শনিবার, ০৬ এপ্রিল, ২০২৪, ০৬:৫৭:২৪

এই ঘটনা হার মানায় সিনেমার গল্পকেও!

এই ঘটনা হার মানায় সিনেমার গল্পকেও!

চাঁদপুর : চাঁদপুরের মতলব উত্তরের গজরা বাজারে কৃষি ব্যাংকের নৈশপ্রহরী শাহাদাত হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে এক নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এদের মধ্যে আজ শনিবার (৬ এপ্রিল) ভোরে সজিব হোসেন নামে একজনকে রাজধানী ঢাকা থেকে এবং মিলি আক্তার নামে আরেকজনকে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলের পাশের পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করে পিবিআই। আর এমন দৃশ্য দেখতে ঘটনাস্থলে হাজির হয় এলাকায় হাজারো নারী ও পুরুষ।  গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটে এই হত্যাকাণ্ড।

পিবিআই জানায়, কৃষিব্যাংক গজরাবাজার শাখার সাবেক নৈশপ্রহরী সাকিব হোসেন এই ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের জন্য পরিকল্পনা করে। ঘটনার শিকার শাহাদাত হোসেনকে টার্গেট করে সাকিব। এই জন্য তাঁর প্রেমিকা মিলি আক্তারকে দিয়ে সুকৌশলে শাহাদাতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করায় সাকিব।

আর এই মিলি প্রেমের অভিনয় করেই কাবু করে নৈশপ্রহরী শাহাদাতকে। ঘটনার রাতে সাকিব ও তাঁর সহযোগী সজিব মিলিকে দিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে শাহাদাতকে ডেকে নিয়ে ছাদে তোলে। পরে গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে হত্যা করে। একপর্যায়ে তারা ব্যাংকে ঢুকে গ্যাস কার্টার দিয়ে ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

তার আগে তারা ব্যাংকের সিসি ক্যামেরাসহ প্রযুক্তির অন্যান্য সরঞ্জাম বিচ্ছিন্ন করে এবং অপরাধে ব্যবহৃত সামগ্রী পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। 

এদিকে শনিবার বিকেলে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা চাঁদপুরের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই দুজনের বাড়ি মতলব উত্তরের গজরাবাজার এলাকায়। 

পিবিআই চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল রাশেদ জানান, একসময় সাকিব ওই ব্যাংকের নৈশপ্রহরী ছিল।

পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নাম লেখায় ডাকাতদলে। এর মধ্যে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের বিষয়টি তাঁর মাথায় ঢোকে। যেই ভাবা সেই কাজ। ওই নারীকে দিয়ে শুরু হয় নানা নাটকীয়তা। শুরু হয় মিশন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে শাহাদাত হোসেনকে ব্যাংক থেকে মুঠোফোনে ডেকে আনে বাইরে। তারপর ছাদে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। 

আর এই হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজতে নড়চেড়ে বসে পিবিআই। এই জন্য তদন্ত কর্মকর্তা করা হয় উপপরিদর্শক ইব্রাহিম খলিলকে। একই সঙ্গে তাকে সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকজন চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োজিত করা হয়। 

একপর্যায়ে টানা ৬ সপ্তাহ পরিশ্রম করে তারা এই ঘটনায় জড়িত এক নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে এই ঘটনার মূলহোতা সাকিব হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। 

এদিকে ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন মা শিরিনা বেগম। তিনি জানান, শাহাদাত হোসেন ছিলেন তাঁর একমাত্র ছেলে। তাঁর স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী। তাঁর ননদ রহিমা বেগম ওই ব্যাংকে রান্নাবান্নার কাজ করতেন। 

সেই সুবাদে নৈশপ্রহরীর পদ খালি হওয়ায় সেখানে ভাইয়ের ছেলে শাহাদাতকে চাকরি পাইয়ে দেন তিনি। ভাইয়ের ছেলেকে হত্যায় জড়িতদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান রহিমা বেগমও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনায় জড়িত সবার বাড়ি মতলব উত্তরের গজরা এলাকাতেই।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে