মাহাবুর আলম সোহাগ: রাজধানীর সরকারি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে ঠাঁই হলো না ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত নীলফামারী সরকারি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী রুমা আক্তারের।
অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (আরএস) ডা. শফিউল আলম চপল রুমাকে হাসপাতালে ভর্তি তো করেননিই, উল্টো চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বিদায় দিয়েছেন। তিনি চিকিৎসা সংক্রান্ত ফাইল আটকে রেখে রুমা ও তার ভাইকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন। শুধু তাই নয়, ব্রেনে অস্ত্রোপচার করলে মৃত্যু হতে পারে এমন ভীতিও দেখান।
তবে ডা. শফিউল আলম চপল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রুমা ও তার পরিবারের সদস্যরা তার নাম ব্যবহার করে পত্রিকা ও ফেসবুকে আর্থিক সাহায্য চেয়েছে। রুমা যখন প্রথমবার হাসপাতালে এসেছিল তখন তিনি চিকিৎসার জন্য স্বল্প খরচের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারা বাইরে গিয়ে তার বরাত দিয়ে চিকিৎসায় কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ হবে বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছে। এতে তার সম্মানহানি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, রুমা এর আগে আরও একবার এ হাসপাতালে এসে ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যান। জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রুমা, তার ভাই রনি ও মাসহ শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে যান। নিয়মমাফিক ভর্তির প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করে আবাসিক চিকিৎসক ডা. চপলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তার রোষানলে পড়েন। এ সময় ডা. চপলের কক্ষে তারেক নামে আরও একজন চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
কথাবার্তার একপর্যায়ে ডা. শফিউল রুমা ও তার ভাইকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘আমার নাম ব্যবহার করে পত্রিকা ও ফেসবুকে সাহায্য চেয়েছ তোমরা। আমি তো বলিনি এত টাকা লাগবে। তাহলে কি তোমরা ব্যবসা করতে নেমেছো। এতে আমার সম্মানহানি হয়েছে। তোমাদের পুলিশে দেব।’
তিনি আরও বলেন, অপারেশন করলে যদি মারা যায় এর দায়ভার তিনি নেবেন না। একপর্যায়ে বলেন, প্রচলিত নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিতে হবে। অন্যসব রোগীদের মতো ধৈর্য ধরতে হবে। এক মাসের আগে অপারেশনের তারিখ দেয়াও সম্ভব নয় এবং সিট না থাকায় আজ ভর্তি করা যাবে না।
এ সময় ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত রুমা কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেঁদে ফেলেন ভাই রনিও। একপর্যায়ে রোগীর ফাইলটি আটকে রাখেন তিনি। পরে অবশ্য সেটি ফেরত দিয়েছেন। রুমার ভাই রনি বলেন, ইতোমধ্যে রুমার জন্য ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার বাবা পত্রিকার হকার। সে মোটরসাইকেল মেকার। তার পক্ষে চিকিৎসা খরচ বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ায় পত্রিকায় সাহায্যের আবেদন করেছেন।
ইতোমধ্যে নগদ ২৪ হাজার টাকা সাহায্যও পেয়েছেন। আরও অনেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ডাক্তার যে আচরণ আমার বোন ও আমার সঙ্গে করেছে এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। তিনি জানান, সারারাত কষ্ট করে ঢাকায় এসেছেন। সকাল থেকে না খেয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে ডাক্তারের আচরণে কষ্ট পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে বোনকে নিয়ে বাড়ি চলে গেলেন ভাই এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য ফোন কল আসা শুরু করে। অনেকের দেয়া সহযোগিতার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই আবারো বোনকে নিয়ে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে আসেন ভাই রনি।-জাগোনিউজ
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/সবুজ/এসএ