বিনোদন ডেস্ক : কলকাতায় এক সন্ধে। ইমরান হাসমি অনেকটা রিল্যাক্সড। তিন বছরের ছেলের ক্যানসার ধরা পড়ল যেদিন, সেই দিনের তুলনায় অন্তত! ভয়ঙ্কর দিনগুলো নিয়ে বই লিখেছেন। 'দ্য কিস অফ লাইফ'। ভাস্বতী ঘোষ-এর সঙ্গে কথা শুরু হল তাই নিয়েই...
পুত্র এবং বেঁচে থাকার চুমু
অন্য সময়: বইটার নাম দিলেন 'দ্য কিস অফ লাইফ'। কেন?
ইমরান: নামটার পিছনে গল্প আছে একটা৷ সারাক্ষণ নাম ভাবতাম৷ একটা নাম যেমন ভেবেছিলাম সুপারহিরো কিডস৷ কিন্তু বই প্রকাশক সংস্থা বলত- পাঠকদের একাংশ হয়তো এই নামটার মানে বুঝবে না! আমি ছেলেকে সুপারহিরো মনে করি৷ তাই এমন একটা নাম মাথায় এসেছিল৷ এরপর একদিন রান্না করতে করতে এই নামটা মাথায় চলে এল...
অন্য সময়: বাড়িতে রান্না করতে হয় নাকি আপনাকে?
ইমরান: অমলেট৷ ওই পর্যন্তই বউ আমাকে অ্যালাও করে!
অন্য সময়: ইমরান হাসমিকে সিরিয়াল কিসার বলা হয়! অনস্ক্রিনে কোন নায়িকাকে চুমু খেলেন ইমরান, চুমুটা কত বড় এসব নিয়ে নিত্য চর্চা৷ এসব আলোচনার কতটা প্রশংসা আর কতটা টিজ, সেটা বোঝা যায় না সবসময়৷ আপনি কি বইয়ের নামটা এমন রেখে তাঁদের একটা কড়া উত্তর দিলেন?
ইমরান: (হালকা হাসি) মারণরোগের মুখ থেকে আয়ানকে (ইমরান পুত্র) ফিরতে দেখা, ওকে জড়িয়ে ধরা, কোলে নিয়ে চুমু খাওয়া...এই চুমুটাই সেরা মনে হয়!
অন্য সময়: পুত্রের অসুস্থ থাকার সময়ে আপনার ডিপ্রেশন হয়নি? ডাক্তার দেখাতে হয়নি?
ইমরান: আমি সেটা আন্দাজ করতে পারি৷ তখন হয়তো বুঝতে পারতাম না৷ আসলে ডিপ্রেশনে থাকার সময় কিন্তু বোঝা যায় না যে আমি ডিপ্রেসড!
অন্য সময়: ক্যানসার-ও বোঝা মুশকিল একদম শুরুর দিকে...
ইমরান: আয়ানের ক্ষেত্রে আমরা সেকেন্ড স্টেজে বুঝতে পেরেছিলাম যে ও ক্যানসারে আক্রান্ত৷ এখন কথা বলতে গিয়ে মনে হচ্ছে পুরো সময়টা সাংঘাতিক দুঃখে ছিলাম, ডিপ্রেসড ছিলাম৷ কেমন মনে হয় ক্যানসার সকলের মধ্যে গ্রো করছে৷ কারও সেটা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে৷ কারও নেই৷ (গলায় হতাশা)
অন্য সময়: একজন বাবা যখন জানতে পারেন, তাঁর ছোট্ট ছেলের ক্যানসার, সেই মুহূর্তে ঠিক কী মনে হয়?
ইমরান: আই ওয়াজ নাম্ব! অ্যাঙ্গার, গিল্ট৷ মনে হয়, কেন আমার ছেলের এমন হল মনে হয় বাবা হিসেবে কী ভুল করেছি৷ সবকিছু তো স্পুনফুড করিয়েছি৷ কী ভুল খাওয়ালাম৷ কী ভুল করলাম৷ যদিও সেটা সত্যি নয়৷ তবে যে ধারনাটা আমাদের দেওয়া হয়েছে- আয়ানের ক্ষেত্রে জেনেটিক ম্যালফাংশান ছিল যখন ও মাতৃগর্ভে, তখন থেকেই৷
অন্য সময়: অনেকদিন চিকিত্সার পর এখন আপনার ছেলে সুস্থ৷ শান্ত হয়ে গিয়েছে? নাকি বেশ দুষ্টু?
ইমরান: এক্সট্রোভার্ট৷ বাড়িতে এক মিনিটও বসে না৷ সারাক্ষণ দৌড়ে বেড়ায়৷ দেওয়াল বেয়ে ওঠার চেষ্টা করে৷ খুব লাইভলি, ফান কিড৷ চিকিত্সার পরও কিছু বদলায়নি৷ আমরা ভেবেছিলাম, এতো যন্ত্রণায় ও পালটে যাবে৷ কিন্তু ও আরও ভাইব্রেন্ট হয়ে গেল৷ কিছু একটা ক্যারিশমা আছে৷
অন্য সময়: 'দ্য কিস অফ লাইফ' যেমন বই, তেমনই কোনও ডকুমেন্টারি বা সিনেমা তৈরির প্ল্যান করছেন?
ইমরান: এমন কিছু করব যেটা বইয়ের এক্সটেনশন হতে পারে৷ কিন্তু বোরিং ডকুমেন্টারি নয়৷ এমন কিছু যার ইমোশনাল কোশেন্ট বেশি৷
ক্যানসার বনাম ব্যস্ততার চুমু
অন্য সময়: একদিন 'আজহার' ছবির শ্যুটিং থেকে ফেরার সময় বইয়ের একটা অংশ লিখেছিলেন আপনি৷ এবার বলিউডে আপনার কাজের কথায় আসি৷ দর্শক তো 'আজহার' ছবিটা পছন্দ করেননি৷ আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
ইমরান: মিক্সড রিঅ্যাকশন পেয়েছি আমি৷ আজহারের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু দর্শকের একটা পারসেপশন ছিল৷ তাঁরা হলে গিয়ে দেখেছেন পারসেপশনের সঙ্গে ছবি মেলেনি৷ অনেকটা এরকম, আপনি যদি মনে করেন কেউ গিলটি, একটা ছবিতে যদি তাকে একটা উচ্চতায় দাঁড় করানো হল, হিরো দেখানো হয়, তা হলে দর্শক অনেকসময় পছন্দ করেন৷ আজহারকে যাঁরা আরেকটা সুযোগ দিতে চাইছিলেন, তাঁদের ছবিটা পছন্দ হয়েছে৷ অন্যদিকে যাঁদের ধারণায় আজহার ম্যাচফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত, সেরকম অনেকের কাছেই সমালোচিত হয়েছি আমরা৷ যেটা আমরা ছবি তৈরির সময় খেয়াল রাখিনি৷ আর ছবির মুক্তির পর কোনওরকম পরিবর্তন সম্ভব ছিল না৷
অন্য সময়: এতো যে বিতর্ক হল, আজহার স্বয়ং কী বললেন?
ইমরান: আমার সঙ্গে তো দেখা হল৷ হি ওয়াজ প্রিটি হ্যাপি৷ কথোপকথনটা পজিটিভ ছিল৷
অন্য সময়: বাড়িতে যখন ভয়ঙ্কর দুর্যোগ আসে, কেরিয়ারে তখন পিছিয়ে পড়া অবশ্যম্ভাবী কি?
ইমরান: বরং এরকম সময় কাজে ডুবে যাওয়া একটা থেরাপির মতো কাজ করে৷ আয়ানের বিদেশে চিকিত্সা চলছে তখন৷ শ্যুটিং করতে হবে৷ তাই ওকে মিথ্যে বলেই ওর কাছ থেকে চলে এসেছিলাম কিছুটা সময়৷ স্কাইপে যোগাযোগ রাখতাম৷ কিন্ত্ত গিল্ট ফিল করতাম৷ ফিরে গিয়ে বলেছি খেলনা কিনতে গিয়েছিলাম৷ আমার কেরিয়ারে পিছিয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয় না!
অন্য সময়: কিন্ত্ত শ্যুটিং ফ্লোরে মন বসত?
ইমরান: এত বছর শ্যুটিং করার পর ক্যামেরার সামনে যে কোনও অভিনেতাই সিনেমার চরিত্র হয়ে যায়৷ আসলে অভিনেতাদের জীবনে এতরকম সমস্যা থাকে প্রতিনিয়ত, সেটা সরিয়ে রেখেই একটা চরিত্রে অভিনয় করতে তাঁরা অভ্যস্ত৷ আমি ওইটুকু সময় ভুলে যেতাম বাড়িতে কী চলছে৷
ক্যাটরিনা এবং চুমু
অন্য সময়: পর্দায় যেসব নায়িকাকে চুমু খেয়েছেন তাঁর বাইরে আপনি আর কোন নায়িকাকে চুমু খেতে চান?
ইমরান: ক্যাটরিনা কাইফকে৷
অন্য সময়: কেন?
ইমরান: কেন? ভালো প্রশ্ন!(ভাবলেন কিছুক্ষণ) আমি জানি না৷ উত্তর খুঁজে পেলে বলবো৷ মানে, ঠিক একটা কারণ খুঁজে পাচ্ছি না, কেন ক্যাটরিনা!
অন্য সময়: কিছুক্ষণ আগে বলছিলেন রণবীর কাপুর, রণবীর সিং বা বরুণ ধাওয়ানের কাজ খুব একটা দেখেননি! ওঁরা কি আপনার কেরিয়ারে থ্রেট?
ইমরান: কেউ কারও কেরিয়ারে থ্রেট নয়৷ আবার আপনিই সবচেয়ে বড় থ্রেট যদি নিজেকে ঠিকভাবে ব্যবহার করেন! নিজের ওপর বিশ্বাস থাকলে, এক্সটারনাল কম্পিটিশন ম্যাটার করে না৷ ফর মি আই ডোন্ট সি এনিওয়ান অ্যাজ কমপিটিশন৷ আমি কোনও রেস শুরু করতে চাই না, যেখানে সর্বক্ষণ আমায় দেখতে হবে অন্য লোকটা কী করছে৷ ওটা কাজের ক্ষতি করে৷ আমার মনে হয় সবাই সবার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করছে৷
অন্য সময়: আপনার মনে হয় না ভালো অভিনেতা হওয়া সত্ত্বেও বলিউডে আপনাকে ঠিকমতো ব্যবহারই করল না?
ইমরান: দ্যাটস সাবজেকটিভ৷ আমি তো অ্যাওয়ার্ড ফাংশানকেও গুরুত্ব দিই না৷
অন্য সময়: কেন?
ইমরান: গুরুত্ব দিই না৷ অ্যাওয়ার্ড ফাংশনের ভেতরের পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পর সেটাকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ ও নেই! একজন লে ম্যান, যে বাইরে থেকে পুরো বিষয়টা দেখছেন, তাঁর জন্য হয়তো এইসব অ্যাওয়ার্ড সাংঘাতিক গুরুত্ব রাখে৷ কিন্তু আমি আমার মত থেকে একচুলও সরতে চাই না৷ তাই ওই ডিপার্টমেন্টটায়, আপনি বলতে পারেন আমি ততটা জায়গা করতে পারিনি৷ কিন্তু আমি সবসময় পিপলস অ্যাক্টর৷ ১৪ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। -এই সময়
০৫ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম