বিনোদন ডেস্ক : শাহজাহান, আকবর, উমরাও জান - এ ধরনের ঐতিহাসিক মুসলমান চরিত্রকে ঘিরে নির্মিত হিন্দি সিনেমার সংখ্যা কম নয়। তবে সমকালীন ভারতের নাগরিক হিসেবে মুসলমান চরিত্ররা যখন রূপালী পর্দায় উঠে আসেন তখন থাকে ভিন্ন ব্যঞ্জনা। সেদিক থেকে ‘গরম হাওয়া’র সেলিম মির্জা (বলরাজ সাহানি) ও সিকানদার (ফারুক শেখ), ‘ইকবাল’-এর তরুণ ক্রিকেটার ইকবাল (শ্রেয়াশ তালপাড়ে), ‘গোলাম এ মোস্তফা’র মোস্তফা (নানা পাটেকার), ‘নিকাহ’র নিলোফার (সালমা আগা), ‘জাঞ্জির’ এর শের খান ( প্রাণ), ‘শাহেন শাহ’র আসলাম খান(প্রাণ), ‘বোম্বে’র শায়লা বানু (মনিষা কৈরালা)সহ অনেক চরিত্রের কথাই বলা যাবে, যারা মনে দাগ কেটে গেছে।
এমনই পাঁচটি চরিত্রের কথা তুলে ধরা হচ্ছে :
কবির খান: ‘চাক দে ইন্ডিয়া’ ছবির কবির খান ভারতের জাতীয় নারী হকি দলের প্রশিক্ষক। তিনি ভারতীয় মুসলমান। তিনি যখন পুরুষ হকি তে জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন তখন পাকিস্তানের কাছে হেরে যাওয়ায় তাকে 'বিশ্বাসঘাতক' অপবাদ সহ্য করতে হয়েছে শুধুমাত্র তিনি মুসলমান বলে। ছবির শেষে তিনি ফিরে আসেন নিজের শহরে, নিজের বাড়িতে জয়তিলক ধারণ করে।
কারণ নারী হকি দলকে দিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তিনি ভারতের করিয়েছেন, প্রমাণ করেছেন তিনি দেশপ্রেমিক নাগরিক এবং ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে জাতীয় পরিচয় তার কাছে অনেক বড়। ছবিটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য ছিল অসাধারণ। ‘চাক দে ইন্ডিয়ার পরিচালক ছিলেন সিমিত আমিন ও রব মিলার (খেলার দৃশ্যে)। কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখেন জয়দীপ সাহানি। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির প্রযোজক আদিত্য চোপড়া। কবির খান চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ খান।
বাদশাহ খান: ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খুদা গাওয়া’ ছবিটি ছিল অমিতাভ বচ্চনের ফিরে আসার সিনেমা। বলিউডের প্রথাগত মশলাদার চলচ্চিত্র হলেও এটি বাদশাহ খান চরিত্রটির জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র বাদশাহ খান একজন আফগান যিনি প্রেমিকা বেনজিরের (শ্রীদেবী) বাবার হত্যাকারীকে ধরতে ভারতে আসেন। জেল ভেঙে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় তার হাতে খুন হয় এক দুর্বৃত্ত।
পুলিশ বাদশাহকে গ্রেফতার করে। কিন্তু বাগদত্তার কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তাকে ফিরতেই হবে দেশে। সে সময়ের কারারক্ষক রণবীর সিং (বিক্রম গোখলে) তাকে মুক্তি দেন এই প্রতিশ্রুতিতে যে বাদশাহ ফিরে আসবেন বিয়ের পরই। ভারতীয় বন্ধুর কাছে প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য ঠিকই ফিরে আসেন বাদশাহ খান এবং ভারতের কারাগারে দীর্ঘ বিশ বছর বন্দী থাকেন।
এই ছবির পরিচালক ছিলেন মুকুল এস আনন্দ। রাজকুমার বেদি ও সন্তোষ সরোজ লিখেছিলেন কাহিনি। সংলাপ ছিল সন্তোষ সরোজের। ছবিটির প্রযোজক ছিলেন নাজির আহমেদ ও মনোজ দেশাই। শ্রীদেবীর ছিল দ্বৈত অভিনয়। বাদশাহ খানের চরিত্রে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। এ ছবির গানগুলো এখনও জনপ্রিয়।
রিজওয়ান খান: নাইন ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসীভীতি নিয়ে নির্মিত ছবি ‘মাই নেইম ইজ খান’। শাহরুখ-কাজল জুটি অভিনীত ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র অটিস্টিক রিজওয়ান খানের ভূমিকায় অভিনয় করেন শাহরুখ খান। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভারতীয় রিজওয়ানের সন্তান মুসলমান বিদ্বেষের শিকারে পরিণত হয়ে নিহত হয়। মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী নয় এটি প্রমাণ করতে মরিয়া রিজওয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার অভিযানে নামে।
অবশেষে সে প্রমাণ করে তার নাম খ|ন হলেও সে সন্ত্রাসী নয়, বরং শান্তিপ্রিয় নাগরিক। ছবিটির পরিচালক ছিলেন করণ জোহর, চিত্রনাট্যকার শিবানী বাথিজা। সংলাপ লেখেন করণ জোহর ও শিবানী বাথিজা। ‘মাই নেইম ইজ খান অ্যান্ড আই অ্যাম নট এ টেরোরিস্ট’ - অটিস্টিক রিজওয়ানের মুখে এ সংলাপটি সে সময় ছিল বেশ আলোচিত। ২০১০ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি।
লতান মির্জা: ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই’ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র সুলতান মির্জা। মুম্বাইয়ের এক সময়ের গ্যাংস্টার হাজী মাস্তান ও দাউদ ইব্রাহিমের জীবনের ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি নির্মিত হয়। সত্তরের দশকে মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিয়ে নির্মিত হয় সিনেমাটি।
সে সময়ের মুম্বাইয়ের ডন সুলতান মির্জার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন অজয় দেবগন। সে সময় অপরাধ জগতে একজন মুসলমান হিসেবে সুলতান মির্জার অবস্থান, তার উদারতা, প্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক দ্বন্দ্ব, মানসিক টানাপড়েনের দারুণ চিত্রায়ন এ ছবি। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির পরিচালক মিলান লুথরিয়া।
জারা হায়াত খান: প্রেমকাহিনি ‘ভিরজারা’র অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র জারা হায়াত খান (প্রিতি জিনটা)। পাকিস্তানের নাগরিক জারা ভারতে বেড়াতে এসে প্রেমে পড়েন ভারতীয় বিমানবাহিনীর সদস্য ভির প্রতাপ সিং (শাহরুখ খান)-এর। জারাকে পেতে পাকিস্তানে পাড়ি জমান ভির। কিন্তু জারার পাণিপ্রার্থী রাজা সারাজির (মনোজ বাজপেয়ী) চক্রান্তে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে তাকে বিশ বছর বন্দী থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারে।
পাকিস্তানের একজন আইনজীবী সামিয়া সিদ্দিকির (রানি মুখার্জি) ঐকন্তিক চেষ্টায় মুক্তি পান ভির। জারা এত বছর কী করছিলেন? তিনি ভিরকে মৃত ভেবে চলে গিয়েছিলেন ভারতে। সেখানে ভিরের চাচা-চাচীর মৃত্যুর পর তাদের প্রতিষ্ঠিত একটি বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা করছিলেন এবং তাদের আদর্শকে ধরে রেখেছিলেন। ‘ভিরজারা’ ছবির মূল কথা হলো প্রেমের অবস্থান ধর্মীয় ভেদাভেদ ও জাতিগত পরিচয়ের উর্ধে। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া মেলোড্রামাটিক ছবিটির পরিচালক ছিলেন ইয়াশ রাজ চোপড়া। কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার আদিত্য চোপড়া। ছবিটির প্রযোজক ছিলেন ইয়াশ রাজ চোপড়া ও আদিত্য চোপড়া। -বিডি নিউজ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি