চাঁদপুর: প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এবার নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পেরেছে মা ইলিশ। বিশেষ করে অতি বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র থেকে অধিক মা ইলিশ ডিম ছাড়তে নদীতে এসেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের ১১ সদস্য বিশিষ্ট গবেষণা দল দেশের ৯টি পয়েন্টে গবেষণামূলক জরিপ চালিয়ে জানিয়ছে, এবার ৪৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে এবার ইলিশের পোনা বা জাটকা উৎপন্ন হবে ৪০ হাজার কোটি। যা গতবারের চেয়ে আড়াইগুণ বেশি। আগামী জাটকা মৌসুমে এসব পোনা সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে প্রতিবছরই সহনশীল পর্যায়ে ইলিশ উৎপাদন হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ হোসেন খান বলেন, চাঁদপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৪টি প্রধান প্রজনন কেন্দ্রে ২২ দিন ইলিশসহ সব মাছ ধরা বন্ধ ছিল। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার বিজ্ঞানি দল মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন অংশ থেকে নমুনা ও তথ্য-উপাথ্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত জরিপ করে ফলাফল দিয়েছে। তাতে দেখা যায় এ বছর ডিম ছাড়ার ইলিশের পরিমাণ ৪৪.৪৭ শতাংশ যা বিগত বছরের তুলনায় আড়াইগুণ বেশি।
বিশেষ করে এ বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ অধিক বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া এবং পানির প্রবাহ সব মিলে পরিবেশ ছিল স্বাভাবিক। যার কারণে অধিক পরিমাণ মা ইলিশ সমুদ্র থেকে নদীতে উঠে আসতে পেরেছে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তথা ইলিশ বিশেষজ্ঞ আনিছুর রহমান বলেন, মা ইলিশের ডিম ছাড়ার হার পর্যবেক্ষণসহ পানির গুণাগুণ ও দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট দল নিয়ে গবেষণা জাহাজসহ চাঁদপুর থেকে যাত্রা শুরু হয়। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, হাতিয়া, মনপুরা, ভোলা, দৌলতখান, ইলিশা, মেহেন্দিগঞ্জ ও শরীয়তপুর এই ৯টি পয়েন্টে গবেষণামূলক জরীপ করে সেখানে পানির গুণাগুণ স্বাভাবিক পাওয়া যায়।
এছাড়া এ প্রজনন মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছিল। যার কারণে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং সফলভাবে ডিম ছাড়তে পেরেছে। এসব ডিম থেকে জাটকা তৈরি হবে যা সংরক্ষণ করতে পারলে বছরে সহনশীল পর্যায়ে ইলিশ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। সরকার আগামী জাটকা মৌসুমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশে ইলিশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও ইলিশ রফতানি করা সম্ভব হবে।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস