 
                                        
                                        
                                       
                                        
                                             
                                                                                    
চাঁদপুর: বিল পরিশোধ করতে না পেরে নবজাতক পুত্র সন্তানকে হাসপাতালে রেখে ব্যর্থতার দায় বুকে চেপে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন শাহ আলম নামে এক হতভাগ্য বাবা। আর মা রোকেয়া বেগম ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছেন।
রোকেয়া আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার দুই মানিক আগে চলি (মারা) গেছে। এই মানিকরে টেয়ার লাই (টাকার জন্য) হাসপাতালে রাখি আইছি। আমার হোলাডারে (ছেলে) সুস্থ কইরা আমার বুকে ফিরাই দেন।’
গত ১৮ আগস্ট জন্ম নেয়া সন্তানকে বুকে ফিরে পেতে আহাজারি যেন থামছেই না চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ফুলছোঁয়া গ্রামের রোকেয়া বেগমের। মঙ্গলবার বিকালে ফুলছোঁয়া গ্রামের খাঁ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশীদের আনাগোনা। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে সামনে এগিয়ে আসেন হাসমতি বেগম, সাফিয়া বেগম ও বিলকিছ বেগমসহ আরও বেশ কয়েকজন নারী।
তারা সবাই বলতে থাকেন, ‘দ্যাননা স্যার, হোলাডারে আনি (ছেলেটাকে এনে দেন)। মা অসুস্থ শরীর লই কানতে কানতে বুক ভাসাই ফেলতেছে। বাপে কই গেছে কেউ জানে না। আন্নেরা একটা বিহিত করেন। আর নইলে সরকারেরে কন (বলেন) যেন একটু দয়া করে।’
পারিবারিকভাবে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট নির্ধারিত সময়ের আগেই হাজীগঞ্জ মধ্য বাজরের শাহ মিরান হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন রোকেয়া। জন্মের পরপর নবজাতকের ওজন হয় মাত্র ৭০০ গ্রাম। যে কারণে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
দ্রুত বাবা-মা নবজাতক সন্তানকে বাঁচাতে কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করান। ডাক্তাররা তাৎক্ষণিক ওই শিশুর জীবন বাঁচাতে তাকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রাখার ব্যবস্থা করেন।
এই দম্পতি ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে গেলে খুব অল্প সময়ে টাকা খরচ হয়ে যায়। ছয় দিনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রায় ২ লাখ টাকার বিল দেখে পালানো ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না অসহায় হতদরিদ্র দম্পতির। বিষয়টি এখন গড়িয়েছে পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন পর্যন্ত।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, মাত্র ৭০০ গ্রাম ওজন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নবজাতকের চিকিৎসায় ইতিবাচকভাবে সবকিছু চলছিল। এ কয়েক দিনে বেশ আরোগ্যও হয় শিশুটির। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় বিল নিয়ে।
ষষ্ঠ দিনে নবজাতকের চিকিৎসার বিলের পরিমাণ ওই দম্পতিকে জানানো হয়। টাকার অংকে ছয় দিনে দুই লাখ টাকা বিল হয়েছে। ওই বিল দেখেই সবার অজান্তে সন্তানকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে গত ২৪ আগস্ট পালিয়ে যান দম্পতি।
দিনভর বাবা-মায়ের সন্ধান না পেয়ে ওই শিশুর বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশুটি।