনো মোহ নেই। আমাকে দেশবাসী চিনেছে এটাই আমার কাছে অনেক।
পাগল মন তো ছবিও হয়েছিল- দিলরুবা খান বলেন, হ্যাঁ সেটাও একটা মজার ঘটনা বটে। ১৯৯৩ সালের ঘটনা। তোজাম্মেল হক বকুল তখন বেশ জনপ্রিয় পরিচালক। বেদের মেয়ে জোসনা'র কল্যাণে বকুলের নাম ছড়িয়ে পড়েছে। বকুল একদিন বাসায় এসে বললেন 'দিলরুবা আপা আমি তো এ জানের জান নামে একটি ছবি করছি, ছবির শুটিং অর্ধেক শেষ। কিন্তু এখন আমার ছবিটির নাম পরিবর্তন করতে চাচ্ছি। আমি বললাম কি নাম দিতে চাচ্ছেন? তিনি বললেন, 'পাগল মন' এবং ওই ছবিতে আমাকেই গানটা গাইতে বললেন নতুন করে। সেটাসহ দুটি গান গাইলাম ছবিতে। কণ্ঠ দেওয়ার পর বকুল বললেন আপা আপনাকে তো টাকাপয়সা দিতে পারলাম না, তবে ছবি হিট করলে একটা চাবি দিব, আমি বললাম কিসের চাবি? বকুল হেসে বললেন 'গাড়ির চাবি'।
দিলরুবা হতাশ কণ্ঠে বলেন, ছবিটি ৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল সে সময়। তোজাম্মেল হক বকুল গাড়ির চাবি কেন, এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়েও আমার বাসায় আসেননি। না আমাকে কোনো টাকা পয়সাও দেওয়া হয়নি। আগেই বলেছিলাম টাকা পয়সার মোহ আমার নেই। এর ২৬ বছর পরের ঘটনা। ডিজে রাহাত একদিন আমাকে বলল, আপা, আপনার 'পাগল মন' গানটি করতে চাই। ভাবলাম আজকাল তো কেউ কারো গান করতে জানানোরই প্রয়োজন মনে করে না। সেখানে রাহাত দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছে।' বললাম সেটা তো গত বছরের কথা। রাহাতের কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা পেয়েছেন? দিলরুবা বলেন, না রাহাতও আমাকে কোনো টাকা পয়সা দেয়নি। একটা গান নিয়ে এত ব্যবসা হলো আপনি এক টাকাও পেলেন না? প্রবীণ এই সংগীত শিল্পীর উত্তর 'না'।
সম্প্রতি দিলরুবা খান ‘সোনাচান’ নামের একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটি লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন। সংগীত পরিচালনা করেছেন এম এম পি রনি। সুর করেছেন মিলন।-কালের কণ্ঠ
২০ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন