রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬, ০৯:৪৯:২৯

প্রথম সিনেমায় আমার আয় ছিল মাত্র ১০ টাকা : রোজিনা

প্রথম সিনেমায় আমার আয় ছিল মাত্র ১০ টাকা : রোজিনা

বিনোদন ডেস্ক : একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা।  চলচ্চিত্রকে বিদায় জানিয়ে এখন লন্ডনে ঘাঁটি গেড়েছেন তিনি।  তবে মাটির টানে মাঝে মাঝে দেশে আসা হয় তার।  

এবারের ঈদটা দেশের মাটিতেই করতে চান তিনি।  তাই ৯ জুন লন্ডন থেকে উড়ে এসেছেন ঢাকায়।  দেশে ফিরেই ব্যাপক ব্যস্ততা যাচ্ছে তার।  অংশ নিচ্ছেন টিভি অনুষ্ঠান আর ইফতার পার্টিতে।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্রের একজন চিত্রনায়িকা রোজিনা।  নিজের অভিনয় দিয়ে কোটি দর্শকের ভালোবাসা অর্জন করে নিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু হঠাৎ অভিনয় ছেড়ে লন্ডনে চলে যাওয়ায় ভক্তদের হৃদয়ে কিছুটা ভাটা পড়ে।  তারপরও তাকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।  ভক্তদের হৃদয়ের মণিকোঠায় আজো তিনি।

১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ ছবিতে সহ-নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন রোজিনা।  এ পর্যন্ত ২৫৫ টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।  

১৯৯০ সালের পর কলকাতায় প্রায় ২০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন রোজিনা।  রোজিনা অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হচ্ছে রাজমহল, মাটির মানুষ, চম্পা চামেলী, মোকাবেলা, রাজকন্যা, আলীবাবা সিন্দবাদ, রাজসিংসন, কসাই ইত্যাদি।

চলচ্চিত্র ছাড়াও বেশকিছু নাটকেও অভিনয় করেছেন রোজিনা।  শরৎচন্দ্র ও নজরুল ইসলামের লেখা কাহিনী ও গল্প নিয়ে ‘ষোড়শী’, ‘মেজদিদি’, ‘বনের পাপিয়া’সহ কয়েকটি গঠনমূলক নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি।  

নায়িকা রোজিনা ২০০৫ সালে সর্বশেষ মতিন রহমানের পরিচালনায় ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ‘রাক্ষুসী’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।  এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন ফেরদৌস।  এরপর আর কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি তিনি।

১৯৮০ সালে রোজিনা ‘কসাই’ ছবির জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি জাতীয় পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর হিসেবে ‘জীবন ধারা’ ছবিতে।  

শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনি বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেন।  ১৯৮৬ সালে ‘হাম সে হায় জামানা’তে ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পাকিস্তান থেকে নিগার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।  এ ছবিতে রোজিনার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় নায়ক নাদিম।  

দীর্ঘদিন এফডিসিতে না যাওয়া রোজিনার ভাষ্য, এফডিসিতে এসে একটু খারাপই লেগেছে। নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম।  কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।  প্রত্যেকটা ফ্লোরেই এক সময় কাজ করেছি। খুব ব্যস্ত সময় কেটেছিল আমার।  এফডিসিও তখন সরগরম ছিল।  কিন্তু এখন সেই ব্যস্ততা আর নেই।

তার আক্ষেপ, একটা মেকাপ রুমে ঢুকে দেখলাম লাইট নেই।  দেখে কষ্ট হচ্ছিল।  আমরা যখন অভিনয় ছেড়ে দিয়েছি তখন ভেবেছিলাম এফডিসি সামনে আরো উন্নত হবে।  সব কিছুই তো উন্নতির দিকে।  কিন্তু এফডিসির আরো অবনতি হয়েছে।

পুরনো স্মৃতির কথা মনে করে রোজিনা বলেন, খুব ব্যস্ত সময় কেটেছিল।  সকাল বিকেল রুটিন করে এফডিসিতে শুটিং করতাম।  সিনসিয়ারলি কাজ করেছি।  প্রচুর দর্শক সিনেমা হলে যেত।  একটা ছবি মাসের পর মাস হাউসফুল থাকতো।  ১৯৭৮ থেকে ৯৩ পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।  অনেক ছবি সুপার হিট হয়েছে।  দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছি কত।

সিনেমার এ অবস্থা সম্পর্কে তার ভাষ্য,
যে প্রডিউসাররা সিনেমা প্রডিউস করছে তারা বিজনেস মাইন্ডের না।  শিল্পীদের পার্সোনাল স্কিলও কম।  শাকিব খান ছাড়া বাকিদের স্কিল খুব একটা দেখছি না।  

গ্রামের মেয়ের চরিত্র নিয়ে রোজিনা বলেন, আমাকে সেই চরিত্রের মধ্যেই ঢুকে যেতে হবে।  তখন আমি আর রোজিনা না।  কিন্তু এখনকার অভিনয়শিল্পীরা গ্ল্যামারের পেছনেই বেশি ছুটছে।  অভিনয়ে আগ্রহ কম।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এখন সিনেমা করেই গাড়ি বাড়ি করে ফেলে।  অথচ প্রথম সিনেমায় আমার আয় ছিল মাত্র দশ টাকা।  স্কুটারে করে এফডিসিতে আসতাম।  এখন শিল্পীরা অভিনয় শুরু করার আগেই পত্রিকায় পাবলিসিটি শুরু হয়।  এতে করে তাদের মাথা গরম হয়ে যায়।  

রোজিনা বলেন, এতে তারা ধরেই নেয় অনেক বড় কিছু হয়ে গেছি।  তবে ভালো কাজ করলে যুগ যুগ ধরে দর্শকদের হৃদয়ে থাকবে।  তবে ভালো করার ক্ষেত্রে নায়িকাদের মধ্যে শাবনুর, মৌসুমী আর পূর্ণিমাকে ছাড়া তেমন কাউকে দেখছেন না তিনি।

লন্ডন থেকে দেশে ফেরা রোজিনা কোরবানির ঈদ অবধি থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।  টিভি থেকে অনেকগুলো প্রোগ্রামে ডাক পড়ছে তার।  বেশ কয়েকটা এরই মধ্যে শেষ করেছেনও তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে ভালোই সময় কাটছে রোজিনার।

তবে আগ্রহ না থাকলেও ভালো গল্প, ভালো চরিত্র, ভালো নির্মাতা পেলে অভিনয়ে আগ্রহী তিনি।  অবশ্য অভিনয়ের চেয়ে ডিরেকশনে থাকতে চান।  সুযোগ সুবিধা হলে ডিরেকশন দেয়ার ইচ্ছা রয়েছে রোজিনার ২৬ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে