পাভেল রহমান : হিরো আলম নামে ফেসবুকে নতুন এক হিরো এসেছে। তার বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিও চিত্র দেশের অনেক জনপ্রিয় তারকারা তাদের ফেসবুকে ওয়ালে শেয়ার করছেন। কালো চেহারার এক নায়ক যখন দুই নায়িকা নিয়ে নাচছে সেটা দেখে অনেকে আবার আলমকে পচানোর জন্য নানার রকম স্ট্যাটাসও লিখছেন।
এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই হিরো আলম সত্যিই জনপ্রিয় তারকা হয়ে উঠছেন। গত দুই দিনে আলমের ফেসবুক ফলো করছি আমি। তার ভিডিওগুলোতে ভিজিটর বাড়ছে। ফেসবুকে আলমের ফলোয়ার বাড়ছে। সব মিলিয়ে সত্যিই সত্যিই তারকা হয়ে যাচ্ছেন হিরো আলম।
যেমন করে নায়লা নাঈম, জ্যাকুলিন মিথিলা, অনন্ত জলিল এই দেশে তারকা হয়েছেন তেমন করে হিরো আলমও এই দেশে তারকা হয়ে যাচ্ছেন। আগামী কোরবানীর ঈদে টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোর চাহিদাসম্পন্ন তারকাদের অন্যতম হতে পারেন হিরো আলম।
কারণ মিডিয়ার কাছে টিআরপি, র্যাঙ্কিংটাই শেষ কথা। হিরো আলম যখন দেশের অনেক তারকার ফেসবুক ওয়ালে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। আগামীতে টিভি পর্দায়ও জায়গা করে নেবেন। আর আমার মতো আহাম্মক বিনোদন সাংবাদিককে বাধ্য হয়ে লিখতে হবে হিরো আলমের উপর বিশেষ ফিচার ‘যেভাবে হিরো আলম তারকা হলেন’।
প্রিয় গুণীজনেরা, আমরা যখন হিরো আলম নিয়ে মাতামাতি করি। তখন হিরো আলমেরই উপকার হয়। তার ভিডিওগুলোর ভিজিটর গত দুই দিনে লাখ ছাড়িয়েছে। কারণ আমাদের মতো অনেকেই মজা করার ছলে হিরো আলমের প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছি। যেমন করে একদিন অনন্ত জলিলের প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিলাম।
আমরা ভালো কিছু ফেসবুকে শেয়ার করি না। হিরো আলম, নায়লা নাঈম, জ্যাকুলিন মিথিলা নিয়ে মজা করতে গিয়ে তাদেরকে তারকা বানিয়ে দেয়। আমাদের পাঠের চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে অনলাইন নিউজপোর্টাল। তখন নায়লা নাঈম, হিরো আলমেরা হয়ে উঠেন তারকা। সবার চাহিদাকে তখন বাণিজ্যে রূপ দেয় এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী।
আমরা যেভাবে হিরো আলম নিয়ে লাফালাফি শুরু করেছি। কয়েকদিন পরেই হয়তো আমার মতো অনেক বিনোদন সাংবাদিকের মেইলে প্রেস রিলিজ চলে আসবে এবার নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে আইটেম গানে নাচবেন হিরো আলম। আমরা তখন নিউজ লিখবো। সেটি আবার অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে স্ট্যাটাসে লিখবেন, ‘হিরো আলম এবার মাহির নায়ক।’
ফালতু জিনিস বাদ দিয়ে একটু ভালো কিছু নিয়ে মাতামাতি করেন না। ভালো কোন গল্প, থিয়েটার, সিনেমা, পেইন্টিং নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেন না। তখন হিরো আলমরা তাদের মতোই আসবে আবার হারিয়ে যাবে।
দিনের বেলায় অনলাইন নিউজের সমালোচনা করবেন আর দিনের শেষে ঘরে ফিরে সানি লিওন, নায়লা নাঈম, হিরো আলমের চটকদার নিউজ খুঁজবেন। কেমন স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে না? নিজেদের দিকে একবার তাকিয়ে দেখি না কেন যে হিরো আলম কতো সহজে আমাদের কাঁধে ভর দিয়ে তারকা হয়ে যাচ্ছে। মোট কথা হিরো আলমকে আমরাই তারকা বানাচ্ছি।
উল্লেখ্য আমার এই স্ট্যাটাসও হিরো আলমের তারকাখ্যাতি বাড়াবে। এই স্ট্যাটাস পড়ে দু-একজন হয়তো গুগলে সার্চ করে হিরো আলমকে খোঁজা শুরু করবেন। আমি যখন হিরো আলমের একটি গানের ভিডিও প্রথম দেখেছি তখন তার ভিজিটর ছিল দেড় হাজার। মাত্র দুই দিন পরে সেই ভিডিওটি দেখলাম ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে।
কারণ গত দুই দিনে হিরো আলম কে পচাতে গিয়ে আমাদের দেশের অনেক অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, সুধীজন তাদের ফেসবুকে হিরো আলমের ভিডিওটা শেয়ার দিয়েছেন। তারা সবাই বিনা পয়সা হিরো আলমের প্রচার করে দিলেন।
এই সুধীজনেরা যদি তাদের ফেসবুক ওয়ালে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উপকারে আসে এমন কিছু লিখতো। কিংবা মানুষকে কোন ভালো কাজে আহ্বান জানাতো তবে হিরো আলমের মতো ফালতু কোন বিষয় নিয়ে কেউ সময় নষ্ট করতো না।
বি: দ্র: আমরা অনেক বোকা। এই কথাটা ভাবছি আর নিজের জন্য হাসি পাচ্ছে। হিরো সাবাশ, এই বোকাদের সময়ে তোমরাই তারকা। হিরো আলম, নায়লা নাঈম, জ্যাকুলিন মিথিলাদের নিয়ে গড়ে উঠুক আমাদের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রি। আর সত্যিকারের তারকারা বসে বসে মুড়ি খাক…। পাভেল রহমান: সাংবাদিক ও নাট্যকর্মী (পূর্ব পশ্চিম)
২৭ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন