শফিকুল ইসলাম : বিজয়ের মাসে আশুলিয়ায় গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনাকে ভালোভাবে নেয়নি সরকার। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এই ঘটনায় যাদের ইন্ধন ছিল তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। বিক্ষোভের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সাত শ্রমিক নেতার ওপর এরই মধ্যে নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের কারও কারও সঙ্গে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা কথাবার্তাও বলেছেন। বর্তমানে তারা পুলিশি নজরদারিতে রয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এই সাত শ্রমিক নেতার নাম কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার তৈরি পোশাক কারখানায় সংঘটিত শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় কোনও মহলের ইন্ধন ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কারখানার সাধারণ শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আশপাশের লোকজনসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন তারা। বিক্ষোভে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেতাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডও ‘ফলো’ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্র।
আশুলিয়ার শ্রমিক বিক্ষোভকে ইতোমধ্যেই অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। একই মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। তারা সবাই পৃথক পৃথকভাবে সাংবাদিকদের বলেছেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এর সঙ্গে কারা জড়িত বা কাদের ইন্ধন রয়েছে তাদের সন্ধান করা হচ্ছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর সেগুনবগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের শীর্ষে অবস্থান করছে। আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশ এই তৈরি পোশাক খাত থেকেই ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে। সম্ভাবনাময় এই খাতকে নিয়ে ষড়যন্ত্র থাকতেই পারে। তবে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। যাদের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের রেহাই দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, চলতি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে ২০ ডিসেম্বর আশুলিয়ায় ৫৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কাওরান বাজারে অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধের এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আরও ৪টি কারখানা। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২৬ ডিসেম্বর বন্ধ ঘোষিত সবগুলো কারখানা খুলে দেওয়া হয়। এসব কারখানার সব শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে বলে জানায় বিজিএমইএ নেতারা।
ওই সংবাদ সম্মেলনে সিদ্দিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে বারবার সমঝোতার প্রতিশ্রুতি দিয়েও শ্রমিকরা অযৌক্তিক কারণে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৫৩০টি নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন এবং ৪৩টি নিবন্ধিত ট্রেড ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি তৈরি পোশাক খাতের পরিচিত শ্রমিক নেতারাও জানেন না কিসের দাবিতে আশুলিয়ায় শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। তারা একাধিক গণমাধ্যমেও তাদের এই অভিব্যাক্তির কথা জানিয়েছেন।’
এ পরিস্থিতিতে ১৯ ডিসেম্বর রাতে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বাসায় ৪২টি শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ‘এই মুহূর্তে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর কোনও সুযোগ নাই। ২০১৩ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন ৫ হাজার ৩শ টাকা নির্ধারণ করে বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। এটা শতভাগ কার্যকরও করা হয়েছে। তাই আরও দুই বছর পর অর্থাৎ পাঁচ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি বিবেচনা করা সম্ভব নয়।’
শ্রমিক বিক্ষোভে ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এতে কারও কারও জড়িত থাকার কথা জেনেছি। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হাতে পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ রেহাই পাবে না।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম