ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : ‘হঠাৎ বিকট শব্দে আমি আঁতকে উঠি। পরে দেখি ট্রেন অন্ধকার হয়ে গেছে। আমার ওপর অনেক যাত্রী, তাই শ্বাস নিতে পারছিলাম না। অন্ধকারে এদিক-ওদিক ছুটছিলাম কিন্তু ট্রেন থেকে বের হওয়ার কোনো পথ বা দরজা-জানালা দেখছিলাম না।’
‘ভাবছিলাম মৃত্যু এখনই হয়ে যাবে। এমন সময় কিছু লোক টর্চ মেরে আমাকে ট্রেনের জানালা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে বের করল। বুঝতে পারলাম বেঁচে গেছি। কিন্তু তখনও বুঝতে পারেনি ট্রেনে কি হয়েছে। ট্রেন থেকে বের হওয়ার পর দেখলাম শত শত ট্রেনযাত্রীর চিৎকার-আর্তনাদ আর কান্নার আজাহারি। তখন বুঝলাম ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
কথাগুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রী সুব্রত চক্রবর্তী (৪২)। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার সাধন চক্রবর্তীর ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
আহত সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, সোমবার রাতে হবিগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রাতে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী হয়ে উঠেন। ট্রেনের সিটে বসে পাশের যাত্রীদের সঙ্গে গল্প- গুজব করে সময় কাটছিল। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মকন্দপুর রেল স্টেশনের নিকটে পৌঁছলে হঠাৎ বি'ক'ট শব্দে আমি আ'ত'ঙ্কি'ত হয়ে পড়ি।
তিনি বলেন, ঘটনার ১০ মিনিট পর আমাকে স্থানীয় লোকজন ট্রেন থেকে টেনে নামালে বুঝতে পারি ট্রেনটি দু'র্ঘ'ট'নায় পড়েছে। এ সময় আমার হাত ও পা দিয়ে র'ক্ত বের হচ্ছিল। পকেটের রুমাল দিয়ে আমি হাত বাঁধলাম। ট্রেন থেকে নামানোর পর আমি কিছুটা অজ্ঞান ছিলাম। পরে লোকজন মাথায় পানি দিলে আমার জ্ঞান ফিরে আসে।
সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, তখন দেখলাম ঘটনাস্থলে শত শত যাত্রী চিৎকার করছে। কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কেউ বা গু'রু'তর আহ'ত হয়ে কান্না করছে। স্থানীয় অনেক লোক ট্রেনের ভিতর থেকে আ'হ'ত ও নি'হ'ত যাত্রীদের বের করছে। অনেক নারী-পুরুষ দৌড়াদৌড়ি করছে।
তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছিল না লোকজন। একপর্যায়ে আমাকে পাশের এক বাড়িতে নিয়ে যায় কিছু লোক। আমি ভ'য়ে কা'ত'র হয়ে গেলাম। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ দমকল বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে আসতে দেখলাম।