শুক্রবার, ০৮ জুলাই, ২০১৬, ০২:১৮:৩২

সন্ত্রাসের ‘ধর্ম’ নিয়ে আক্রমণ আমিরের, ভালবাসায় শাহরুখ

সন্ত্রাসের ‘ধর্ম’ নিয়ে আক্রমণ আমিরের, ভালবাসায় শাহরুখ

বিনোদন ডেস্ক : বলিউড অভিনেতা আমির বলেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আরেক খান শাহরুখও তাঁর বাড়িতে ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, কীভাবে তাঁর পরিবার সব ধর্মীয় উৎসব উৎসবের মতো করেই পালন করে।

মাথাচাড়া দিচ্ছে ইসলামি জঙ্গিদের সন্ত্রাস। এমনকী, ঈদের দিনেও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেই আবহে সম্প্রীতির বার্তা দিলেন বলিউডের  দুই খান।

আজ ঈদ উপলক্ষে নিজের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন আমির খান, প্রতিবারের মতোই। সেখানে সন্ত্রাসের সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে আমির জানান, যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাস করে, তারা ধর্মটাই অনুসরণ করে না। আমিরের কথায়, যারা সন্ত্রাস করে বা সন্ত্রাস ছড়ায় তাদের সঙ্গে ‘মজবে’র (ধর্ম) কোনও সম্পর্ক থাকে বলে আমি মনে করি না। তা সেই সন্ত্রাসবাদী মুসলমান, হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান— যে কোনও সম্প্রদায়েরই হোক না কেন।

‘ফানাহ্‌’য় আমিরকে দেখা গিয়েছিল এক কাশ্মীরি উগ্রপন্থীর (রেহান কাদরি) ভূমিকায়। তারই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ‘সর্‌ফরোশ’ ছবিতে আমির অভিনীত এসিপি অজয় সিংহ রাঠৌর। কয়েকমাস আগেও ভারতে অসহিষ্ণুতা নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া আমির আজ অবশ্য পুরোপুরিই ছিলেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাঠৌরের মেজাজে।

সন্ত্রাস প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, জঙ্গিরা যতই বলুক যে ওরা ধর্মের জন্য এ-সব করছে, তা সত্যি নয়। ওরা যদি সত্যি ধর্মের পথে চলত, তাহলেই বুঝতে পারত, ধর্ম মানুষকে ভালবাসতে শেখায়।’’ তবে বিতর্কিত ধর্মগুরু জাকির নায়েককে তাঁর প্ররোচনামূলক বক্তব্যের জন্য নিষিদ্ধ করা উচিত কি না, সে প্রশ্ন সরাসরি এড়িয়ে গিয়েছেন আমির। স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘ওই বিষয়ে কিছু বলব না। যা বলতে চেয়েছি, তা বলেছি।

ঘটনাচক্রে, জাকিরের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্র সরকারের নির্দেশে আজই তদন্ত শুরু করেছে মুম্বই পুলিশ।

আমির বলেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আর বলিউডের আরেক খান শাহরুখও তাঁর বাড়িতে ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, কীভাবে তাঁর পরিবার সব ধর্মীয় উৎসব উৎসবের মতো করেই পালন করে।

তাঁর কথায়, আমার বাড়িতে সব ধর্মের উৎসবই পালিত হয়। ঈদের দিন সকলে একসঙ্গে থাকি, বিশেষ খাওয়াদাওয়া হয়— এই পর্যন্ত। তবে উপহারের বালাই নেই। আমি এদিন সাদা পোশাক পরি, সেটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস। আমার ছেলেরা অবশ্য কুর্তা-পাজামায় অস্বস্তিই বোধ করে।

সাংবাদিক সম্মেলনের আগে আজ সকালে ছোট ছেলে আবরাম’কে কোলে নিয়ে নিজের বাংলো ‘মন্নতে’র বারান্দায় ভক্তদের ‘দর্শন’ দিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন শাহরুখ। হাত নেড়ে ভক্তদের অভিবাদন জানান। পরে নিজের কনিষ্ঠ সন্তান সম্পর্কে বলেন, গেটের বাইরে ভিড় দেখলেই আবরাম বলে, বাবা, বাচ্চারা এসে গিয়েছে।

ঈদের দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে শাহরুখ বারবার ফিরে গিয়েছেন তাঁর ছোটবেলার স্মৃতিতে। গুরুত্ব দিয়েছেন পারিবারিক মিলনের উপর। জানিয়েছেন, ছোটবেলায় প্রতি বছর ঈদে তিনি বাবার থেকে ১১ টাকা করে পেতেন। পাশাপাশি, প্রত্যেকের জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও আজ বলেছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, শিক্ষাই জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক পথে চলতে গেলে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, অতীতে সন্ত্রাসের জন্য ‘সংকীর্ণমনা ধর্মগুরু’দের তুলোধোনা করতে দেখা গিয়েছে শাহরুখকে।

দেশে যথেষ্ট অসহিষ্ণুতা আছে বলে কয়েকমাস আগেই বিতর্কে জড়িয়েছিলেন আমির এবং শাহরুখ দু’জনেই। দু’জনেই আঙুল তুলেছিলেন ধর্মীয় (আদতে হিন্দুত্ববাদীদের) অসহিষ্ণুতার দিকে। যার জেরে তাঁদের ধর্ম নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করেছিলেন উগ্র হিন্দুত্ববাদী এবং সঙ্ঘের নেতারা। পরে শাহরুখ তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে জানিয়েছিলেন, তাঁর অনেক কথাই লোকে ভুল বোঝে। তাঁকে ‘ভুল বোঝা হয়েছে’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন আমিরও।

আজ অবশ্য কোনও বিতর্কের ধার দিয়ে হাঁটেননি দুই তারকা। বরং একে হতে চেয়েছেন অন্যের পরিপূরক। একজন যখন সরাসরি ধর্মের সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগ থাকতে পারে না বলে সরব হয়েছেন, তখন অন্যজন জোর দিয়েছেন সব ধর্মকে সমান মর্যাদা দেওয়ার উপরে। একজন যখন বলছেন প্রকৃত ধর্মানুসারী মানুষকে ভালবাসবেন, তখন অন্যজনকে দেখা যাচ্ছে ঈদের উৎসব এবং পারিবারিক বন্ধনের দিক তুলে ধরতে।

আজকের এই খান-দান দেখে অবশ্য অনেকেরই মনে পড়েছে, বাংলাদেশে গুলশনের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী তরুণদের একজন ছিল বলিউডেরই অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কপূরের ‘ফ্যান’।
আবার সেই দলেরই একজন গুরু মেনেছে মুম্বইয়েরই বিতর্কিত ধর্মপ্রচারক জাকিরকে!
আমির-শাহরুখ না জাকির, কার কথা শুনবেন ধর্মীয় ‘ফ্যানাটিক’রা? -এবেলা
০৮ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে