সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩, ০৪:৩৭:২৫

মায়ের টিউশনির টাকায় সাদের জিপিএ ৫

মায়ের টিউশনির টাকায় সাদের জিপিএ ৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : তখন পিএসসি পরীক্ষার্থী সাদ। ঠিক পরীক্ষার সময়টাতে মারা যান বাবা। তিন সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মা আসমা আক্তার বৃষ্টি। তবে তিনি দমে যাননি।

সন্তানদের কথা চিন্তা করে আয়ের পথ বের করেন। নিজে খুব একটা পড়ালেখা না করলেও স্বামীর অনুপ্রেরণা আর সন্তানদের পড়ানোর অভ্যাস থেকে শুরু করেন টিউশনি।

মায়ের সেই টিউশনির টাকায় পড়ালেখার খরচ চলে সাজেদুল ইসলাম সাদের। এমনকি চারজনের সংসারও চলে এ টাকায়।

একদিকে সংসার চালানো অন্যদিকে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে বেশ বেগ পেতে হয় বৃষ্টিকে। সেই মানুষটির চোখে এখন আনন্দাশ্রু। ছোট সন্তান সাদ এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সাদের স্বপ্ন সে একজন প্রকৌশলী হবে।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে কথা বলার সময়ও ছেলের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে কথা আটকে যাচ্ছিলো মা বৃষ্টির। বললেন, ‘তিনি অনেক অনেক বেশি খুশি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর সরকারি কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সাজেদুল ইসলাম সাদ। উপজেলার চরগোসাইপুর গ্রামের প্রয়াত ছায়েদুর রহমানের তিন সন্তানের মধ্যে সাদ সবার ছোট। ছায়েদুর রহমান ছিলেন এয়ারফোর্সের সার্জেন্ট।

সাদের পরিবার বর্তমানের তাদের নানার বাড়ি উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে বসবাস করে। সাজেদুলের বড় ভাই ঢাকায় একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন। অনার্স পড়ুয়া একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।

সাজেদুলের মা আসমা আক্তার বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ি। শশুর-শাশুড়ি ছিল না। একমাত্র দেবর কিন্ডার গার্টেনে চাকরি করতেন। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসি। নিজে খুব একটা পড়ালেখা না জানলেও যতটুকু জানি সে জ্ঞান কাজে লাগিয়ে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে আমি পড়াই। আর এ টাকা দিয়েই চলে আমার সংসার।’ 

তিনি আরো জানান, ‘বড় ছেলে বিয়ে করে বৌ নিয়ে ঢাকায় থাকে। সাদের পড়ার খরচ আমার টিউশনির টাকা দিয়েই চালাতে হতো। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেখে কোচিং করাতে তাকে মাসে ছয়-সাত হাজার টাকা দিতে হতো। 

আমার একজন আত্মীয় ও একজন শিক্ষক সাদকে সব বিষয়ে বেশ সহায়তা করেছে। মা হিসেবে যতটুকু করার দরকার সেটা আমি করতে পারিনি। সকল প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে সাদ তার মতো করে এগিয়ে গেছে।’

নবীনগরের স্কুল শিক্ষক মো. স্বপন মিয়া বলেন, ‘আমার কাছে আসার পর তাকে শুধু বুঝাতাম। কিছুদিন পড়িয়েছিও। সাদের এমন ভালো ফলাফল তার মায়ের কষ্টের ফল। সাদের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন যেন পূরণ হয় সেই দোয়া করি।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে