বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫৪:২২

ফিরোজা বেগমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ফিরোজা বেগমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

জুবায়ের আল মাহমুদ রাসেল: উপমহাদেশের কিংবদন্তি নজরুলগীতি শিল্পী ফিরোজা বেগমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের প্রথিতযশা এই শিল্পী ভারতীয় উপমহাদেশে আগামী প্রজন্মের কাছে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকিরূপ। ২০১৪ সালের আজকের এই দিনে গুণী এই মানুষটি সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায় ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান।

জন্ম ও পারিবারিক জীবন:
ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে। তাঁর বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মায়ের নাম বেগম কওকাবুন্নেসা। শৈশবেই তাঁর সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে। ১৯৫৪ সাল থেকে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। কমল দাশগুপ্ত ২০ জুলাই, ১৯৭৪ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। এ দম্পতির তিন সন্তান - তাহসিন, হামীন ও শাফীন রয়েছে। হামিন ও শাফিন - উভয়েই রকব্যান্ড দল মাইলসের সদস্য।

সঙ্গীত জীবন:
১৯৪০-এর দশকে তিনি সঙ্গীত ভুবনে পদার্পণ করেন। ফিরোজা বেগম ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কন্ঠ দেন। ১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এ রেকর্ডের গান ছিল- 'ম্যায় প্রেম ভরে, প্রীত ভরে শুনাউ' আর 'প্রীত শিখানে আয়া'। দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহন করেন। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুলসঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। নজরুলসঙ্গীত ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে কন্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাঁর ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গ-সংস্কৃতি-সম্মেলন-মঞ্চে কমল দাশগুপ্তের ছাত্রী ও সহধর্মিণী হিসেবে তিনি ছিলেন মূখ্যশিল্পী। উভয়ের দ্বৈতসঙ্গীত সকল শ্রোতা-দর্শককে ব্যাপকভাবে বিমোহিত করেছিল।

পুরস্কার ও সম্মাননা:
গুণী এই মানুষটি তার সঙ্গীত জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে-

• স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক
• নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার
• সত্যজিৎ রায় পুরস্কার
• নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক
• বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক
• সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার (একাধিকবার)
• নজরুল আকাদেমি পদক
• চুরুলিয়া স্বর্ণপদক
• বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট

এ ছাড়াও জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক, ২০১১ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন। ১২ এপ্রিল ২০১২ তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে "বঙ্গ সম্মান" পুরস্কার গ্রহণ করেন।

মৃত্যু: কিডনি জটিলতায় ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

নজরুলের গানের এই পাখিকে বলা হতো উপমহাদেশীয় সঙ্গীতের রাজেন্দ্রাণী। সঙ্গীতের সব শাখাতেই ছিল তার পদচারণা। নজরুলের গানের প্রসঙ্গ এলে স্বভাবতই ভেসে ওঠে তার ছবি। তার মৃত্যু নজরুল সঙ্গীতকে সঠিক সুর-তালসহ আগামী প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়া সত্যিই দূরুহ।
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে