এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ইলিশের পাইকারি বাজার হচ্ছে ‘চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’। দাম ভালো পাওয়ার কারণে সাগর উপকূলীয় এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নৌ এবং সড়ক পথে ইলিশ বিক্রি করতে নিয়ে আসে এখানকার আড়তগুলোতে।
স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় আহরিত ও আমদানিকৃত ইলিশ এসব আড়ত ঘুরে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একই সাথে ইলিশের বিক্রি বেড়েছে অনলাইনে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ইলিশের আমদানি ও স্থানীয় ইলিশের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় দুই বছরের ব্যবধানে ইলিশের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০২৩ সালে এক কেজি ওপরের ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৩০০ টাকা। বর্তমানে একই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এবং মৎস্য বণিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এছাড়াও ইলিশের চলমান বাজার দর জানতে কথা হয়েছে ব্যবসায়ীদের সাথে। ইলিশ কেন কম পাওয়া যাচ্ছে এই বিষয়টি জানালেন মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
চাঁদপুরের আড়তগুলো আকারভেদে ইলিশের দাম
আড়তদার মো. ইউসুফ বন্দুকসী ও মো. আকবর জানান, এক কেজির ওপরে ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ২২০০ টাকা। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতা কামাল উদ্দিন বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের অবস্থা খারাপ। বছরের শুরুতে এককেজি ওপরের সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৮০০ টাকা। এখন সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকা। গত কয়েকদিন আড়তগুলোতে খুচরা ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমেছে। খুচরা বিক্রেতারা এখন বিপদে। কারণ নেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ইলিশের পাইকারি বাজার হচ্ছে ‘চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’। ছবি: ইত্তেফাক
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ইলিশের পাইকারি বাজার হচ্ছে ‘চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’। ছবি: ইত্তেফাক
২০২৩ এবং ২০২৪ সালের ভরা মৌসুমে ইলিশের বাজার দর
গেল বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ভরা মৌসুমে এক কেজির ওপরে সাইজের প্রতিকেজি ইলিশের দাম ছিলো ১ হাজার ৫শ’ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম ছিলো প্রতিকেজি ১হাজার ২শ’ টাকা।
২০২৩ সালের একই সময়ে এক কেজির ওপরের সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ১৩০০ টাকা। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ওজনের ইলিশ প্রতিকেজির দাম ছিলো ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা।
এদিকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আরেক আড়তদার দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী জানান, দুই থেকে তিন বছর আগে সাগর উপকূলীয় এলাকা থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের আমদানি ছিলো। এই সাইজের ইলিশের চাহিদা ছিলো সবচাইতে বেশি। কারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিলো। এই সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬৫০টাকা দরে।
ইলিশের দাম বাড়ার কারণ
ইলিশের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক সবেবরাত সরকার বলেন, আমদানি যখন কম তখন মাছের দাম বাড়ে। আর সারেদেশের লোকজনের চাঁদপুরের ইলিশের প্রতি নজর থাকে। গত দুই বছর ইলিশের ভরা মৌসুমে আমদানি ছিলো ১ থেকে দেড় হাজার মণ। বর্তমানে আমদানি হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ মণ। চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম বেড়ে যায়। অনলাইনেও প্রতিদিন ইলিশ বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০০। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন ভ্রমণ করতে এসে সরাসরি ইলিশ কিনতে আসে। সবমিলিয়ে চাহিদা বেশি এবং আমদানি কম থাকায় ইলিশের দাম প্রতিবছরই বাড়ছে।
ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ
মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কাউছার দিদার বলেন, গত দুই বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ইলিশ আহরণ হচ্ছে কম। সাগর অঞ্চলে দুর্যোগের সময় ইলিশ আহরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। জেলেরা নদীতে নামতে পারে না। এছাড়া সঠিক সময় বৃষ্টি না হওয়া, পদ্মা-মেঘনায় পলি পড়ে কোথাও কোথাও চর জেগে উঠছে। এটিও প্রাকৃতিক কারণ। যার ফলে নদীর গতি প্রকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে। এসব কারণগুলো থেকে বের হয়ে আসার উপায় হিসেবে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত।
চাঁদপুর সদরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, চাঁদপুর নৌ সীমানায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সরকারের মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। বিশেষ করে জাটকা সংরক্ষণ এবং মিঠা পানিতে মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে জেলা টাস্কফোর্স আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে।