চাঁদপুর : মেয়ে হারানোর শোকের মধ্যেই ‘আসল মা’ প্রমাণের ‘পরীক্ষা’ দিতে হচ্ছে চাঁদপুরের আত্মহত্যা করা স্কুল ছাত্রীর মাকে। কারণ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছে, স্কুলের ফি দিতে না পারার শাস্তি ভোগের কারণে নাকি সাথী আত্মহত্যা করেনি। তারা বলে বেড়াচ্ছে, সৎ মায়ের সংসারের অশান্তির কারণে সাথী আত্মহত্যা করেছে। সাথীর পরিবার ও তার প্রতিবেশিরা বলছে, এ ধরনের কথাবার্তা ভিত্তিহীন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের মধ্য বাগাদী গ্রামের গণি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত সাথী। সোমবার সে আত্মহত্যা করে। সাথীর সহপাঠীদের ভাষ্য, পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় সাথীকে শাস্তি দেয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সাথীর বাবা দেলোয়ার হোসেনের অভিযোগ, ওই শাস্তি সইতে না পেরে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মেয়ে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি সাথীর মা। একটু পরপরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। ওই বাড়ির গৃহবধূ শামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘সাথী আমাদের চোখের সামনে বড় হইছে। অথচ স্কুলে বাচ্চাদের বলা হচ্ছে, সাথীকে তার সৎ মা পিটিয়ে মারছে।’ তিনি বলেন, ‘সাথীর বাবা একেবারে গরীব। ভাত পায় না; দুইটা বিয়ে করবো কোত্থেকে?
প্রতিবেশী ময়না বেগম ও রূপালী বেগম বলেন, মেয়ে হারিয়ে পুরো পরিবার বিপর্যস্ত। তার ওপর এ ধরনের অপপ্রচার কোনওভাবেই মানা যায় না। তারা বলেন, অপমান সইতে না পেরে সাথী আত্মহত্যা করেছে।
সাথীর বড় বোন তছলিমা বেগম বললেন, ‘আমরা মার পেটের তিনডা বোন হইছি। আমার বাপের একটা পুতও নাই। তিনটা বোনে বাবা-মাকে চাইয়া রাখতাম। আমার বোনেরে পড়তো পাঠাইছে। আমার বোনেরে স্যারে কিসব কথা কইলে, আমার বইনে আইয়া ফাঁস দিয়া মরলে। আমার বোইনেরে, স্যারে বলে, টাকা দিতে না পারলে বাড়িতে গিয়ে ঘুমা। ৮০ টাকার জন্য কান ধইরা দাঁড় করে রাখে। এই অপমান সইতে না পেরে বইনে আমার মইরা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার নিজের বোন। আমার বাপেও দুই বিয়া করে নাই। আমার মাও দুই বিয়া বয় নাই। আমার মার পেটের বোন নিয়া গেছে, তারা এখন এমন করতাছে- এই কেসটাকে সরানোর জন্য। আমরা সরকারের কাছে বিচার চাই।’
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, টিউশন ফি দিতে না পারার জন্য তাকে যে অসম্মান করা হয়েছে, সে জন্যই মেয়েটি এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।’ -বাংলা ট্রিবিউন
০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম