চাঁদপুর : আগামীকাল বুধবার চাঁদপুর জেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে ঈদ। সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করবেন তারা। ওইসব গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করবেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামের পীর বাড়ির সাদ্রা সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবু বকর ছিদ্দিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, সৌদিতে চাঁদ দেখা যাওয়ায় বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে। ঈদের নামাজসহ অন্যান্য প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।
সাদ্রা দরবার শরীফের বর্তমান পীর মাওলানা আবু জোফার আব্দুল হাই জানান, সাদ্রা দরবার শরীফের তৎকালীন পীর মাও. ইসহাক আরব দেশসমূহের সাথে মিল রেখে আগাম রোজা রাখাসহ দুই উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালনের নিয়ম চালু করেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামে ১৯২৮ সাল থেকে একদিন আগে এ প্রথা চালু করলেও এখন দেশের লক্ষাধিক মানুষ একদিন আগে রোজা-ঈদ উদযাপন করছেন। দীর্ঘ ৮৮ বছরেও দেশের মানুষের দু’দিন ঈদ উদযাপনের কোনো সমাধান হয়নি।
১৯২৮ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক খান আরব দেশসমূহের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসী অসহযোগিতা করলে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। দেশে সরকারি নিয়মের বাইরে একদিন আগে ঈদ পালনের উদ্যোগ গ্রহণের দায়ে মাওলানা খানকে মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান মাওলানা খান ওই বছরই চলে আসেন নিজ গ্রাম একই উপজেলার সাদ্রায়। পরে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন সাদ্রা মাদরাসা।
আরব দেশসমূহের রীতিনীতি অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য প্রথমে নিজ গ্রামে শুরু করেন ব্যাপক গণসংযোগ। গ্রামের অসহায়, দুস্থ মুসলমানদের প্রচুর আর্থিক সাহায্য দেন তিনি। আরব দেশগুলোর সাথে সংগতি রেখে একদিন আগে ঈদসহ সব ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন প্রথা চালু করেন তিনি।
মাওলানা ইছহাক খান ১৯৮৫ সালে ১৩ নভেম্বর মারা গেলে তার কবরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মাজার। তার ৬ ছেলে ও ১ মেয়ে। তারা হচ্ছেন মাও. আবু জাফর হাই, আলহাজ মাও. আবু বকর, মো. ঈসমাঈল, মাও. আবুল খায়ের, মাও. মো. শেখ ইলিয়াস, আলহাজ মাও. আবু ইয়াহিয়া, মো. জাকারিয়া আলমাদানী, হাফেজ মাও. আহাম্মদ হোসাইন, মাও. শাহ মো. হাসান ও ওয়াহরেহা ফাতেমাতুজ জোহরা।
৬ ছেলেই বাবার মতবাদ প্রচারে সদা নিবেদিত। ওই মতবাদ প্রচারে কাজ করছেন মাও. ইছহাক খানের অসংখ্য মুরীদ। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে ওরস মাহফিলও হয় পৃথক পৃথকভাবে।
সাদ্রা ছাড়াও জেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের একাংশে ওই পীরের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করেন।
গ্রামগুলো হলো হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ ও মেনাপুর। ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মোহনপুর ইউনিয়নের পাঁচানী, বাহেরচর পাঁচানী, আইটাদি পাঁচানী, দেওয়ানকান্দি, লতুর্দী, সাতানী ও দক্ষিণ মাথাভাঙ্গার আংশিক, সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের আমিয়াপুর গ্রামের একাংশ, ইসলামবাদ ইউনিয়নের মধ্য ইসলামবাদ গ্রামের একাংশ, ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের একাংশ, এখলাছপুর ইউনিয়নের মধ্য এখলাছপুর (বড়ইকান্দি) গ্রামের একাংশ এবং ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ফরাজীকান্দি, রামদাসপুর, চরমাছুয়া, হাজিপুর, দক্ষিণ রামপুর, সরকারপাড়া, ঠাকুরপাড়াসহ কচুয়া ও শাহরাস্তির বেশ কয়েকটি গ্রাম।
এছাড়া চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, শরীয়তপুর ও চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি স্থানে মাও. ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।
৫ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম