চাঁদপুর : একবার অর্থের অভাবে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারেনি। মেয়েটির শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা সেই অর্থের যোগান দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে কারণে লজ্জা আর ক্ষোভে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিশোরী জেসমিন আক্তার।
কিন্তু এভাবে মরে গেলে পাপ হবে ভেবে একপর্যায়ে বাড়ি থেকে পালিয়েও যেতে চেয়েছিল সে। তবে তার সামনে দেবদূত হয়ে এলেন একজন নারী। দায়িত্ব নিলেন তিনি। যে করে হোক জেসমিন আক্তারকে এগিয়ে নিতে হবে। যেমন প্রতিশ্রুতি, তেমন কাজ। আজ সেই কিশোরী সবার মুখ উজ্জল করেছে। সকল বাধা ডিঙিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় চাঁদপুরের মতলব উত্তরের জেসমিন আক্তার জিপিএ ৪ দশমিক ২৮ পেয়েছে।
জেলার মতলব উত্তরের ঠাকুরচর গ্রামের রফিক মিজি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় পাঁচ সন্তানকে নিয়ে বড় দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন। তার তৃতীয় সন্তান জেসমিন আক্তার ছেঙ্গারচর মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। গত বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল সে। টেস্ট পরীক্ষায় বেশ ভালো ফলাফলও করেছিল। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য শেষপর্যন্ত ফরম পূরণ করতে পারেনি জেসমিন আক্তার।
লজ্জা আর ক্ষোভে বাড়ি ফিরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এই কিশোরী। কিন্তু তাতেও পাপ, এমন কথা মাথায় এলে অচেনা পথে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই বন্ধুর পথ ব্যর্থ করে দেন একজন নারী। তিনি হচ্ছেন, মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার। পথ আগলে কিশোরী জেসমিন আক্তারকে তার বাসায় নিয়ে যান। ততোক্ষণে পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় ফুরিয়ে যায়।
এক বছর ক্ষতি হলেও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের বিশেষ সহযোগিতায় আবারো দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয় জেসমিন আক্তার। এসময় তার সব দায়িত্ব নেন, শারমিন আক্তার। নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করে আবারো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সবধরনের সহযোগিতা দিতে থাকেন। ফলে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ ৪.২৮ লাভ করে হার না মানা এই কিশোরী।
ফলাফল প্রসঙ্গে জেসমিন আক্তার জানায়, এক বছর ধাক্কা না খেলে অবশ্যই আরো ভালো ফলাফল হতো। তবে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর পরবর্তী পরীক্ষায় চমক দেখাতে চায় অদম্য এই কিশোরী। সন্তানতুল্য এই কিশোরীর এমন ফলাফল নিয়ে বেজায় খুশি মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার। তিনি বলেন, জেসমিনের মেধা আর একাগ্রতা দেখেই নিজের সন্তানের মতো লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়েছি। আমি চাই উচ্চ শিক্ষায় সে ভালো ফলাফল করে বাবা মা এবং দেশের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত হোক।
এদিকে, জেসমিন আক্তারের বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী রফিক মিজিকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মতলব উত্তরের এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। জেসমিনের মা হালিমা খাতুন জানান, তাদের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। তাদের সন্তান এবং অসহায় এমন একটি পরিবারের দিকে তাকানোর জন্য জেসমিনের বাবা মা সরকারি এই কর্মকর্তাকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।