বুধবার, ১০ জুলাই, ২০১৯, ১০:৫৯:৫৯

বিশ্বাসই হয় না এটা বাংলাদেশের স্কুল!

বিশ্বাসই হয় না এটা বাংলাদেশের স্কুল!

নিউজ ডেস্ক : বিশ্বাসই হয় না এটা বাংলাদেশের স্কুল! এটা বিদেশি কোনো পর্যটন এলাকা কিংবা দর্শনীয় কোনো স্থাপনাও ভাবতে পারেন অনেকে। তবে বাস্তব সত্য হলো, এটি একটি স্কুল ক্যাম্পাস। না, দেশের বাইরে কোনো জায়গায় নয়, বাংলাদেশের-ই এক জেলায় অবস্থান এর। দেশের রাজধানী কিংবা কোনো শহরেও নয়। এটি অবস্থিত চাঁদপুর জেলা সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ’। 

এ স্কুলের ভবনটি সত্যিই অসাধারণ। সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একটি স্থাপনা। স্থানীয়দের মতে, এটা ইউরোপিয়ান স্টাইলে তৈরিকৃত একটি ভবন। যার প্রতিটি অংশই দেশের অন্য সব স্কুল ভবনের চেয়ে আলাদা। দ্বিতলা এই ভবনে ছাদের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে কারুকাজে সজ্জিত সিমেন্ট শীটের ছাউনি। ভবনের মাঝখানে এবং একেবারে পূর্বপাশে রয়েছে দুটি প্রশস্ত সিঁড়ি। পূর্বপাশের সিঁড়ির নিচে স্কুলের অফিস কক্ষ। উভয় তলাতেই আছে প্রশস্ত বারান্দা। শ্রেণিকক্ষগুলো দারুণভাবে সাজানো রয়েছে। এখানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। ভবনটির চারপাশ অনেকটা খোলামেলা। শুধু শ্রেণিকক্ষগুলোর অর্ধেক উঁচু পর্যন্ত রঙিন টিনসেডে আবৃত। দিনে সূর্য আর রাতে চাঁদের আলোতে জ্বলজ্বল করে ভবনটি। তবুও বারান্দা ও শ্রেণিকক্ষ গুলোর আশপাশে এনার্জি বাল্ব লাগানো রয়েছে, যা বাঁশের তৈরি থলিতে দারুণভাবে মোড়ানো। নিচতলার পশ্চিম কোণে রয়েছে দুটি আলাদা ওয়াশরুম। রয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য নানা রকমের সরঞ্জাম। ভবনটির সামনেই রয়েছে প্রশস্ত মাঠ।

উত্তর পার্শে গ্রামের রাস্তা। ওদিকেই স্কুল ক্যাম্পাসটির গেইট। গেইট পার হয়ে প্রায় ১০০ মিটারের সোজা রাস্তার মাথায় স্কুল ভবন। এর আগেই সুনিপুণ হাতে নির্মিত একটি মসজিদ। মসজিদটিও দোতলা। চারপাশের প্রাচীরে লম্বা ও ছোট ছোট ফাঁক রাখা হয়েছে, যাতে দিনে সূর্য এবং রাতে চাঁদের আলোয় আলোকিত থাকে মসজিদটি। প্রবেশদ্বারের পাশেই ওযু করার সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। স্কুল মাঠের উত্তর প্রান্তে সীমানা প্রাচীরের সঙ্গে রয়েছে একটি শহীদ মিনার। সব মিলিয়ে অসাধারণ ও ব্যতিক্রমী একটি স্কুল ক্যাম্পাস।

প্রায় প্রতিদিনই চাঁদপুরসহ নিকটবর্তী বিভিন্ন জেলার ভ্রমণ পিপাসু মানুষজন এখানে ঘুরতে আসেন। সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকে এই ক্যাম্পাসটি। তাই খুঁটে খুঁটে সবকিছুই ঘুরে দেখেন ভ্রমণ পিপাসুরা।

লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রিয়াদ হোসেন বলেছেন, ফেসবুকে স্কুলটির ছবি দেখে খুবই ভালো লাগে। তাই বন্ধুদের নিয়ে চলে এলাম। আসলেই এটা অসাধারণ ও মনোমুগ্ধকর একটি ক্যাম্পাস। কোমলমতি শিশুদের জন্য এমনটাই প্রয়োজন। সরকারি স্কুলগুলোতেও এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে শিক্ষার মানোন্নয়ন তরান্বিত হবে বলে মনে করেন তিনি।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান টিটু বলেন, শাহাবুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজটি অত্যাধুনিক নকশায় তৈরি করা হয়েছে। ইউরোপিয়ান স্টাইলেরও বলা যায়। আমি লক্ষ্মীপুর গ্রামেরই ছেলে। প্রত্যন্ত এই গ্রামের হতদরিদ্র ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে এমন একটি স্কুলে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা শাহাবুদ্দিন অনুকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চাঁদপুরের কৃতি সন্তান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন অনু লক্ষ্মীপুর গ্রামের এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন। ওই বছরই ১১৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে নান্দনিক এই স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। শাহাবুদ্দিন ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পায় ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ’। বিগত দু’বছর থেকে স্কুলের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। এখানে প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ১৬৮জন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। আগামীতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কলেজ পর্যায়ে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।-বাংলাদেশ টুডে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে