চাঁদপুর : স্কুলের বকেয়া বেতন না দেয়ায় মাঠে দাঁড় করিয়ে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করার পর ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লজ্জা ও অপমানে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার (১৩)। এ ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানায় স্কুলছাত্রী সাথীর বাবা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার বাদী হয়ে ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা দায়ের করেছেন।
এতে চার জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে যান চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মণ্ডল, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার আশ্বাস দেন। পরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সাথীর দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এরপর কর্মকর্তারা বাগাদী ইউনিয়নের বাগাদী গনি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা সচিব ৩১ আগস্ট বুধবার চাঁদপুর আসবেন এবং ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সাথীর বাড়িতে যাবেন বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মণ্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক যা করা প্রয়োজন তা করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, বকেয়া বেতম না দিতে পারার জন্য শাস্তি এবং অপমানের যে অভিযোগ ছিল প্রাথমিকভাবে তার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের পরই পুরো বিষয়টি জানানো হবে।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অলিউল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে চার জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তদন্তের জন্য স্কুলের সিসি ক্যামেরাসহ প্রয়োজনীয় সব উপাদান সংগ্রহ করা হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল গাজী বলেন, মেয়ের বাবা জানিয়েছেন, বেতনের জন্য তার মেয়েকে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখে। গত সোমবার ৩৮০ টাকা তাকে দিয়েছিল তার বাবা, কিন্তু ২০ টাকা কম ছিল। এ জন্য সে সোমবার পরীক্ষা দিতে যায়নি।
স্কুলের বকেয়া বেতন না দেয়ায় মাঠে দাঁড় করিয়ে শাস্তি দেয়ায় লজ্জা-অপমানে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার (১৩)।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে চাঁদপুর সদরের বাগাদী গ্রামের শেখ বাড়িতে আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে।
সে বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে পড়ত।
জানা গেছে, পরীক্ষার নির্ধারিত ফি ৪০০ টাকা। এর মধ্যে সাথী ৩২০ টাকা পরিশোধ করে। বাকি থাকে ৮০ টাকা। এ টাকার জন্য সাথীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গত রোববার বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন রোদের মধ্যে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন। পরে অন্য শিক্ষকরা তাদের শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যান।
সাথীর মা শায়লা বেগম বলেন, সকালে সাথী বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে তার কাছে পরীক্ষার ফি পরিশোধ করার জন্য ৮০ টাকা চায়। তিনি বাড়ির অন্যদের কাছে টাকা জোগাড় করার জন্য যান। তখন সাথী বিদ্যালয়ে না গিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়।
ছাত্রীর বাবা জানান, রোববার দুপুরে পাওনা পরিশোধ না করায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে মাঠে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখে। সোমবার সকালে মেয়েকে স্কুলের বকেয়া পাওনা পুরো টাকা দিতে পারেননি। স্কুলে গেলে আবারো অপমান হতে হবে এ লজ্জায় সে দুপুর ১টায় নিজ ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
এ খবর শোনার পর এলাকাবাসী দুপুর ২টায় স্কুলের গেইট, দরজা, জানালা ভাঙচুর করে। এসময় স্কুল বন্ধ করে স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়িতে চলে যান।
৩০ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম