বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬, ১২:১৭:১৬

প্রথম গান রেকর্ডিং করে একটি চকলেট পেয়েছিলেন কিংবদন্তি হাদী

প্রথম গান রেকর্ডিং করে একটি চকলেট পেয়েছিলেন কিংবদন্তি হাদী

ফয়সাল রাব্বিকীন : আমি জীবনের প্রথম রেকর্ডিংয়ে কন্ঠ দিয়ে বিনিময়ে কি পেয়েছিলাম এখনকার সংগীত সংশ্লিষ্টদের তা কল্পনারও বাইরে। কেউ হয়তো অনুমান করেও বলতে পারবেন না। প্রথম গান রেকর্ডিংয়ে কোনো সম্মানী নয়, একটি চকলেট পেয়েছিলাম। নিজের প্রথম গান রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এমনটাই বলছিলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী।

তিনি আরও বলেন, আসলে গান করে টাকা উপার্জন করতে কখনও চাইনি। শুধুমাত্র ভালোবাসার কারণেই গান গাইতাম। গান সুন্দর ও নিখুঁতভাবে গাওয়াটাই যেন আমার উপহার ছিলো। প্রথমবার গান গেয়ে যেদিন সম্মানী আমাকে দেয়া হয়েছিলো সেটি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জোর করেই সম্মানীটা আমাকে দেয়া হয়। গান গেয়ে অর্থ উপার্জনের চিন্তা করলে সেক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন টিকে থাকা যাবে না। বরং কাজ মনযোগ দিয়ে করলে সফলতাই তার পিছনে ছুটবে।

নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন সৈয়দ আবদুল হাদী। সংগীতে পথ চলার ৫৫ বছরেরও বেশি সময় পার করেছেন। এতটা বছর পেরিয়ে এসে এখনও অনবদ্য গতিতে গান করে চলেছেন তিনি।

দীর্ঘদিন পর নতুন অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতাদের সামনে হাজির হচ্ছেন এ শিল্পী। তবে নতুন গান নয়, নিজের গাওয়া পুরোনো গান নিয়েই ‘দ্য লেজেন্ড সৈয়দ আবদুল হাদী’ শিরোনামের অ্যালবাম করছেন তিনি। ৪৫টি গান নিয়ে অচিরেই চারটি সিডিতে এ অ্যালবামটি বাজারে ছাড়বে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বাংলা ঢোল।

এ বিষয়ে সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, কত গান গেয়েছি এই অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, তার কোনো হিসাব রাখিনি। ষাট, সত্তর ও আশির দশকে বেতার আর টেলিভিশনে গাওয়া অনেক জনপ্রিয় গান হারিয়ে গেছে বাণিজ্যিক রেকর্ডের অভাবে। সংকলনটিতে সেই সব গান থেকে কিছু নতুন করে গাইলাম, সেই সঙ্গে চলচ্চিত্রের কিছু গান। কিছুদিনের মধ্যে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এ অ্যালবামটির মোড়ক উন্মোচন হবে। পেশাগতভাবে ১৯৬০ সাল থেকে গানে সৈয়দ আবদুল হাদীর যাত্রা শুরু। এরপর টিভি, রেডিও, চলচ্চিত্রে গেয়েছেন নিয়মিত। আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম অগ্রনায়ক বলা হয় তাকে।

স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০০ সালে পেয়েছেন একুশে পদক। এ পর্যায়ে এসে চলতি সময়ের গান সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আসলে আগের মতো করে ভাবাই যায় না। সময়ের পরিবর্তনের ফলে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। আগে সবকিছুই হতো একটি টিমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে। গীতিকার, সুরকার সংগীত পরিচালক, চলচ্চিত্র পরিচালকসহ সবাই উপস্থিত থাকতেন। একটি গানের রেকর্ডিং হতো দুই দিন ধরে। আমার জীবনের প্রথম গানটি প্রায় ৯০ বার গাইতে হয়েছিল আমাকে। এখনতো গান রেকর্ড হয় জোড়া তালি দিয়ে দিয়ে। ভেঙ্গে ভেঙ্গে কাজ হচ্ছে। এভাবে করলে গানের আবেদনটা শতভাগ থাকে না। সব কিছুই কেমন যেন অস্থির হয়ে গেছে।

এখান থেকে বের হয়ে আসার উপায় কি-এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, গান এখন তরল হয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। গান জনপ্রিয় করার জন্যই এখন বেশিসংখ্যক গান তৈরি হচ্ছে। তৈরি করতে হবে ভালো গান, জনপ্রিয় গান নয়। ভালো গান যুগের পর যুগ টিকে থাকবে। আসলে এখন সময়ের জালে আমরা বন্দি। মানুষের চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে মূল্যবোধ এবং বিনোদনের সংজ্ঞা বদলেছে। আসলে সময়ের সঙ্গে চলতে কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি হলো গান এখন শতভাগ বিনোদন হয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। এখন গানে ভাষা, উচ্চারণ বিকৃতি ও নকল গান হচ্ছে। এটা অসহনীয় একটি বিষয়। এর মাধ্যমে মাতৃভাষাকে অপমান করা হয়।

চলতি প্রজন্মের শিল্পী-সংগীত পরিচালকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি থাকবে? সৈয়দ আবদুল হাদী বলেন, আমি সব সময় একটা কথা বলি। জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটলে হবে না। কাজের পেছনে ছুটতে হবে। তাহলে সফলতা ধরা দিতে বাধ্য। গান করতে হবে মন থেকে, ভালোবাসা থেকে। গানকে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার ভাবলে হবে না। এটা করলে হয়তো সাময়িক জনপ্রিয়তা মিলবে, কিন্তু দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব হবে না। -এমজমিন
২৭ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে