বিনোদন ডেস্ক: অনন্ত জলিল এবং বর্ষা-বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের আলোচিত এক রোমান্টিক জুটি। তারা সিনেমার এবং নিজের দাম্পত্য জীবনের জন্যও বেশ আলোচিত। প্রতিনিয়ত চেষ্ঠা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদর অভিনয় দক্ষতা এবং সিনেমায় প্রযুক্তির ব্যাবহারকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন।
বর্ষার সঙ্গে মন দেওয়া নেওয়া শুরুর পরপরই অনন্ত রুপালী জগেত পা রাখেন। তার প্রথম মুভি ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ বাংলা সিনেমার চিত্রটাই বদলে দেয়। অনন্তর এই লড়াইয়ে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে আসছেন তার অর্ধাঙ্গিনী বর্ষা। তাদের অনস্ক্রীণ এবং অফস্ক্রীণ রোমান্স বেশ দারুণ। কিভাবে এই ভালবাসাকে শক্তি করে তারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করছেন সেসব নিয়ে একটি ইংরেজী পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাতকারটি অনুবাদ করেছেন সত্যজিৎ কাঞ্জিলাল।
দাম্পত্য ভালবাসা আপনাদের কর্মক্ষেত্রে কিভাবে প্রভাব ফেলে?
আমাদের সকল ভালবাসা এখন আমাদের একমাত্র সন্তানকে ঘিরে। আমরা একে অপরকে ভীষণ ভালবাসি। আমাদের মধ্যে একসময় কিছু মনোমালিন্য হয়েছিল। মজার বিষয় হলো, সেই দিনগুলোর কথা মনে করে এখন আমরা দুজনেই হাসাহাসি করি। সারাদিনের কাজ শেষে দুজনে বাসায় ফিরে ভাবি, আগামীকাল আরও এগিয়ে যেতে হবে। আমরা একে অপরের প্রতি এবং আমাদের পারিবারিক বিষয়গুলোত খুব দায়িত্বশীল। এভাবেই আমরা আমাদের ভালবাসা বাঁচিয়ে রেখেছি।
প্রথম যেদিন দুজনে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন কেমন লেগেছিল?
আমরা ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ মুভিটির মাধ্যমে প্রথমে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। এটি আমাদের দুজনের জন্যই একটি অসাধারণ ব্যাপার ছিল। এই মুভিটি বাংলাদেশের সিনেমার জগতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। ক্রিস্টাল ক্লিয়ার রেজলিউশন, শুটিং লোকেশন, সাউন্ড আর চোখ ধাঁধানো গ্রাফিক্স এদেশের সিনেমাপ্রেমীদের রুচি এবং ধারণা বদলে দিয়েছিল। সত্যি বলতে আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনের ভালবাসা স্ক্রীণেও প্রকাশ ঘটেছিল।
চলচ্চিত্র জগতে এই বড় পরিবর্তন আনতে অনন্তকে কোন বিষয়টি উৎসাহিত করেছিল?
এই জগতে আসার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডেটিংয়ে একদিন বর্ষা আমাকে বলেছিল তার স্বপ্নের কথা। একই বৃত্তে ঘুরতে থাকা দেশীয় চলচ্চিত্রকে আরও উন্নত স্থানে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল বর্ষার। তার স্বপ্ন আমার চিন্তার সঙ্গে মিলে যায় এবং এটাই আমাকে বড় উৎসাহ দেয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশের সিনেমার দর্শক কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তরুণদের দাবী ছিল, বড় বাজেটের সিনেমা; যার কোয়ালিটি হতে হবে হলিউড কিংবা বলিউডের মত। এসব গবেষণা করে আমি সিদ্ধান্ত নেই যে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এরপরই হাত দেই ‘খোঁজ-দ্য সার্চ’-এ। এই সিনেমাটিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটাই। সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর দেশ এবং দেশের বাইরের দর্শকদের বিপুল সাড়া পাই। এই সিনেমাটির একটি বিশেষত্ব ছিল যে, মন্ত্রী, কর্পোরেট ব্যাক্তি থেকে শুরু করে কলেজগামী ছেলে-মেয়েরাও এর দর্শক হতে পেরেছিল।
আপনার মুভিতে বিদেশী শিল্পীদের প্লেব্যাক করানো নিয়ে তো বেশ সমালোচনা হয়েছিল?
আমার এমন কোন সিনেমা নেই যেটায় আমি অন্তত একজন বাংলাদেশী শিল্পীর গান ব্যাবহার করিনি। আমার মুভিগুলোতে বাংলাদেশ এবং বাইরের শিল্পীর অনুপাত সবসময় ৫০-৫০ থাকে।
গুজব প্রচলিত আছে যে আপনার কয়েকটি মুভির কাহিনী নাকি সরাসরি তামিল এবং হিন্দি মুভি থেকে কপি করা?
না, আমার কোন মুভি তামিল কিংবা হিন্দী মুভি থেকে কপি করা হয়নি। আমি এইসব গল্প চুরি করে সিনেমা বানানোকে ঘৃণা করি এবং অসম্মানজনক মনে করি। একটি সিনেমার কোন একটি সিকোয়েন্স অন্য কোন সিনেমার সঙ্গে মিলে গেলেই তাকে ‘কপি’ বলার কোন যৌক্তিকতা নেই। আমি আমার গল্পগুলো দেশীয় প্রেক্ষাপটে তৈরি করা চেষ্ঠা করি। যেমন, ‘দি স্পীড’ দুর্নীতি বিষয়ক মুভি, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ হলো মানি লন্ডারিং বিষয়ক মুভি। আমার মুভির গল্পের স্বকীয়তা থাকে এটা জোর গলায় বলতে পারি।
‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ থেকে ‘মোস্ট ওয়েলকাম-২’ কোনটা আপনার বেশী প্রিয়?
আমার এবং বর্ষার সবচেয়ে প্রিয় হলো ‘নি:স্বার্থ ভালবাসা’। কারণ এই মুভিটি নির্মান করতে আমাদের ভীষণ শ্রম দিতে হয়েছে। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। এটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত মুভি। আমার মতে, বর্ষা এই মুভিটিতে তার সেরাটুকু ঢেলে দিয়েছে।
আপনার পরবর্তী ছবি ‘দ্য স্পাই’ এর কাজ কবে শুরু হচ্ছে? এ বিষয়ে কিছু বলুন
আশা করছি এবছরই ছবিটির কাজ শুরু করতে পারব। ইতোমধ্যেই এই মুভিটির স্ক্রীপ্ট লেখা শেষ হয়ে গেছে। প্রি-প্রোডাকশনের কাজগুলোও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। দর্শকরা এই ছবিতে অনেক তারকার সমাবেশ দেখতে পাবেন। সেই সঙ্গে ছবিটির মেকিং এবং প্রযুক্তির ব্যবহার আগেরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।-কালের কণ্ঠ